‘পাকিস্তানকে
সাহায্যের অর্থ
সন্ত্রাসে মদত’
ভুজ, ১৬ মে: পাকিস্তানকে যে কোনও রকম আর্থিক সহায়তা করাটা সন্ত্রাসে আর্থিক মদত জোগানোর চেয়ে কম নয়। আজ এই কথা বলেই আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডার (আইএমএফ)-কে হুঁশিয়ারি দিলেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। সম্প্রতি পাকিস্তানের ২৩০ কোটি ডলার ঋণের অনুরোধে ছাড়পত্র দিয়েছে আইএমএফ। তার মধ্যে ১০০ কোটি ডলার এখনই পেয়ে যাবে শাহবাজ় শরিফের সরকার। রাজনাথের আর্জি, ওই অর্থসাহায্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করুক আইএমএফ। যদিও আইএমএফের বৈঠকে এই প্রস্তাব নিয়ে ভোটদানে ভারতের বিরত থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস।
গত ৯ তারিখে আইএমএফের কার্যকরী পরিষদের বৈঠকে ভারত অভিযোগ তুলেছিল, ঋণের টাকা সীমান্তপারের সন্ত্রাসে আর্থিক মদতের কাজে লাগাচ্ছে পাকিস্তান। সে দেশে অসামরিক সরকার থাকলেও আর্থিক বিষয়ে পাক সেনা সরাসরি জড়িত। আজ রাজনাথ একই কথা বলেছেন। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর রেশ ধরে গত কাল শ্রীনগরের বাদামি বাগ সেনা ক্যান্টনমেন্টের পরে আজ গুজরাতের কচ্ছে ভুজ বায়ুসেনা ঘাঁটিতে গিয়েছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। সেখানেই নিজের বক্তৃতায় তিনি বলেন,
লস্কর-ই-তইবা এবং জইশ-ই-মহম্মদের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীকে উজ্জীবিত করার কাজে পাকিস্তান আইএমএফের দেওয়া ঋণের বড় অংশ ব্যবহার করতে পারে।
‘অপারেশন সিঁদুর’-এ পাকিস্তানের মুরিদকে এবং বাহাওয়ালপুরে জঙ্গিদের ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছিল ভারত। প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘ধ্বংস হওয়া ওই সন্ত্রাস-পরিকাঠামো ফের গড়ে তুলতে লস্কর এবং জইশের জন্য আর্থিক সহায়তার ঘোষণা করেছে পাক সরকার। যে মাসুদ আজহারের নাম রাষ্ট্রপুঞ্জের সন্ত্রাসবাদী-তালিকায় রয়েছে, তাকে দেওয়ার জন্য আমজনতার করের ১৪ কোটি টাকা খরচ করবে তারা।’’ এই সূত্রেই রাজনাথ বলেন, ভারতীয় করদাতাদের টাকা আইএমএফ হয়ে সরাসরি বা ঘুরপথে সন্ত্রাসের পরিকাঠামো তৈরির কাজে লাগছে, এটা ভারত বরদাস্ত করবে না। ১০০ কোটি ডলার ঋণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য আইএমএফ-কে আর্জি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘পাকিস্তানকে যে কোনও রকম আর্থিক মদত দেওয়াটা সন্ত্রাসে আর্থিক মদত দেওয়ার চেয়ে কম নয়।’’
আইএমএফের বৈঠকে ভোটাভুটিতে নয়াদিল্লির বিরত থাকা নিয়ে কংগ্রেস প্রশ্ন তোলায় কেন্দ্র বলেছিল, সেখানকার নিয়ম অনুযায়ী বিপক্ষে ভোট দেওয়ার কোনও সুযোগ ছিল না। ভারতকে হয় প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিতে হত, অথবা ভোটদানে বিরত থাকতে হত। আজ কংগ্রেস নেত্রী সুপ্রিয়া শ্রীনতে অভিযোগ তুলেছেন, ভোটাভুটির নিয়ম নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে সরকার। তিনি বলেন, ‘‘বিপক্ষে (নেগেটিভ) ভোট দেওয়ার বন্দোবস্ত রয়েছে। রাশিয়া তা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে। তাই সরকারেরও উচিত ছিল বিপক্ষে ভোট দেওয়া, যাতে পাকিস্তান একটা পয়সাও না পায়। যে দেশগুলো পাকিস্তানের মতো সন্ত্রাসবাদী দেশের পাশে দাঁড়াচ্ছে, তাদের জানা উচিত, এই টাকা কোন কাজে ব্যবহার করছে পাকিস্তান। কী ভাবে তারা সন্ত্রাসকে লালন করে ভারতের বিরুদ্ধে জঙ্গিদের কাজে লাগাচ্ছে।’’ কংগ্রেস নেত্রীর প্রশ্ন, পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ানো তুরস্ককে নিয়ে এত কথা হচ্ছে। কিন্তু আমেরিকা এবং চিন ভারতের সঙ্গে কী
করে চলেছে?
রাজনাথ অবশ্য এ দিন বলেছেন, ‘‘আমরা যে পদক্ষেপ করেছি, তা শুধু ‘ট্রেলার’ ছিল। দরকার পড়লে পুরো ছবি দেখাব। ১৮ মে পর্যন্ত সংঘর্ষবিরতি চলাকালীন পাকিস্তানের পরীক্ষা চলবে। তাদের আচরণের উন্নতি হলে ঠিক আছে। কোনও ঝামেলা করলেই কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হবে।’’ ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ বায়ুসেনার ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, সীমান্ত না পেরিয়েই পাকিস্তানের প্রতিটি কোণায় আঘাত হানতে
সক্ষম ভারতের যুদ্ধবিমান। শুধু বিদেশি নয়, ভারতের নিজের তৈরি যুদ্ধাস্ত্রও দুর্ভেদ্য। সংবাদ সংস্থা