শিক্ষায় অনাগ্রহ
বিশ্বজিৎ রায়ের ‘এই আমরা চাই বুঝি?’ (১২-৪) শীর্ষক প্রবন্ধ পড়ে কয়েকটি কথা বলার প্রয়োজন বোধ করছি। বাংলা মাধ্যম স্কুল থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণি সরে যেতে শুরু করেছে সেই বাম আমলেই, যখন প্রাথমিক থেকে ইংরেজি তুলে দেওয়া হল। একদা বাংলা মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা করে স্নাতক বা স্নাতকোত্তরের পর পিএসসি পরীক্ষা দিয়ে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করত অনেকে। অথবা শিক্ষকতা, ব্যাঙ্কের কেরানি বা রেলের চাকরি বেছে নিত মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারের ছেলেমেয়ে। আজ সে দিন নেই। সরকারি চাকরির পরিসর সঙ্কুচিত। আছে চুক্তিভিত্তিক চাকরি। গ্রামবাংলার মানুষের হাতে কাজ না থাকায়, পড়াশোনা ছেড়ে পশ্চিম কিংবা দক্ষিণ ভারতে পাড়ি জমাচ্ছে হাজার হাজার কিশোর, তরুণ।
অন্য দিকে, বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলির প্রাথমিক থেকে উচ্চ প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বৃহদংশের ভাষা শিক্ষার সঙ্গে গণিত শিক্ষার মান নিম্নগামী। বাড়ি থেকে শিক্ষাঙ্গন— সব ক্ষেত্রে আন্তরিকতার অভাবকেও অনেকে দায়ী বলে মনে করেন। টিউশনি-নির্ভর শিক্ষা প্রান্তিক পড়ুয়ার দিকে নজর দেয় না। পরিণামে স্কুলছুট। এটাও সত্যি যে, বাংলা মাধ্যম স্কুলে যে সিলেবাস, এখনও তার সঙ্গে কাজের জগতের যোগ নেই। মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে কাজ জোটে না। স্বভাবতই নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা স্কুলে আসার আগ্রহ হারাচ্ছে। বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা যেমন প্রয়োজন, তেমনই প্রয়োজন কর্মোপযোগী সিলেবাস তৈরিতে সরকারের মনোযোগী হওয়া। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর ন্যূনতম কাজ জোটাতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে যে প্রশিক্ষণ নিতে হয়, তার পরিসর নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পঠনপাঠনের মধ্যেই করে দিতে হবে। ভাষা ও গণিতের সঙ্গে ব্যবহারিক শিক্ষার মেলবন্ধনের মাধ্যমে সিলেবাস তৈরি হলে এই বিপর্যয় ঠেকানো যেতে পারে।
প্রবাল বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা-৮৪