জঙ্গি হানাকে যুদ্ধ হিসেবে দেখব: দিল্লি
দেশে। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী মুখোমুখি যুদ্ধে ভারতের তুলনায় পিছিয়ে থাকায় সন্ত্রাসবাদীদের সাহায্য নিয়ে পাল্টা হামলা চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে ইসলামাবাদের। যা রুখতেই নীতিতে পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। পাশাপাশি নয়াদিল্লি বুঝিয়ে দিয়েছে, আগামী দিনে পাকিস্তান যদি তাদের জমিতে বেড়ে ওঠা জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণ না করে, তা হলে ফল ভুগতে হবে তাদের। পাশাপাশি সেনাও জানিয়ে দিয়েছে, তারা সীমান্তে সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে। পাকিস্তানের যে কোনও ‘মিসঅ্যাডভেঞ্চার’-এর যোগ্য জবাব দেওয়ার প্রশ্নে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
পহেলগামে জঙ্গি হামলার জেরে গত চার দিন ধরে উত্তপ্ত ছিল ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত। শেষ পর্যন্ত আজ বিকালে সরকারি ভাবে সংঘর্ষবিরতির ঘোষণা হয়। তবে ওই ঘোষণার আগেই আজ সরকারের শীর্ষ সূত্র থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, সন্ত্রাসের নীতিতে পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। বাজপেয়ীর জমানায় সংসদ হানার পর ‘অপারেশন পরাক্রম’ হয়েছিল, যাতে দশ মাস ধরে সীমান্তে সেনা মোতায়েন ছিল। কিন্তু কোনও সামরিক হামলা হয়নি। এর পর ইউপিএ জামানায় ২৬/১১-এর পরেও পাকিস্তানের জঙ্গিদের শিবিরে হামলার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু কিছু হয়নি। শুধু কূটনৈতিক পদক্ষেপ করা হয়েছিল।
পরবর্তী সময়ে মোদী জামানায় প্রথমে উরি সেনা ছাউনিতে হামলার জবাবে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের সাক্ষী থেকেছে দেশ। ২০১৯ সালে পুলওয়ামার সিআরপিএফ কনভয়ে হামলার জবাবে পাক অধিকৃত বালাকোটে অভিযান চালিয়েছিল ভারত। সেগুলি ছিল নির্দিষ্ট ও নিয়ন্ত্রিত হামলা। হামলা চালানো হয়েছিল কেবল জঙ্গি শিবিরে। কোনও সামরিক পরিকাঠামোকে আঘাত করা হয়নি। এ বারেও পহেলগামে হামলার জবাবে মঙ্গলবার রাতে প্রথম যে হামলা চালায় ভারত, সেগুলি কেবল জঙ্গি শিবিরকে লক্ষ্য করেই করা হয়েছিল। যদিও পরবর্তী ধাপে পাকিস্তান এ দেশের সামরিক ছাউনি লক্ষ্য করে হামলা চালালে ভারত পাল্টা সে দেশের সামরিক কাঠামো লক্ষ্য করে আঘাত হানে।
কিন্তু নতুন রণনীতি বলছে, আগামী দিনে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট কোনও জঙ্গি গোষ্ঠী ভারতে হামলা চালালে তা ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবে দেখবে নয়াদিল্লি। সে ক্ষেত্রে সেই ভাবেই পাল্টা জবাব দেবে ভারত। নিরপাত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, এ কথা ঠিক, সন্ত্রাসের কোনও দেশ হয় না। কিন্তু ভারতে হওয়া অধিকাংশ সন্ত্রাসের শিকড় রয়েছে পাকিস্তানে। সে কারণে সন্ত্রাস প্রশ্নে পাকিস্তানের সঙ্গে বোঝাপড়ার যে পুরনো নীতি রয়েছে, তাতে পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। আজ বিদেশমন্ত্রী এস
জয়শঙ্কর বলেন, ‘‘আজ ভারত এবং পাকিস্তান সামরিক অভিযান এবং গোলাগুলি বন্ধ করার বিষয়ে একটি বোঝাপড়ায় এসেছে। ভারত ধারাবাহিক ভাবে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় এবং আপসহীন অবস্থান নিয়ে এসেছে। এটি বজায় থাকবে।’’
রণনীতি পাল্টানোর পিছনে আগামী দিনে ফের পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জঙ্গিদের হামলার আশঙ্কা করছে ভারত। গোয়েন্দা তথ্য বলছে, ভারতের বিভিন্ন শহরে নতুন করে হামলার পরিকল্পনা নিচ্ছে জঙ্গিরা। ইতিমধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে জম্মু-কাশ্মীরের সাম্বায় আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছে একাধিক জঙ্গির একটি দল ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করে। যাদের পিছন থেকে মদত দেয় পাকিস্তান রেঞ্জার্স। কিন্তু সীমান্তে বিএসএফ পাল্টা জবাব দেওয়ায় মারা যায় সাত জঙ্গি। রেঞ্জার্সদের ঘাঁটি গুড়িয়ে দেয় বিএসএফ। গোয়েন্দা সূত্র অনুযায়ী, সরাসরি সংঘর্ষে মার খেয়ে এখন পাকিস্তান আগামী দিনে সীমান্ত দিয়ে জঙ্গিদের ঢোকানোর চেষ্টা চালাবে। যাদের লক্ষ্য হবে ভারতের বিভিন্ন শহরে নাশকতা চালানো। পাশাপাশি এ দেশে পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের মদতপুষ্ট স্লিপার সেলগুলিকেও সক্রিয় করার চেষ্টা শুরু হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।
ফলে আগামী দিনে জঙ্গি হামলা হওয়ার আশঙ্কা থাকায় আগেভাগেই আজ পাকিস্তানকে সতর্ক করে দিল ভারত। পাশাপাশি আজ সন্ধ্যায় সেনার পক্ষ থেকে সাংবাদিক সম্মেলনেও স্পষ্ট জানানো হয়েছে, পাকিস্তানের যে কোনও দুঃসাহসিক কাজের কড়া ভাবে মোকাবিলা করা হবে। সেনা জানিয়েছে, তারা নয়াদিল্লি এবং ইসলামাবাদের সংঘর্ষবিরতি মেনে চলবে। তবে তারা ‘সব সময় সতর্ক’ থাকার পাশাপাশি যে কোনও পরিস্থিতির জন্য ‘সম্পূর্ণ প্রস্তুত’ রয়েছে। ভবিষ্যতে পাকিস্তানের তরফে যে কোনও উত্তেজনার ‘চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়া’ দিতে তারা পিছপা হবে না। কমোডর
রঘু আর নায়ার বলেন, “আজ যে সমঝোতা হয়েছে, আমরা তা মেনে চললেও মাতৃভূমির সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষার জন্য আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত, সর্বদা সতর্ক ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পাকিস্তানের প্রতিটি দুঃসাহসিক কাজকে শক্তিশালী ভাবে মোকাবিলা করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও করা হবে। দেশের প্রতিরক্ষায় যে কোনও অভিযান চালানোর জন্য আমরা সম্পূর্ণ
রূপে প্রস্তুত।”