প্রতিবেশীর সঙ্গে সংঘাতে
উদ্বেগ, তবু পোক্ত সূচক
অমিতাভ গুহ সরকার
কাশ্মীরের পহেলগামে জঙ্গিদের হত্যালীলার পরে সাতটি কাজের দিন কেটে গিয়েছে। বাতাসে যুদ্ধের গন্ধ থাকলেও শক্তি ধরে রেখেছে শেয়ার বাজার। গত সপ্তাহে ১২৮৯ পয়েন্ট উঠে সেনসেক্স থিতু হয় ৮০,৫০২ অঙ্কে। তবে সূচক এতটা উঠলেও, অনিশ্চয়তার চোরা স্রোত বহাল। ঘটনার পর থেকে ভারত প্রতিনিয়ত পাকিস্তানের প্রতি প্রত্যাঘাতের হুঙ্কার ছাড়লেও, এখনও পর্যন্ত তা থেকে বিরত থেকেছে। সীমান্তে উত্তেজনা এবং পারস্পরিক নিষেধাজ্ঞা সংঘাত বাড়াচ্ছে। ফলে সংঘর্ষ নিয়ে আশঙ্কা পিছু ছাড়েনি। তবু এ দেশে পুঁজি ঢেলে শেয়ার কিনছে বিদেশি লগ্নি সংস্থাগুলি। বাজারও উঠছে।
আসলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রত্যাঘাতের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন বটে। বাস্তবে আগে ঘর সামলাতে তৈরি হচ্ছে নয়াদিল্লি। কারণ, সংঘর্ষে সংশ্লিষ্ট সব অর্থনীতিরই ক্ষতি হয়। তার উপর জঙ্গিদের মদতদাতা হিসেবে পাকিস্তানকে ভারত কী ভাবে প্রত্যাঘাত করবে, তাই নিয়ে অনিশ্চয়তা তুঙ্গে। পাকিস্তান তাদের আকাশপথ ব্যবহারে এ দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করায় ঘুরপথে যেতে গিয়ে লোকসানের মুখে পড়েছে ভারতীয় উড়ান সংস্থাগুলি। পাল্টা ভারতও নিষিদ্ধ করেছে পাকিস্তানি বিমান। বন্ধ হয়েছে দু’দেশের বাণিজ্য। পাকিস্তানের বন্ধু রাষ্ট্র বাংলাদেশ বেশ কিছু ভারতীয় পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা বসিয়েছে। সীমান্তে সমস্যা আছে চিনকে নিয়েও। অর্থাৎ মাথাব্যথা পড়শিরাই। ফলে এত বড় সীমান্ত পাহারা দেওয়ার পাশাপাশি প্রস্তুত না হয়ে প্রত্যাঘাত হঠকারিতা হতে পারে। তাই হয়তো সময় নিচ্ছে নয়াদিল্লি।
অন্য দিকে শুল্ক যুদ্ধের খাঁড়া ঝুলছে। সেটাও অর্থনীতির জন্য চিন্তার। আমেরিকা শুল্ক বসানোর সিদ্ধান্ত ৯০ দিন স্থগিত রেখেছে। তার মধ্যেই বাণিজ্য চুক্তি সেরে কিছুটা সুবিধা আদায়ে মরিয়া কেন্দ্র। চলছে বৈঠক। বাজার তাকিয়ে সেই দিকে। তবে কিছু সুবিধা পেতে হলে কিছু ছাড়তে হবে। কিছু শিল্প চোট খাবেই।
তবে এত অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও সূচক উঠছে। ১৫ এপ্রিলের পরে টানা শেয়ার কিনছে বিদেশি লগ্নি সংস্থা। ফলে দেশে ঢুকছে ডলার। চাঙ্গা হচ্ছে টাকা। বাড়ছে বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার। প্রায় ৮৭ টাকায় ওঠা ডলারের দাম নেমেছে ৮৪.৫৪ টাকায়। বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেল ৬১ ডলারে। অর্থাৎ আমদানির খরচ কমছে। এপ্রিলে কারখানার উৎপাদন সূচক পিএমআই ৫৮.২ ছুঁয়ে ১০ মাসে সর্বোচ্চ। গত অর্থবর্ষে পরিষেবা রফতানি বেড়ে ৩৮,৭৫০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে, যা নজিরবিহীন। এই সব পরিসংখ্যানে স্পষ্ট ভারতীয় অর্থনীতির মজবুত ভিত।
মূল্যায়ন সংস্থা এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল এই অর্থবর্ষে আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে ৬.৩% করলেও, বর্তমান অস্থির দুনিয়ায় এ দেশের হার প্রথম সারিতে থাকবে। যে কারণে ফিরছে বিদেশি লগ্নি। যুদ্ধ নিয়েও শঙ্কিত নয় শেয়ার বাজার। অনুমান, তা যদি শুরুও হয় দীর্ঘস্থায়ী হবে না। ফলে বড় পতনের আশঙ্কা কম। বরং কিছুটা নামলে কম দামে লগ্নির সুযোগ খুলবে।
এ বার বাজেটে কেন্দ্র যে কর ছাড় দিয়েছে, তার সুফল মিলছে এপ্রিল থেকে। এই ছাড়ের একাংশ যেমন লগ্নির বাজারে ঢুকবে, তেমনই কিছুটা চাহিদা বাড়াবে। দু’দফায় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সুদ কমানো এবং ভাল বর্ষার পূর্বাভাসও বাজারের পক্ষে সদর্থক। অর্থাৎ যুদ্ধের আশঙ্কা থাকলেও বাজারে উদ্বেগের কারণ তেমন নেই।
(মতামত ব্যক্তিগত)