কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় পানীয় জলের মতো জরুরি পরিষেবা আরও দ্রুত ও সুসংবদ্ধ উপায়ে পৌঁছে দিতে বড় পদক্ষেপ করছে পুরসভা। শহরের জল সরবরাহ ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে লরিবাহিত ১৩০টি পানীয় জলের ট্যাঙ্কার ১২টি জ়োনে ভাগ করে চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর জন্য পুরসভার বছরে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা। যা আগের চেয়ে প্রায় ৬৮ শতাংশ বেশি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, খরচ না হয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু এর বিপরীতে জল অপচয়ের প্রবণতায় কি পরিবর্তন আসবে? এখনও পর্যন্ত জল-খরচের যা প্রবণতা, তাতে কেউই তেমন আশা করছেন না।
এ ক্ষেত্রে জনসাধারণের ‘সচেতনতা’র উপরেই ভরসা রাখতে চাইছে পুর প্রশাসন। কিন্তু অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে, জলের অপচয় রোধের ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র সচেতন নয় শহর। তীব্র দহনে শহরের একাংশ জলকষ্টে ভুগলেও অপর অংশ, যেখানে জলের জোগান পর্যাপ্ত, সেখানে জল অপচয়ের পরিমাণও বেশি।
পুরসভা সূত্রের খবর, বর্তমানে ১৩০টি ট্যাঙ্কার শহরের উত্তর, দক্ষিণ, মধ্য, পশ্চিম, যাদবপুর, বেহালা, গার্ডেনরিচ, টালিগঞ্জ, জোকা-সহ বিভিন্ন অঞ্চলে পানীয় জল পৌঁছে দেয়। জলকষ্টে ভোগা এলাকায়, কোনও উৎসব বা সামাজিক অনুষ্ঠানে, আচমকা পাইপলাইনে বিপর্যয় দেখা দিলে, কিংবা নাগরিক চাহিদা মেনে জল সরবরাহ অক্ষুণ্ণ রাখার সব রকম চেষ্টা করে পুরসভা।
প্রশাসনিক সূত্র বলছে, বর্তমানে পুরসভা নথিভুক্ত ১১টি ঠিকাদার সংস্থার মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহ করা হয়। নির্দিষ্ট সময় অন্তর সেই চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছিল। দীর্ঘকাল এই নিয়মই চলে এসেছে। পুরসভার হিসাব অনুযায়ী, প্রতি ট্রিপে নির্বাচিত সংস্থা পায় ৩৯৫ টাকা। কিন্তু যে ভাবে জ়োনভিত্তিক জল সরবরাহের পরিকল্পনা করেছে পুরসভা, তাতে ট্রিপ প্রতি খরচ হতে চলেছে ৬৬৫ টাকা। অর্থাৎ, আগের চেয়ে ২৭০ টাকা বা ৬৮ শতাংশ বেশি খরচ হবে।
পুরসভা সূত্রের খবর, জল সরবরাহের নিরিখে শহরকে ১২টি জ়োনে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি জ়োনে আলাদা সংস্থার সঙ্গে চুক্তি হবে। তাদের দায়িত্ব হবে, নির্দিষ্ট সংখ্যক গাড়ি দিয়ে সেই জ়োনে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে জল সরবরাহ করা। প্রশাসনিক নথিতে স্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে—‘বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায়, নাগরিকদের নিরবচ্ছিন্ন এবং কার্যকর পরিষেবা নিশ্চিত করতে নথিভুক্ত ঠিকাদার সংস্থার পরিবর্তে ‘অপারেশন কনট্রাক্ট’-এর মাধ্যমে পরিষেবা দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’
নতুন এই চুক্তির ক্ষেত্রে পানীয় জলের গাড়িগুলির মেয়াদও বিবেচনায় রাখা হয়েছে। রাজ্য পরিবহণ দফতরের নির্দেশিকা অনুযায়ী, এত দিন যে সব গাড়ি জল সরবরাহের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছিল, সেগুলির মেয়াদ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ফুরোতে শুরু করেছে। ফলে, মেয়াদ রয়েছে, এমন গাড়িই ব্যবহার করতে হবে। তা ছাড়া, আগে জল ভরার কেন্দ্রের সংখ্যা (ওয়াটার ফিলিং পয়েন্টস) অল্প ছিল বলে অনেক সময়ে গন্তব্যে ট্যাঙ্কার পৌঁছতে দেরি হত। পুরসভা সূত্রের খবর, গত কয়েক বছরে শহরে জল ভরার নতুন কিছু কেন্দ্র তৈরি হয়েছে। ফলে, ট্যাঙ্কারগুলি কম সময়ে ‘রিফিল’ করে জল পৌঁছে দিতে পারবে। এই কারণে শহরের প্রান্তিক অঞ্চল, যেমন বেহালা, যাদবপুর, গার্ডেনরিচ, জোকা ও টালিগঞ্জে পরিষেবা আরও দ্রুত পৌঁছনো সম্ভব হবে। তাই নতুন দরপত্র ডাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই প্রস্তাব পুর কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেয়েছে।
কিন্তু যেখানে কল খোলা রেখে বা পানীয় জলের অপব্যবহার করা হয় ক্রমাগত, সেখানে জলকর না বসিয়ে শুধুই পরিকাঠামোয় জোর দিলে কি সঙ্কট মিটবে? প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে।