আগের রাতে বচসা, পরদিন সকালে দেহ মিলল বাবা-ছেলের
নিজস্ব সংবাদদাতা
এলাকার বড় পুকুরের ধারে একটি গাছে এক বৃদ্ধের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পেয়ে তাঁর ছেলেকে ডাকতে গিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু ঘরের ভেজানো দরজা খুলতেই দেখা গেল, মেঝেতে পড়ে রয়েছে সেই যুবকের দেহ। আর, সিলিং পাখা থেকে ঝুলছে গামছা। শনিবার সকালে এ ভাবেই বাবা ও ছেলের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বেলুড়ে।
পুলিশ সূত্রের খবর, মৃত বৃদ্ধের নাম সুভাষ পাল (৭৫)। ছেলের নাম অজিত পাল (৩৮)। এক বছর আগে সুভাষের স্ত্রীর মৃত্যু হয়। বেলুড়ের গিরিশ ঘোষ রোডের ঠাকুরন পুকুর এলাকার একটি ছোট ফ্ল্যাটে থাকতেন বাবা ও ছেলে। একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী ছিলেন অজিত। এ দিন ভোরে প্রাতর্ভ্রমণকারীরা ওই পুকুর সংলগ্ন জায়গায় হাঁটতে গিয়ে দেখেন, একটি গাছের ডাল থেকে ঝুলছেন সুভাষ। গলায় কাপড়ের ফাঁস। স্থানীয়েরা জানান, ওই দৃশ্য দেখার পরেই কয়েক জন পরিচিত বৃদ্ধের ফ্ল্যাটে গিয়ে তাঁর ছেলের নাম ধরে ডাকাডাকি করেন। কিন্তু ছেলের সাড়া মেলেনি। এর পরে তাঁরা দেখেন, ঘরের দরজা ভেজানো রয়েছে। ফ্ল্যাটের ভিতরে ঢুকে শোয়ার ঘরে গিয়ে ওই প্রতিবেশীরা দেখেন, মেঝেতে খালি গায়ে পড়ে রয়েছেন অজিত। সিলিং পাখায় বাঁধা রয়েছে গামছা।
স্থানীয়দের থেকে খবর পেয়ে বেলুড় থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, সিলিং পাখায় গামছা বেঁধে গলায় ফাঁস দিয়েছিলেন অজিত। পরে কোনও ভাবে ফাঁস খুলে দেহটি মেঝেতে পড়ে যায়। বাবা ও ছেলের দেহ উদ্ধার করে লিলুয়ার টি এল জয়সওয়াল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা দু’জনকেই মৃত ঘোষণা করেন।
সূত্রের খবর, মা মারা যাওয়ার পর থেকে বাবার সঙ্গেই থাকতেন অজিত। প্রতিদিন সকালে অফিসে গিয়ে রাতে বাড়িতেই ফিরতেন। পাড়ায় খুব বেশি বেরোতেন না। সুভাষও বাড়িতেই থাকতেন। ঘরের কাজকর্ম করতেন। তবে, মাঝেমধ্যে ছোটখাটো বিষয়ে বাবা ও ছেলের অশান্তি হত। যার জেরে রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়েও যেতেন বৃদ্ধ। শুক্রবার রাতে রান্না করা নিয়ে দু’জনের মধ্যে বচসার আওয়াজ পেয়েছিলেন অনেকেই।
প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীরা জেনেছেন, শনিবার ভোরের দিকে হন্তদন্ত হয়ে ফ্ল্যাটে ঢুকতে দেখা গিয়েছিল অজিতকে। তদন্তকারীদের অনুমান, বচসার পরে ওই রাতেও হয়তো বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন সুভাষ। এর পরে তাঁকে খুঁজতে বেরিয়ে বাড়ির অদূরেই পুকুরের পাশে গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখে বাড়ি ফিরে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন ছেলে। হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘কোনও সুইসাইড নোট যেমন মেলেনি, সন্দেহজনকও কিছু আপাতত মেলেনি। তবে, সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’