জঙ্গি-যোগ: আরও এক অভিযুক্ত গ্রেফতার
নিজস্ব সংবাদদাতা
জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে এ বার দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ডায়মন্ড হারবার থেকে মহম্মদ আব্বাসউদ্দিন মোল্লা নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে রাজ্য পুলিশের এসটিএফ। শুক্রবার রাতে তাকে গ্রেফতার করেন গোয়েন্দারা। বৃহস্পতিবার রাতে বীরভূমের নলহাটি থানার চণ্ডীপুর ও মুরারই থানার চাতরা থেকে যথাক্রমে আজমল হোসেন ও সাহেব আলি খান নামে দুই যুবককে ধরেছিল এসটিএফ। ধৃতদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহমূলক বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার মামলা দায়ের করে তারা। গোয়েন্দাদের দাবি, ওই দু’জনকে জেরা করে আব্বাসউদ্দিনের সন্ধান মেলে। তার পরেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
শনিবার রামপুরহাট আদালতে ধৃত তিন জঙ্গিকে হাজির করানো হলে ১৪ দিন নিজেদের হেফাজতে চেয়ে আবেদন জানায় এসটিএফ। সরকারি আইনজীবী সৈকত হাটি জানান, বিচারক এসটিএফের অধীনে ১৩ দিনের হেফাজত মঞ্জুর করেছেন। ধৃতদের কলকাতায় আনার কথা। গোয়েন্দাদের দাবি, ধৃতেরা প্রায় দু’বছর ধরে জঙ্গি কার্যকলাপে যুক্ত রয়েছে। তাদের সঙ্গে নিষিদ্ধ সংগঠন জেএমবি-র সম্পর্ক ছিল। মূলত অনলাইনেই তারা জেএমবি-র বীরভূম মডিউল তৈরি করেছিল। যাদের সদস্য সংখ্যা আপাতত সাত জন বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। যার মধ্যে তিন জনকে গ্রেফতার করা হলেও বাকিরা পলাতক বলে দাবি সূত্রের। ধৃতদের জেরা করে ওই পলাতক তিন জনের হদিশ পাওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
গোয়েন্দারা জানান, বাংলাদেশে বসে থাকা ওই সংগঠনের একাধিক নেতার নির্দেশে তারা এখানে জেহাদি কার্যকলাপের ছক কষেছিল। তার জন্য প্রয়োজন ছিল আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক। অস্ত্র সংগ্রহের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ডায়মন্ড হারবারের মহম্মদ আব্বাসউদ্দিন মোল্লাকে। এক তদন্তকারী জানান, বীরভূম থেকে বিস্ফোরক জোগাড় করা অসম্ভব কিছু নয়। কিন্তু অস্ত্র জোগাড় করা কঠিন। তাই ওই কাজের দায়ভার বর্তেছিল আব্বাসের ওপর। তবে আব্বাস অস্ত্র জোগাড় করতে পেরেছিল কি না, তা নিয়ে গোয়োন্দারা কিছু জানাননি। সূত্রের দাবি, আব্বাসকে জেরা করে সেই অস্ত্রের খোঁজ করা হবে।
এক তদন্তকারী জানান, বীরভূম মডিউলের জন্ম প্রায় দেড় বছর আগে। মূলত অনলাইনে মডিউলের কাজ হলেও মাসে এক বার তারা বৈঠকে বসত। প্রতি সপ্তাহে অনলাইনে মিটিং করত। বাংলাদেশ থেকে একাধিক জঙ্গি নেতা বীরভূমের নলহাটিতে আজমলের কাছে এসেছিল বলে দাবি তদন্তকারীদের। তারা কোথায় ছিল এবং কাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে, সেই খোঁজ শুরু হয়েছে।
ধৃত আব্বাসউদ্দিন ডায়মন্ড হারবারের পাতড়া এলাকার শিউলি পাড়ার বাসিন্দা। শুক্রবার রাতে ডায়মন্ড হারবার থানার পুলিশের সহযোগিতায় তাকে বাড়ি থেকে ধরে এসটিএফ। ধৃত ব্যক্তি জেএমবি জঙ্গি গোষ্ঠীর বীরভূম মডিউলের সদস্য বলে দাবি করা হলেও ওই অভিযোগ মানতে নারাজ তার বাড়ির লোক। তাঁরা জানান, গ্রামে ধর্মচর্চা ও তাবিজ, জড়িবুটির ব্যবসা করতেন বছর পঁয়তাল্লিশের আব্বাসউদ্দিন। চার ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে যে টালির বাড়িতে থাকতেন ওই ব্যক্তি, শনিবার সকাল থেকেই তার সামনে পড়শিদের ভিড়। ধৃতের আত্মীয়া সালেমা বিবি বলেন, “আমাদের পরিবারে কেউ এমন সংগঠনে জড়িত নয়। ও বাড়ি থেকেই বেশি বেরোত না। ধর্মভীরু মানুষ। একটু মানসিক সমস্যাও ছিল। ওকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। গভীর রাতে পুলিশ এল। বাড়ি ঘিরে ফেলল। ওর নাম ধরে জোর করে নিয়ে গেল!”