পাক রেঞ্জার আটক, আশায় পূর্ণমের স্ত্রী
প্রকাশ পাল
রিষড়া: এগারো দিন পার। রবিবার রাত পর্যন্ত মুক্তি মেলেনি পাকিস্তান রেঞ্জার্সের হাতে বন্দি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) জওয়ান পূর্ণমকুমার সাউয়ের। তবে, সীমান্ত লঙ্ঘনের অভিযোগে রাজস্থানে এক পাক রেঞ্জার বিএসএফের
হাতে আটক হওয়ায় পূর্ণমের মুক্তির আশায় রয়েছেন বাড়ির লোকেরা। অবশ্য, দিন দুয়েকের মধ্যে স্বামীর কোনও খবর না পেলে দিল্লি যাবেন বলে এ দিন জানিয়েছেন পূর্ণমের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রজনী।
পূর্ণমের মুক্তি কবে হবে, সে ব্যাপারে কোনও নিশ্চয়তা না মিললেও রজনী বলেন, ‘‘এত দিন অপেক্ষা করলাম। ভাবছিলাম, স্বামী চলে আসবে। পাকিস্তানের রেঞ্জার ধরা পড়ার পরে আশা কিছুটা বেড়েছে।’’ আত্মীয়েরা মনে করছেন, নিজেদের জওয়ান ধরা পড়ায় পূর্ণমকে ছাড়ার ব্যাপারে পাকিস্তানের সুর নরম হবে।
রজনী জানান, স্বামীর কর্মস্থলে গিয়ে তিনি জেনেছেন, তাঁকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা বিএসএফের তরফে চলছে। তবে, ফ্ল্যাগ মিটিংয়ে পাকিস্তানের দিক থেকে বিশেষ সাড়া মেলেনি। বিএসএফ ফিরোজপুর সীমান্তে শিবির করেছে, যাতে পাকিস্তানের দিক থেকে সদর্থক কোনও ইঙ্গিত পেলেই দ্রুত সংশ্লিষ্ট আধিকারিককে খবর পাঠিয়ে পূর্ণমের মুক্তির ব্যাপারে কথাবার্তা চালানো যায়। এ বার আলোচনা গতি পাবে বলে তাঁদের আশা।
পূর্ণমের মা দেবন্তী দেবীর আর্জি, ‘‘এত দিন হয়ে গেল। ছেলেকে এখনই মুক্তি দেওয়া হোক।’’
পূর্ণম পঞ্জাবের পাঠানকোটের ফিরোজপুরে ২৪ নম্বর ব্যাটেলিয়নের কনস্টেবল। স্বামীকে মুক্ত করার ব্যাপারে তদ্বির করতে আট বছরের ছেলে এবং অন্য আত্মীয়দের নিয়ে গত ২৮ তারিখ হিমাচল প্রদেশের কাংড়ায় বিএসএফের সদর দফতরে যান রজনী। স্বামীর কর্মস্থলেও যান। তিনি জানান, তাঁরা ফিরোজপুর সীমান্তেও যেতে চেয়েছিলেন। উত্তেজনা থাকায় যেতে দেওয়া হয়নি। সেখানে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
রজনী জানান, স্বামীর খবর না পাওয়া পর্যন্ত তিনি ফিরতে চাননি। বিএসএফের কর্তারা এক সপ্তাহ সময় চান। তাঁকে জানান, এর মধ্যে নিশ্চয়ই কিছু খবর মিলবে বলে তাঁদের আশা। না হলে তাঁরাই দিল্লিতে বিএসএফের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের ব্যবস্থা করবেন। ওই আশ্বাসে তিনি বাড়ি ফেরেন।
রবিবার রজনী বলেন, ‘‘মঙ্গলবার পর্যন্ত অপেক্ষা করব। তার মধ্যে কিছু না হলে দিল্লি যাব।’’
পূর্ণমের মুক্তির দাবিতে হুগলির রিষড়ায় তাঁদের বাড়ির গলিতে ঢোকার মুখে ফ্লেক্স টাঙানো হয়েছে স্থানীয় হরিসভা শারদোৎসব কমিটির তরফে। তার আগে আরও একটি ফ্লেক্স সেখানে লাগানো হয় একই দাবিতে। পূর্ণমের বাড়িতে এ দিনও গিয়েছিলেন রিষড়ার পুরপ্রধান বিজয়সাগর মিশ্র। তাঁর কথায়, ‘‘আমরাও পূর্ণমের মুক্তির অপেক্ষায়। আশা করছি প্রতীক্ষা শীঘ্রই শেষ হবে।’’ শনিবার ওই বাড়িতে যান স্থানীয় বিধায়ক সুদীপ্ত রায়। তিনি বলেন, ‘‘আমরা আশাবাদী, পূর্ণম খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ অবস্থায়
বাড়ি ফিরবেন।’’
সীমান্তে পাহারার সময় গত ২৩ এপ্রিল দুপুরে ভুল করে পাকিস্তানের সীমানায় ঢুকে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নেওয়ার সময় পূর্ণমকে ধরে নিয়ে যায় পাক রেঞ্জার্স।