ভরসা আদালত
গত ৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুসারে ২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়ার ব্যাপক দুর্নীতির কারণে প্রায় ছাব্বিশ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হল। এর ফলে সমাজের ভাল হল না মন্দ, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই এই চিঠি। এক দিকে এত শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী, যাঁদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। অন্য দিকে, এত ছাত্রছাত্রী, যাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারময় হয়ে আসছিল।
তুল্যমূল্য বিচারে সহজেই অনুমেয় যে, মহামান্য হাই কোর্ট এবং মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছে সেটি সমাজের পক্ষে হিতকর। এর দু’টি দিক আছে। এক আগামী প্রজন্ম, যাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারময় হতে বসেছিল, তারা আলো খুঁজে পাওয়ার সুযোগ পাবে। দুই, যারা ষড়যন্ত্র করে শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গায় দুর্নীতি করে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তথা দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে, তাদের সাজা মেলার সম্ভাবনা বাড়ল। অতএব সাধারণ নাগরিক হিসাবে এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো উচিত। আদালত মানেই ন্যায় পাওয়ার জায়গা। সেই হেতু আদালত আজকের রায় দ্বারা সমাজের সবার প্রতি ন্যায় করেছে বলেই মনে হয়। মোট ২৫,৭৫৩ জনের মধ্যে আবার অযোগ্য বলে চিহ্নিতদের গৃহীত বেতনের উপর ১২% হারে সুদ-সহ টাকা ফেরতের নির্দেশ দেওয়াকেও স্বাগত জানাই। আগামী দিনে এ রকম দুর্নীতি করতে বা দুর্নীতির মাধ্যমে শিক্ষার মতো জায়গায় অন্তর্ভুক্ত হতে মানুষ দ্বিতীয় বার চিন্তা করবে।
এ-যাবৎ সংবাদমাধ্যমগুলিতে চাকরিহারাদের কান্না, তাঁদের অভিব্যক্তি, সরকারের দোষ-ভুল ইত্যাদি দেখানো হচ্ছে। কিন্তু ২০১৬ সালে যে শিশুরা পঞ্চম শ্রেণিতে উঠেছিল এত দিনে তারা মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক দিয়ে কলেজ জীবনে প্রবেশ করেছে। ওই শিক্ষকদের মাধ্যমে তারা কী শিক্ষা পেয়েছে, সেটার বিশ্লেষণ আমরা কেউ কি করেছি? এ ভাবে স্কুলে স্কুলে দুর্নীতিগ্রস্ত মাস্টারমশাইদের অনুপ্রবেশ করিয়ে সমস্ত ছাত্রছাত্রীকে টিউশন নির্ভর করে তোলা হয়েছে। স্কুলগুলি কেবল সার্টিফিকেট আদায়ের মাধ্যম হয়েছে। পড়াশোনা আর স্কুলে হয় না। মাস্টারমশাইদের তাই ছাত্ররা সম্মানও করে না। কারণ শিক্ষক হতে গেলে নির্দিষ্ট যোগ্যতার সঙ্গে সঙ্গে নির্দিষ্ট কিছু আচার-আচরণের প্রয়োজন হয়, যেগুলি এই সব দুর্নীতিগ্রস্ত মাস্টারমশাইয়ের মধ্যে আছে কি না সন্দেহ।
প্রাথমিকের ক্ষেত্রেও এই একই অনিয়মের অভিযোগ। এই দুর্নীতি এতটাই ছড়িয়ে পড়েছে যে, বর্তমানে ছোট থেকে বড় যা কিছু সমস্যা সবেতেই আদালতের মুখাপেক্ষী হতে হচ্ছে। মানুষ এখন প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে দুর্নীতি করাটাকে খুবই সহজ মনে করছে। এ ক্ষেত্রে আদালতই এই দুর্নীতির হাত থেকে সাধারণ মানুষ এবং সমাজকে রক্ষা করার একমাত্র ভরসাস্থল।
প্রবীর আদক
পূর্বকোলা, পূর্ব মেদিনীপুর