বিমানবন্দরের সামনে ক্ষেপণাস্ত্র, আতঙ্ক ইজ়রায়েলে
তেল আভিভ, ৪ মে: মাত্র ৭৫ মিটারের ব্যবধান। ইজ়রায়েলের বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল ৩-এর কয়েক হাত দূরে এসে পড়ল ইয়েমেনের হুথি জঙ্গিদের ছোড়া ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। আট জনের জখম হওয়ার খবর মিলেছে। প্রকাণ্ড গর্ত তৈরি
হয়েছে রাস্তায়। ক্ষতিগ্রস্ত বহু গাড়ি। বিঘ্ন ঘটেছে বিমান চলাচলে। আগামী দু’দিনের জন্য, অর্থাৎ ৬ মে পর্যন্ত তেল আভিভ-গামী সমস্ত বিমান বাতিল করেছে এয়ার ইন্ডিয়া। উড়ান সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আজকের হামলার পরপরই দিল্লি থেকে যাওয়া একটি বিমানের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে নামার কথা ছিল। বিমানটির মুখ ঘুরিয়ে আবু ধাবি নিয়ে যাওয়া হয়। সংস্থাটি জানিয়েছে, যাত্রীদের নিরাপত্তা সবার আগে। যাত্রীদের
বিকল্প ব্যবস্থাও (অন্য দিনের টিকিট বা টাকা ফেরত) করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া।
ইজ়রায়েলের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আজকের হামলা তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ব্যর্থতা। বহু চেষ্টা করেও তারা পাল্টা হামলায় ধ্বংস করতে পারেনি জঙ্গিদের ক্ষেপণাস্ত্রটি।
এই ব্যর্থতার কারণ জানতে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘‘আমরা অতীতে এর জবাব দিয়েছি। ভবিষ্যতেও দেব। এর বেশি কিছু বলব না। আমাদের সঙ্গে আমেরিকাও ওদের বিরুদ্ধে লড়ছে। এটা এক ধাক্কায় সব
কিছু শেষ করার নয়। কিন্তু এর জবাব ওরা পাবে।’’
১৮ মাস হয়ে গেল গাজ়া ভূখণ্ডে হামাস-ইজ়রায়েল যুদ্ধ চলছে। গাজ়া প্রশাসন সূত্রে খবর, ৫২,৪৯৫ জনের মৃত্যু হয়েছে যুদ্ধে। এর মধ্যে ৫৭ জন স্রেফ না-খেতে পেয়ে মারা গিয়েছেন। হামাসের সমর্থনে দীর্ঘদিন ধরেই ইজ়রায়েলে হামলা চালিয়ে আসছে হুথিরা। এমনকি আশপাশের সমুদ্রপথে ভাসমান ইজ়রায়েল ও আমেরিকার বন্ধু দেশগুলির জাহাজে লাগাতার ক্ষেপণাস্ত্র-হানা চালাচ্ছে তারা। পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে আমেরিকা-ইজ়রায়েলও। সম্প্রতি ইয়েমেনের আল-হাজ়মের দশটি জায়গায় আকাশপথে হানা দিয়েছে আমেরিকার যুদ্ধবিমান। আজকের হামলায় যে হুথি-যোগ রয়েছে, সে কথা নিজেরাই ঘোষণা করেছে ইয়েমেনি জঙ্গি গোষ্ঠীটি। একটি টেলিভিশন বার্তায় উড়ান সংস্থাগুলিকে সতর্ক করে দিয়ে হুথি বাহিনীর মুখপাত্র ইহা সারি বলেছেন, ইজ়রায়েলের ব্যস্ততম বিমানবন্দর বেন গুরিয়ন আকাশপথে সফরের জন্য আর ‘মোটেই
নিরাপদ নয়’।
জঙ্গি হামলার পরে আজ কিছুক্ষণের জন্য বিমান ওঠানামা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে। বেশ কিছু বিমানের মুখ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল অন্যত্র। বিমানবন্দরে ঢোকার পথগুলি কিছু ক্ষণের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই অঞ্চলে ট্রেন চলাচলেও সাময়িক ভাবে বিঘ্ন ঘটে। হামলার সঙ্গে সঙ্গে সেন্ট্রাল ইজ়রায়েল জুড়ে সাইরেন বাজতে শুরু করে। স্থানীয় বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়ে লুকোন। বেশ কিছু ভিডিয়ো ছড়িয়েছে সমাজমাধ্যমে। তাতে দেখা যাচ্ছে, বিমানবন্দরের চৌহদ্দির ভিতরেই একটি সংযোগকারী রাস্তার উপরে তৈরি হয়েছে প্রকাণ্ড গর্ত।
ইজ়রায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইজ়রায়েল কাৎজ় কার্যত হুমকির সুরেই বলেছেন, ‘‘যারা আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে, এর সাতগুণ ফেরত দেব তাদের।’’ ইজ়রায়েল রেজ়িলিয়েন্স পার্টি-র নেতা, তথা প্রাক্তন যুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রিসভার সদস্য বেনি গ্যানৎজ় বলেন, হামলাকারীদের মাথায় ইরানের সমর্থনের হাত রয়েছে। অতএব এর দায় ইরানকে নিতে হবে। বেনির কথায়, ‘‘এটা ইরানই। ওরাই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে ইজ়রায়েলে। এর দায় ওদের নিতে হবে। এ ভাবে ইজ়রায়েলে হামলার চালানোর জন্য ভয়ানক পরিণতি ভুগতে হবে তেহরানকে।’’
ইরানকে দায়ী করলেও ইরান-যোগের কোনও প্রমাণ অবশ্য দেখাতে পারেননি বেনি।
সংবাদ সংস্থা