মেছুয়ার হোটেলে অগ্নিকাণ্ডে ১৪ জনের মৃত্যুর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দেওয়ার পরেই পার্ক স্ট্রিট এলাকার একটি বহুতলের ছাদে থাকা
ক্যাফের বেআইনি অংশ ভাঙার কাজ শুরু করল কলকাতা পুরসভা।
শনিবার শেক্সপিয়র সরণি থানার পুলিশ ও পুরসভার কর্তারা জায়গাটি পরিদর্শন করেন। তার পরে বারোতলার ছাদে ওই ক্যাফের বেআইনি অংশ ভাঙার কাজ শুরু হয়। অন্য দিকে, কলকাতার মতো বিধাননগর পুর এলাকাতেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে ছাদে রেস্তরাঁ চালানোর ক্ষেত্রে। সেই সঙ্গে শনিবার থেকে নিউ টাউনের বিভিন্ন আবাসিক বাড়িতে বাণিজ্যিক কাজকর্ম অগ্নিবিধি মেনে চলছে কিনা, তা খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়েছে।
কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, ওই ক্যাফেতে বেআইনি ভাবে লোহার কাঠামো তৈরি করা হয়েছিল। সেগুলি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। মেছুয়ার ঘটনার পরেই শহরের হোটেলগুলির উপরে নজরদারি চালানোর নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। শুক্রবার নিজে পার্ক স্ট্রিট পরিদর্শনেও যান। সে দিনই ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানের শেষে মেয়র ফিরহাদ হাকিম ঘোষণা করেন, বাড়ির ছাদে রেস্তরাঁ-পানশালা খোলা যাবে না। যেগুলি আছে, সেগুলি ভেঙে ফেলতে হবে। কলকাতা পুলিশ পুরসভাকে শহরের পানশালা ও রেস্তরাঁর একটি তালিকা দিয়েছে। যুগ্ম
নগরপালের (সদর) তরফে পুর কমিশনারকে লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, এ শহরে বাড়ির ছাদে মোট ৮৩টি পানশালা ও রেস্তরাঁ রয়েছে। মেয়র শনিবার বলেন, ‘‘কলকাতা পুলিশের তালিকা পেয়ে আমরা সমস্ত ঠিকানা ধরে ধরে নোটিস দিয়ে এসেছি। বাড়ির ছাদে পানশালা, রেস্তরাঁ অবৈধ। সেগুলি ভেঙে ফেলতে অনুরোধ করা হবে। তাতে কাজ না হলে আমরা আইনি পথে হাঁটব।’’
ওই সমস্ত রেস্তরাঁ ও পানশালার মালিকেরাও পুরসভার বিরুদ্ধে পাল্টা আইনি পথে যাওয়ার কথা ভাবছেন। তাঁদের একটি সংগঠনের সভাপতি সুদেশ পোদ্দার এ দিন বলেন, ‘‘পুরসভার নোটিস এখনও পাইনি। সোমবার এ নিয়ে হোটেল ও রেস্তরাঁর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক হবে।’’
অন্য দিকে, নিউ টাউনের আবাসিক বাড়িগুলিতে বিধি ভেঙে বাণিজ্যিক কাজকর্ম চালানোর অভিযোগ উঠেছিল আগেই। মেছুয়ার ঘটনার পরে ‘নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ (এনকেডিএ)-র তরফে শনিবার থেকে সেখানকার ২২৭টি আবাসিক বাড়িতে পরিদর্শনের কাজ শুরু হয়েছে। শনি ও রবিবার এই পরিদর্শন হবে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবে এনকেডিএ।
আবাসিক বাড়ির ৪০ শতাংশ পর্যন্ত অংশে বাণিজ্যিক কাজকর্ম চলতে পারে। কিন্তু অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রেই সেই নিয়ম উপেক্ষা করা হয়, বিশেষত, অতিথিশালা ও অনুষ্ঠান বাড়িতে। ওই সব বাড়িতে কতটা অগ্নিবিধি মেনে চলা হচ্ছে, ফায়ার লাইসেন্স ও ট্রেড
লাইসেন্স রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এনকেডিএ সূত্রের খবর, সারা বছর নিউ টাউনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে অগ্নিবিধি নিয়ে নজরদারি চালাতে কোনও ফায়ার অডিট সংস্থাকে নিয়োগ করা নিয়েও চিন্তাভাবনা চলছে। কয়েক মাস আগেই এমন একটি
বেসরকারি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজের সন্ধান পেয়েছিল এনকেডিএ, যারা ফায়ার লাইসেন্স ছাড়াই কাজকর্ম শুরু করে দিয়েছিল। এমনকি, ট্রেড লাইসেন্সও নবীকরণ করেনি তারা।
এ দিকে, সল্টলেক-সহ গোটা বিধাননগরেও বাড়ির ছাদে রেস্তরাঁ-পানশালা তৈরির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি হচ্ছে। বিধাননগর পুরসভা সূত্রের খবর, শুক্রবার বোর্ডের
বৈঠক চলাকালীনই পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ওই নির্দেশ পাঠান পুর কর্তৃপক্ষকে। পুর চেয়ারম্যান
সব্যসাচী দত্ত জানান, পুরপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, নিজেদের এলাকার হোটেল, রেস্তরাঁর তালিকা জমা দিতে। সেই তালিকা পুলিশকে দেওয়া হবে। পুলিশ সেই মতো ব্যবস্থা নেবে।
পাঁচ নম্বর সেক্টরেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, হোটেল ও রেস্তরাঁয় অগ্নিবিধি কতটা মানা হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়েছে।