রাজনীতির ঘোলা জল
তূর্য বাইন তাঁর ‘প্রতিশ্রুতি পূরণ কোন পথে’ (১০-৪) প্রবন্ধটিতে চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের চাকরি ফিরে পাওয়ার যে পন্থাটি তুলে ধরেছেন, তার জন্য ধন্যবাদ। গত ৭ এপ্রিল চাকরিহারাদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়াম-এ মিটিং করে তাঁদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিলেন। যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষকদের অনুরোধ করলেন তাঁরা যেন পূর্বেকার মতো স্কুলে গিয়ে পড়ানোর কাজ করেন। তিনি কি এক বারও ভেবে দেখলেন, সামাজিক লাঞ্ছনা ও সরকারি বঞ্চনার শিকার, অপমানিত চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা যদি স্কুলে যান, তা হলে স্কুলের সহকর্মী, ছাত্র-ছাত্রী এবং অভিভাবকদের চোখে তাঁদের মানসম্মান আদৌ বজায় থাকবে কি?
সরকারের প্রতিহিংসা পরায়ণ মনোভাব, নিয়োগ-দুর্নীতি চাপা দেওয়ার মরিয়া প্রচেষ্টার কারণেই আজ যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এই দুরবস্থা! এই সুযোগে রাজনীতির ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়েছে বিজেপি-ও। অথচ, ২০১৭ সালে ত্রিপুরায় বাম আমলে শিক্ষক নিয়োগ-দুর্নীতির মামলায় দশ হাজারের বেশি শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি গিয়েছে। তখনও বিজেপি বলেছিল, আমরা সরকারে এলে সকলের চাকরি ফিরিয়ে দেব। পরবর্তী কালে বিজেপি সরকারে বসলেও সেই প্রতিশ্রুতির ধারে-কাছে যায়নি।
তবে চাকরিহারাদের নিয়ে রাজনীতির খেলায় এ রাজ্যের বাম দল বা সিপিআই(এম) কিছুটা পিছিয়ে। কারণ তারা জানে ত্রিপুরার ২০১৭ সালে বাম আমলের শিক্ষা দুর্নীতির কারণে দশ হাজারের বেশি শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি হারানোর কলঙ্ক এখনও তাদের গায়ে লেগে আছে। তাই এ রাজ্যে চাকরিহারাদের সরকার-বিরোধিতায় উস্কানি দেওয়া ছাড়া এই মুহূর্তে তাদের কাছে আর কোনও বিকল্প পথ খোলা নেই। তারা এটাও জানে, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে ‘শূন্য’-এর গেরো থেকে বেরিয়ে এসে সরকার গড়া তাদের কাছে অলীক স্বপ্ন। না হলে তারাও চাকরিহারাদের ‘গিনিপিগ’ বানিয়ে তৃণমূল, বিজেপির মতো রাজনীতির খেলা খেলত।
আসলে, রাজ্য সরকার থেকে শুরু করে বিরোধী দল বিজেপি, সিপিআই(এম) সকলেই চাকরিহারাদের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি আর আশ্বাসবাণী শুনিয়ে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের জন্য সহানুভূতি আদায়ে ব্যস্ত। সব রাজনৈতিক দলই চাইছে, এই বিষয়টিকে আগামী বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত জিইয়ে রাখতে। তাই চাকরিহারাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার অন্ধকারে ঢাকা।
তপনকুমার বিদ
বেগুনকোদর, পুরুলিয়া