রাতভর হামলায় পাল্টা পাক সেনার বহু ঘাঁটি ধ্বংস
নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি, ১০ মে: চার দিন ধরে চলা সংঘর্ষের পরে অবশেষে আজ জল, স্থল ও আকাশে সব ধরনের সামরিক অভিযান ও গুলি বিনিময় বন্ধ করতে রাজি হল ভারত ও পাকিস্তান।
আজ বিকালে সংঘর্ষ থামানোর প্রশ্নে পাকিস্তানের ডিজিএমও (ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশনস) ভারতের ডিজিএমও-কে বিকেল ৩টে ৩৫ মিনিটে ফোন করেন। তার পরেই দু’পক্ষ ওই সংঘর্ষ থামাতে ঐকমত্যে আসেন। আজ বিকাল ৫টা থেকে সংঘর্ষ থামাতে নীতিগত ভাবে রাজি হয় দু’পক্ষই। যদিও এর কয়েক ঘণ্টা পরেই রাতে জম্মু ও কাশ্মীরের একাধিক স্থানে বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা গিয়েছে। আজ সকালে সীমান্তের পরিস্থিতি নিয়ে সেনার তিন প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। পরে সেনার তিন প্রধান ও রাজনাথ বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে। সংঘর্ষবিরতি ঘোষণার পরে সীমান্তের পরিস্থিতি নিয়ে ফের সেনার তিন প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন নরেন্দ্র মোদী।
আজ সংঘর্ষ থামানোর প্রশ্নে দু’ পক্ষ রাজি হলেও শুক্রবার রাতেও গোলাগুলি ও ড্রোন হামলার সাক্ষী থেকেছে সীমান্ত এলাকা। শুক্রবার সারা রাত ও শনিবার দুপুর পর্যন্ত শ্রীনগর থেকে গুজরাতের কচ্ছের নালিয়া পর্যন্ত বিভিন্ন সেনা ছাউনি লক্ষ্য করে হামলা চালায় পাক বাহিনী। আজ সকালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সাংবাদিক সম্মেলনে কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এবং উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহ বলেন, ‘‘গতকাল পশ্চিম সীমান্তে প্রায় সারা রাত ধরেই ড্রোন, দূরপাল্লার অস্ত্র, বোমা ও বিমানের মাধ্যমে ভারতের সামরিক কাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালায় পাকিস্তান। একই ভাবে নিয়্ন্ত্রণরেখায় ড্রোন ও দূরপাল্লার অস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান।’’ সেনা জানিয়েছে, গত কাল পশ্চিম সীমান্তের প্রায় ২৬টি সামরিক সেনা ছাউনি লক্ষ্য করে ওই হামলা চালানো হয়। অধিকাংশ হামলা রুখে দিতে সক্ষম হলেও উধমপুর, পঠানকোট, আদমপুর, ভটিণ্ডা, ভুজে থাকা সামরিক ছাউনি ওই আক্রমণের শিকার হয়েছে। যাতে সেনার উপকরণ ও সেনাকর্মীর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে মেনে নিয়েছন সোফিয়া। তাৎপর্যপূর্ণ হল চার দিনের লড়াইয়ে আজই প্রথম পাকিস্তানের হামলায় ভারতের ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করে নিয়েছে সেনা। গত কাল পাকিস্তানের ছোড়া গোলায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন রাজৌরির অতিরিক্ত জেলা উন্নয়নবিষয়ক কমিশনার রাজকুমার থাপা। উত্তরবঙ্গের বাসিন্দা থাপার গুরুতর আহত হয়েছিলেন। আজ সকালে মারা যান তিনি।
ভারতের উদ্বেগ বাড়িয়ে গতকাল রাত একটা চল্লিশ নাগাদ পঞ্জাবের এয়ার বেস স্টেশন লক্ষ্য করে হাই স্পিড মিসাইল দিয়ে হামলা চালায় পাকিস্তান। যদিও আকাশেই সেই ক্ষেপণাস্ত্রকে ধ্বংস করে দিতে সক্ষম হয়েছে সেনা। পাশাপাশি শ্রীনগর, অবন্তীপুরা, উধমপুরের সেনা ছাউনিতে থাকা চিকিৎসা কেন্দ্র ও স্কুল লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। এ ভাবে নাগরিক পরিকাঠামো লক্ষ্য করে হামলার নিন্দা করেছে ভারত। পাল্টা হামলায় ভারত এয়ার লঞ্চড অস্ত্র ও যুদ্ধবিমান দিয়ে পাকিস্তানের রফিকি, মুরিদ, চাকনালা, রামিয়ার খান, সুকুরের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে দ্রুত ও সঠিক লক্ষ্যে হামলা চালায়। এতে পাকিস্তানের একাধিক সেনা পরিকাঠামোর টেকনিক্যাল কম্যান্ড কোর, রেডার, হাতিয়ার ডিপো নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পরে সন্ধ্যায় হওয়া সাংবাদিক সম্মেলনে উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহ বলেন, ‘‘ভারতীয় বায়ুসেনার হামলায় স্কার্দু, জ়াকোকাবাদ, ভোলারি বিমান ঘাঁটির এয়ার ডিফেন্স ব্যবস্থা, রাডার পরিকাঠামো নষ্ট করা সম্ভব হয়েছে।’’ এ ছাড়া ভারতের হামলায় নিয়ন্ত্রণরেখায় একাধিক পাক বাঙ্কার ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। সোফিয়া বলেন, ‘‘ওই হামলায় নিয়ন্ত্রণরেখায় পাকিস্তানের কম্যান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল, সামরিক পরিকাঠামো, সেনার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি এতটাই যে, পাক সেনার আক্রমণ ও প্রতিরক্ষার ক্ষমতা নষ্ট করে দিতে সক্ষম হয়েছে ভারত।’’ সংঘর্ষ থামলেও সেনার পক্ষ থেকে সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়েছে, পাকিস্তানের যে কোনও দুঃসাহসিক কাজের কড়া ভাবে মোকাবিলা করা হবে। সেনা জানিয়েছে, তারা নয়াদিল্লি এবং ইসলামাবাদের সংঘর্ষবিরতি মেনে চলবে। তবে তারা ‘সব সময় সতর্ক’ থাকার পাশাপাশি যে কোনও পরিস্থিতির জন্য ‘সম্পূর্ণ প্রস্তুত’ রয়েছে। এ দিকে ভারতের বিভিন্ন সেনা ছাউনিতে হামলা চালিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া কিংবা ভারতীয় সেনা পরিকল্পিত ভাবে মসজিদ নিশানা করে হামলা চালাচ্ছে বলে পাক সেনা যে ভুয়ো তথ্য প্রচার করছে, তার কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে নয়াদিল্লি।