বছর আগে জঙ্গি দলে নাম লেখাতে গিয়ে নিখোঁজ হয় আসিফ। তিন বোনের এক জন বিবাহিত। তল্লাশিতে এসে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাবা-মা ওই দুই বোনকে থানায়
নিয়ে যায়। তাই ধ্বংসস্তূপ আগলে রয়েছেন অন্য বোন। তাঁর কথায়, ‘‘আমার এক দাদা জেলে। আর আসিফ হল মুজাহিদিন। কাল বাড়ি এসে দেখি, কেউ নেই। সবাইকে পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়েছে। আমাকেও পুলিশ প্রতিবেশীর বাড়ি চলে যেতে বলে। বাড়ি খালি করে ছাদে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। যার ফলে সব কিছু
ভেঙে পড়ে।’’
তদন্তকারীদের মতে, পহেলগাম কাণ্ডের অন্যতম স্থানীয় সাহায্যকারী ওই জঙ্গি। হামলার অন্যতম চক্রী আসিফ পাকিস্তানিদের এ দেশে অনুপ্রবেশে সাহায্য করত। পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘অভিযানে জঙ্গিদের ঘর-বাড়ি সরাসরি নিশানা করার রণকৌশলটি নতুন। আগে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করে জঙ্গিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হত। তাতে সময় লাগত। এখন সরাসরি জঙ্গিযোগ মিললে, সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘরকে তখনই ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে।’’
গত কালই ভোটমুখী বিহারের মাটি থেকে পহেলগামে হামলাকারীদের অকল্পনীয় শাস্তির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই
হুমকির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গোটা কাশ্মীর জুড়ে ব্যাপক তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে সেনা-আধাসেনা এবং জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের এক বিশাল বাহিনী। সেই অভিযানেই ধ্বংস করা হয় আসিফ এবং অন্য আর এক জঙ্গি আদিল হুসেন ঠোকরের বাড়ি। কাশ্মীরের আইজিপি ভি কে বিরদি জানিয়েছেন, কাশ্মীরের দশটি জেলা জুড়ে ব্যাপক অভিযান শুরু হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে গত রাতে এলাকা ঘিরে ফেলে জঙ্গিদের বাড়িতে অভিযান চালায় ৪২ রাষ্ট্রীয় রাইফেলস এবং রাজ্য পুলিশের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপের (এসওজি) একটি বিশেষ দল। বিরদি বলেন, ‘‘এ তো সবে শুরু। কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা হচ্ছে। সমস্ত জঙ্গির আস্তানা এ ভাবেই
ধ্বংস হবে।’’
পহেলগামে যে জঙ্গি দলটি ২৬ জনকে হত্যা করেছে, তাদের মধ্যে আদিল হুসেন ঠোকর আর আসিফ শেখ-ই কাশ্মীরি। বাকিরা পাকিস্তানি বলে জানিয়েছে সেনা। সেনা সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাত দু’টো নাগাদ দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার বিজবেহারায় আদিলের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়। আদিলের পরিবারের একটি সূত্র দাবি করেছে, রাতের বেলায় তাঁদের বাইরে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার পরেই বিস্ফোরণে বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। সেনা সূত্রের খবর, মঙ্গলবারের হামলায় আদিলই পাকিস্তানি জঙ্গিদের পথপ্রদর্শক হয়েছিল। ২০১৮ সালে আট্টারি-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে বৈধ পাসপোর্ট নিয়ে পাকিস্তানে গিয়েছিল আদিল। সেখানে লস্কর-ই-তইবার কাছে তার অস্ত্র প্রশিক্ষণ হয়। গত বছর দেশে ফেরে। পহেলগামে হামলার আগে নানা জায়গা ঘুরে রেকি করে স্থান নির্বাচনে বড় ভূমিকা ছিল তার। আদিল সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানালে ২০ লক্ষ টাকা পুরস্কারের কথা ঘোষণা করেছে পুলিশ।
পহেলগামে হামলায় স্থানীয় যোগ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে অন্তত ২০০ জনকে প্রশ্ন করেছে এনআইএ ও রাজ্য পুলিশ। গত কাল অবন্তীপোরা, শোপিয়ান, কুলগামের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চলেছে। এর মধ্যে কাঠুয়ার এক মহিলা চার সন্দেভাজনকে দেখেছেন বলে পুলিশকে জানিয়েছিলেন। সেই সূত্রে আজ সকালে কাঠুয়ার বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক তল্লাশি চলে।
অন্য দিকে, আজ ভোরে বান্দিপোরায় সেনা-পুলিশের যৌথ অভিযানের সময়ে গুলির লড়াইয়ে লস্করের এক শীর্ষ নেতা আলতাফ লাল্লি নিহত হয়। ওই ঘটনায় জখম হন দুই পুলিশকর্মীও। তবে তাঁদের আঘাত গুরুতর নয়। আলতাফের দাদা, আর এক লস্কর নেতা দিল্লির তিহাড় জেলে বন্দি। বান্দিপোরায় বাসিন্দাদের একাংশ বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের দাবি, লাল্লি বহু দিন আগেই জঙ্গি সংসর্গ ছেড়ে মূল স্রোতে ফিরে এসেছিল। পুলিশ তা জানত। তবু
ভোর রাতের অন্ধকারে তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আজ শ্রীনগরে পৌঁছন সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী। সামগ্রিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা লেফটেন্যান্ট জেনারেল প্রশান্ত শ্রীবাস্তবের থেকে পরিস্থিতির
খুঁটিনাটি জেনে নেন তিনি। দক্ষিণ কাশ্মীরে সেনা অভিযানের দায়িত্বে থাকা ভিক্টর বাহিনীর অবন্তীপোরার সদর দফতর ঘুরে দেখেন। কথা বলেন সেনা-আধিকারিকদের সঙ্গে। পরে জম্মু-কাশ্মীরের উপরাজ্যপাল
মনোজ সিনহার সঙ্গে সন্ত্রাসদমন নিয়ে প্রায় ১ ঘণ্টা বৈঠক করেন দ্বিবেদী। বৈঠকের পরে সিনহা বলেন, ‘‘পহেলগামে যারা হামলা চালিয়েছে এবং সেই হামলায় যারা সাহায্য করেছে, তাদের প্রত্যেককে খুঁজে বার করা হবে। এর জন্য কড়া মূল্য চোকাতে হবে তাদের।’’