প্র: আপনার কলকাতায় আসার কারণ কী?
উ: সৌমিক সেনের পরিচালনায় হিন্দি ওয়েব সিরিজ় ‘জ্যাজ় সিটি’র কাজের জন্যই অনেক দিন ধরে এখানে আসা-যাওয়া চলছে আমার।
প্র: শোনা যাচ্ছে, কলকাতায় থাকার জন্য জায়গা খুঁজছেন। এখানে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে?
উ: এই পরিকল্পনা কথাটা খুব গোলমেলে। আমার কেরিয়ারে কোনও কিছুই প্ল্যান করে হয়নি। মডেলিং দিয়ে শুরু করি। তার পর টেলিভিশন, রেডিয়ো, সিনেমা সব করেছি। আর সেগুলো করতে গিয়ে বুঝেছি, পরিকল্পনা করে কিছু হবে না, অন্তত আমার ক্ষেত্রে। ‘জ্যাজ় সিটি’তে কাজ করার পর মনে হল, এখানে লোকজন আমাকে নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে। তাই আমিও একটু এক্সপ্লোর করতে চাই।
প্র: দুই বাংলার মধ্যে কাজের পরিস্থিতিটা কেমন এখন?
উ: এই মুহূর্তে ঠিক কী অবস্থা বলতে পারব না। তবে ভাষা, সাহিত্য সব কিছুতে আমাদের মধ্যে মিল রয়েছে। দুই বাংলার মানুষ একসঙ্গে কাজ করছেন বহু দিন ধরে। ববিতা ম্যাম সেই কবে সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে কাজ করে গিয়েছেন। শিল্পীদের কাজের কোনও সীমারেখা হয় না।
প্র: রাজনৈতিক মহলে কিন্তু সে ভাবে বিষয়টা দেখা হয় না।
উ: হ্যাঁ, ওটা তো পুরোপুরি অন্য একটা জগৎ। সেখানে আমার কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। এমনিতে কোভিডের পর গোটা পৃথিবীর নিয়মকানুন বদলে গিয়েছে।
প্র: শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত মুজিবুর রহমানের বায়োপিকে নামভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। শোনা যাচ্ছে, সাম্প্রতিক কালে এর জন্য সমস্যায় পড়তে হয়েছে আপনাকে?
উ: পৃথিবীতে যত জায়গায় এ পর্যন্ত কোনও অভ্যুত্থান হয়েছে, তার সঙ্গে কিছু কোল্যাটারাল ড্যামেজ হয়েছে। আপনি পার্কের মধ্য দিয়ে শান্তিতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু আচমকা একটা ঘটনার শিকার হয়ে গিয়েছেন। এতে কিছু করার থাকে না। আমি সচেতন ভাবে অরাজনৈতিক মানুষ। অভিনয় ছাড়া কিচ্ছু করি না। কোনও ব্যবসা নেই, ব্যাকআপ নেই। যদি সত্যি সত্যি সমস্যায় পড়তাম, তা হলে কলকাতার এই কাফেতে বসে সাক্ষাৎকার দিতেই পারতাম না। আমার আগামী ছবি ‘নীলচক্র’ রিলিজ় করবে সামনে। তার পর ‘নুর’, ‘ঠিকানা বাংলাদেশ’, ‘লহু’ রয়েছে। আমি সারা জীবন দুটো জিনিসকে গুরুত্ব দিয়েছি, যে চরিত্রটা আমাকে দেওয়া হয়েছে সেটা হয়ে ওঠা। আর আমার কাজ দেখে দর্শকের প্রতিক্রিয়া। আমাকে পৃথিবীর সবচেয়ে বোকা লোকের চরিত্র দিন, আমি সেখানে নিজেকে উজাড় করে দেব। কিন্তু বাস্তবেও আমি সেই বোকা লোকটা, এমন তো নয়। আশা করি আমি সবটা বোঝাতে পেরেছি।
প্র: রাহুল মুখোপাধ্যায়ের আগামী রোম্যান্টিক ছবিতে আপনার কাজ করার কথা ছিল...
উ: হ্যাঁ, ‘নীলচক্র’র সঙ্গে ডেটের সমস্যা হল। রাহুলের ছবির কাজটা যখন হবে, ওই সময়টা আমাকে বাংলাদেশে থাকতেই হবে।
প্র: এখানে আর কোন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে চান?
উ: এখনও পর্যন্ত রঞ্জন ঘোষ, অরিন্দম শীল আর রাহুলের সঙ্গেই কাজ করেছি। এখানে খুব বেশি কারও সঙ্গে আমার আলাপ নেই। তবে কাজ সকলের সঙ্গেই করতে চাই। সৃজিতদা (মুখোপাধ্যায়), টোনিদাকে (অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী) চিনি। শিবুদার (শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) সঙ্গে আলাপ করতে চাই। এখানে দু’-একটা কাজ করলে হয়তো চেনাজানা বাড়বে। ব্যক্তিগত ভাবে সৃজিতদা, শিবুদা, কৌশিকদার (গঙ্গোপাধ্যায়) কাজের ভক্ত। তবে ভাল চরিত্র পেলে আমি পৃথিবীর যে কোনও জায়গায় কাজ করতে পারি।
প্র: এখানে কাজ করতে গেলে থাকতে হবে...
উ: সেই চেষ্টা করছি। জয়াদি (আহসান), চঞ্চলদা (চৌধুরী) যে ভাবে দু’দেশে কাজ করছেন। আমিও সেটাই চাই।
প্র: ‘জ্যাজ় সিটি’র জন্য মুম্বইয়েও ছিলেন। কেমন অভিজ্ঞতা?
উ: খুবই ভাল। সকলে ভীষণ পেশাদার। তবে আমার শহরটাকে বেশ কেজো মনে হয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ কিচ্ছু করে না। কলকাতার মানুষ অনেক আন্তরিক। কত লোক বিনা কারণে আমাকে সাহায্য করছেন। এটা হয়তো দুই বাংলার যোগসূত্রের জন্য। কলকাতায় এসে কত জনের মুখে শুনেছি, তাঁদের পূর্বপুরুষ বাংলাদেশে থাকতেন।
প্র: আপনি সমাজমাধ্যমে কাজের পোস্টের বাইরে কোনও মতামত দেন না। এটা কি সচেতন সিদ্ধান্ত?
উ: মানুষ এখন বড্ড জাজমেন্টাল। বাকিরা কী বলছে, তার উপর আমার জীবন নির্ভর করতে পারে না।
প্র: সম্প্রতি আপনার ব্যক্তিগত জীবন চর্চায় এসেছে। এই আলোচনা কতটা প্রভাব ফেলে আপনার উপরে?
উ: ওই যে বললাম, বাইরের আলোচনা আমার উপর প্রভাব ফেলে না। সম্পর্ক ভাঙার ঘটনা পৃথিবীতে প্রথম ঘটছে না। এর চেয়ে অনেক খারাপ কিছু প্রতিনিয়ত কোথাও না কোথাও ঘটছে। অভিনয় জগতে থাকার জন্য আমাদের নিয়ে মুখরোচক খবর হয়, কী আর করা যাবে। ছ’বছর ধরে আমি ফেসবুক থেকে দূরে। একটা পেজ রয়েছে, যেটা আমার টিম চালায়। ফেসবুক কেমন যেন একটা হেট মেশিনে পরিণত হয়েছে। লোকে নিজের জীবনে এতটাই বীতশ্রদ্ধ যে, অন্যের নিন্দে করে শান্তি পায়। ব্যাপার হল, যারা আমাকে নিয়ে কথা বলছে, তারা আমার জীবনটা কাটাচ্ছে না। আমি কোন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি কিচ্ছু জানে না। তা হলে সে আমাকে নিয়ে কথা বলার কে? বললেই বা আমি শুনব কেন?
প্র: মায়ের মৃত্যু আপনার উপরে অনেকটা প্রভাব ফেলেছে। বিভিন্ন পোস্ট থেকে সে কথা আন্দাজ করা যায়...
উ: আমার মা গত দশ বছর ধরে অসুস্থ ছিল। এই পুরো সময়টা আমার জীবন জিম, সেট, বাড়ি— এই আবর্তে ঘুরেছে। গত বছর মা চলে গেল, তার পর ব্যক্তিগত ওঠাপড়া, রাজনৈতিক টানাপড়েন অনেক কিছু ঘটেছে। কিন্তু কিছুই ভাল হচ্ছে না ভেবে আমি ঢাকায় বসে থাকতে পারতাম, আছি কি? জীবন যে ভাবে আসবে, সে ভাবেই গ্রহণ করতে হবে। এটাই সার কথা।
দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ