পাঞ্জিম, ৩ মে: শিরগাঁও মন্দিরে বার্ষিক শোভাযাত্রা চলাকালীন পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হল অন্তত ছ’জনের। আহত অন্তত ৮০ জন। আজ ভোর সাড়ে ৩টে নাগাদ উত্তর গোয়ার শিরগাঁও-এর ঘটনা। আহতেরা গোয়া জেলা হাসপাতাল এবং উত্তর গোয়া জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, কোনও গুজবের জেরেই এ দিন বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। ইতিমধ্যে এই ঘটনা নিয়ে এক্স মাধ্যমের একটি বার্তায় শোকজ্ঞাপন করেছেন গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাবন্ত। তদন্তের আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি। যদিও এই বিশৃঙ্খলার জন্য গোয়ার ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকারকে দায়ী করে এক্স মাধ্যমে পোস্ট করেছেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজধানী পাঞ্জিম থেকে ৪০ কিলোমিটার ভিতরে অবস্থিত লাইরাই দেবী মন্দিরে এ দিনের বিশৃঙ্খলার সময়ের বহু ছবি-ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে সমাজমাধ্যমে। সেগুলিতে দেখা গিয়েছে, শোভাযাত্রা মোটের উপর শান্তিপূর্ণ ভাবে শুরু হলেও আচমকাই ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে যায়। চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে চেঁচামেচি করতে থাকেন পুণ্যার্থীরা। এক দিকে যখন সরু, ঢালু রাস্তায় অনেকে পড়ে যান, তখন তাঁদের উপর দিয়েই দৌড়োদৌড়ি করতে থাকেন বাকিরা।
গোয়ার ডিজিপি অলোক কুমার এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, লাইরাই দেবীর শোভাযাত্রার সময়ে অন্তত ৪০ হাজার পুণ্যার্থী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হাজারেরও বেশি পুলিশকর্মী মোতায়েন ছিলেন। ভোর সাড়ে ৩টের দিকে বিশৃঙ্খলার পরিস্থিতি নজরে আসা মাত্র তা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা শুরু করেন পুলিশকর্মীরা। দ্রুত ঘটনাস্থলে কাজ শুরু করে উদ্ধারকারী দলগুলিও। পুলিশের দাবি, বিশৃঙ্খলার সময়ে দেড়শোরও বেশি মানুষ মাটিতে পড়ে গিয়েছিলেন। তাঁদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালগুলিতে ভর্তি করা হয়। বেশ কয়েক জন স্থানীয়ের অবশ্য দাবি, রাস্তায় ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষজন জমায়েত করেছিলেন। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, কোনও গুজবের কারণেই পুণ্যার্থীরা হুড়োহুড়ি করতে থাকেন। শোভাযাত্রার পথটি ঢালু হওয়ায় অনেকেই সামলাতে না পেরে পড়ে যান। তার ফলেই পদপিষ্ট হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়। তবে এখনও নিশ্চিত ভাবে কিছুই জানা যায়নি। মন্দির কমিটির সভাপতি দীননাথ গাঁওকার অবশ্য জানিয়েছেন, খোলা জায়গায় আগুন জ্বালিয়ে প্রার্থনা করছিলেন পুণ্যার্থীরা। সেই সময়ে এক পুণ্যার্থী ভুলবশত পাটকাঠি দিয়ে একটি বৈদ্যুতিন বাল্ব স্পর্শ করেন এবং তড়িদাহত হয়ে ভিড়ের মধ্যে অন্যদের উপর পড়ে যান। এর পরেই কয়েক জনের তরিদাহত হওয়ার মতো অনুভূতি হয় এবং হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। গাঁওকার আরও উল্লেখ করেছেন, অন্তত ৫০,০০০ থেকে ৭০,০০০ মানুষ জড়ো হয়েছিলেন সেখানে।
এ দিকে, ঘটনার জেরে আগামী কয়েক দিনের সকল অনুষ্ঠান ও কর্মসূচি বাতিল করে দিয়েছে গোয়া সরকার। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে তোলার আশ্বাসও দিয়েছে তারা। পদপিষ্টের ঘটনার জেরে এখনও পর্যন্ত উত্তর গোয়ার কালেক্টর, পুলিশ সুপার-সহ পাঁচ আধিকারিককে বদলিও করেছে গোয়া সরকার।
এ দিনের ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এক্স মাধ্যমে করা একটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, স্থানীয় প্রশাসন সব রকমের সহায়তা করার চেষ্টা করছে। এক্স মাধ্যমে পোস্ট করে শোকজ্ঞাপন করেছেন লোকসভায় বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীও।
মৃতদের পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে অবশ্য গোয়ার ডাবল ইঞ্জিন বিজেপি সরকারকে খোঁচা দিয়েছে গোয়া তৃণমূল এবং তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এক্স মাধ্যমে করা তাঁর পোস্টে অভিষেক লিখেছেন, ‘শ্রী দেবী লাইরাই মন্দিরের এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আমি শোকাহত। মৃতদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা জানাই। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।’ ওই পোস্টে বিজেপি সরকারকে কটাক্ষ করে তিনি লেখেন, ‘হাথরস থেকে গোয়া, ডাবল ইঞ্জিন সরকারের রাজ্যগুলিতে যে ভাবে প্রশাসন উদাসীন, তা বেশ উদ্বেগের। জনসাধারণের নিরাপত্তার সঙ্গে কোনও ভাবেই আপস করা উচিত নয়। গোয়া সরকারের কাছে আমার আবেদন, দ্রুত এবং নিরপেক্ষ ভাবে এই ঘটনার তদন্ত হোক।’
অভিষেকের মন্তব্যে কোনও পাল্টা জবাব এখনও দেয়নি গোয়ার সরকার। মৃতদের পরিবারের প্রতি শোক প্রকাশ এবং আহতদের দ্রুত সেরে ওঠার প্রার্থনা জানিয়েছেন গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাবন্ত, স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিশ্বজিৎ রানে-সহ অনেকে। তাঁদের আশ্বাস, জখমদের দ্রুত সুস্থ করে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। কেন এমন ঘটনা ঘটল, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি। সংবাদ সংস্থা