ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে টানা বৃষ্টিতে ভেস্তে গেল কলকাতা নাইট রাইডার্স-পঞ্জাব কিংস ম্যাচ। ৯ ম্যাচে মাত্র ৭ পয়েন্ট পেয়ে কেকেআর ঘোর সঙ্কটে। তাঁদের সামনে অঙ্ক বড়ই কঠিন। প্লে-অফের দৌড়ে টিকে থাকতে গেলে শেষ পাঁচটি ম্যাচই মরণ-বাঁচন লড়াই অজিঙ্ক রাহানেদের সামনে।
পঞ্জাব কিংসের পরিস্থিতি তুলনামূলক ভাল। ৯ ম্যাচে শ্রেয়স আয়ারদের পয়েন্ট ১১। ১৬ পয়েন্টে পৌঁছতে গেলে পাঁচটির মধ্যে অন্তত ৩টি জিততে হবে।
আইপিএলের প্লে-অফে পৌঁছতে গেলে অন্তত ১৬ পয়েন্ট পেতে হয় যে কোনও দলকে। এ দিন এক পয়েন্ট নষ্ট হওয়ায় নাইটদের সামনে পরের ম্যাচগুলোয় জেতা ছাড়া আর কোনও বিকল্পই রইল না।
শনিবারের ঝড়-বৃষ্টির আবহাওয়া কাঁটা হয়ে দাঁড়াল নাইট শিবিরের। পরের পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে দু’টি ঘরের মাঠে খেলবে তারা। প্রতিপক্ষ রাজস্থান রয়্যালস ও চেন্নাই সুপার কিংস। অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে হবে দিল্লি ক্যাপিটালস, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ও সানরাইজ়ার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে। তাঁদের ঘরের মাঠে ঢুকে জেতা যে সহজ নয়, তা রাহানেও মানতে বাধ্য। তবুও কেকেআরের মিডিয়াম পেসার বৈভব অরোরা মনে করেন, শূন্য পাওয়ার চেয়ে এক পয়েন্ট ভাল। আইপিএল বড় প্রতিযোগিতা। লিগ পর্ব শেষে দু’টি দল যদি সমান জয় পায়, তখন এই এক পয়েন্টের জন্যই এগিয়ে যেতে
পারেন তারা।
বৈভব কি তবে রান তাড়া করার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন না? সাংবাদিক বৈঠকে এসে নাইট পেসার বলছিলেন, ‘‘ম্যাচটি হলে নিশ্চয়ই আমরা দু’পয়েন্ট পাওয়ার জন্য ঝাঁপাতাম। সকলেই রান তাড়া করার জন্য সেরাটা দিত।’’ যোগ করেন, ‘‘কিন্তু কোনও পয়েন্ট না পাওয়ার চেয়ে এক পয়েন্ট পাওয়া ভাল। অনেক বড় প্রতিযোগিতা। হতেও পারে পরের দিকে আমরা এই এক পয়েন্টের জন্যই যোগ্যতা অর্জন করলাম।’’
শনিবার যদিও নাইট বোলাররা সেরা ছন্দে ছিলেন না। প্রথম ইনিংসে ব্যাট করে চার উইকেটে ২০১ রান তোলে পঞ্জাব কিংস। দুই ওপেনারের তাণ্ডবে মুখ লুকোনোর জায়গা পাচ্ছিলেন না কেকেআর বোলাররা। ১২০ রানের ওপেনিং জুটি গড়েন প্রিয়াংশ আর্য ও প্রভসিমরন সিংহ। সুইপ ও সুইচ হিটের সাহায্যে সুনীল নারাইন ও সি ভি বরুণের ঘূর্ণিকে ভোঁতা করে দেন তাঁরা। নাইটদের দুই স্পিনার মিলে দেন ৭৪ রান। মাত্র এক উইকেট নেন বরুণ। নারাইন কোনও উইকেটই পাননি।
৩৫ বলে ৬৯ রান করে যান প্রিয়াংশ। ৪৩ বলে ৮৩ রান প্রভসিমরন সিংহের। ছ’টি চার ও ছ’টি ছক্কার সাহায্যে এই ইনিংস গড়েন তরুণ ওপেনার। ১৬ বলে ২৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে পঞ্জাবকে সম্মানজনক জায়গায় পৌঁছে দেন শ্রেয়স। নাইটদের নির্ভরযোগ্য পেসার হর্ষিত রানাকে এ দিন দু’ওভারের বেশি বলই করানো গেল না। অতিরিক্ত রান দেওয়ার কারণেই কি এই সিদ্ধান্ত? তা যদিও পরিষ্কার নয়। কারণ, প্রভসিমরনের ক্যাচ নিতে গিয়ে কাঁধে চোট পেয়েছিলেন হর্ষিত। কেকেআর রান তাড়া করতে নেমে এক ওভার শেষ হতেই শুরু হয়ে যায় প্রচণ্ড ঝড় ও বৃষ্টি। রাত ১১.৪৪-এর মধ্যে ম্যাচ শুরু করতে হত। কিন্তু বৃষ্টি থামার কোনও সম্ভাবনাই দেখা যায়নি।
পঞ্জাব কিংস মনে করছে, ম্যাচ ভেস্তে যাওয়ায় তাদের ক্ষতিই হল। পঞ্জাব কিংসের স্পিন বোলিং কোচ সুনীল জোশী বলছিলেন, ‘‘এই ম্যাচ থেকে আমরা দু’পয়েন্ট পেতেই পারতাম। বৃষ্টিতে ভেস্তে যাওয়ায় এক পয়েন্ট নষ্ট হল। তবে ম্যাচ হলে ওরাও শেষ পর্যন্ত জয়ের চেষ্টা করত। জমজমাট একটি ম্যাচ হতে পারত।’’
কেকেআর শিবির যেখানে এক পয়েন্টে সন্তুষ্ট। পঞ্জাব শিবিরে পয়েন্ট খোয়ানোর আক্ষেপ। বৃষ্টির পাশাপাশি যদিও এ দিন নজর কাড়ে দুই নাইট স্পিনারের বিরুদ্ধে পঞ্জাবের দুরন্ত ব্যাটিং। সুনীল জোশী জানিয়েছেন, শেষ সাক্ষাতে নারাইন ও বরুণের বিরুদ্ধে ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়েছেন পঞ্জাব ব্যাটসম্যানেরা। জোশীর কথায়, ‘‘নিঃসন্দেহে নারাইন ও বরুণ দারুণ স্পিনার। কিন্তু আমাদের ব্যাটসম্যানেরা সহজেই মানিয়ে নিয়েছে। আসলে মরসুম শুরু হওয়ার পরেই দুই ওপেনারকে বলে দেওয়া হয়েছিল, তোমরা ১৪টি ম্যাচই খেলছ। দল থেকে জায়গা হারানোর ভয় নেই ওদের মধ্যে। চাপমুক্ত ভাবে শট খেলতে পারে।’’ যোগ করেন, ‘‘প্রভসিমরন ও প্রিয়াংশ দু’জনেই ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত রান করেছে। সেই আত্মবিশ্বাসই কাজে লাগছে।’’
কেকেআরের পরবর্তী ম্যাচে প্রতিপক্ষ দিল্লি ক্যাপিটালস। প্রাক্তন নাইট নেতা শ্রেয়স আয়ারের বিরুদ্ধে বদলা নেওয়া হল না। এ বার মিচেল স্টার্কও যদি শেষ হাসি হাসেন, নাইট ক্রিকেটারেরা কোথায় মুখ লুকোবেন?