পাকিস্তানকে একঘরে করছে বন্ধুরাই: দিল্লি
নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি, ১৬ মে: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কূটনৈতিকভাবে একঘরে করতে চলেছে পাকিস্তানকে। তাদের চিরাচরিত বন্ধু রাষ্ট্র সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, এমনকি চিনও ইসলামাবাদের থেকে দূরত্ব তৈরি করছে পহেলগাম হামলা এবং ‘অপারেশন সিঁদুর’ পরবর্তী পরিস্থিতির জেরে। শুক্রবার নয়াদিল্লির শীর্ষ সূত্রে এই দাবি করা হয়েছে।
গত কালই পরিকল্পনা অনুযায়ী রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের ১২৬৭ জঙ্গি নিষেধাজ্ঞা কমিটির কাছে পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন টিআরএফ-র সন্ত্রাসী কার্যকলাপ নিয়ে বিস্তারিত নথি দিয়েছে ভারত। লস্কর-ই-তইবার ছায়া সংগঠন টিআরএফ দু’বার পহেলগাম কাণ্ডের দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেওয়ার পরে নয়াদিল্লি উঠেপড়ে লেগেছে তাকে নিষিদ্ধ তালিকায় পাঠানোর জন্য। আজ কেন্দ্রীয় সরকারের সূত্রে বলা হচ্ছে, ‘রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষ থেকে যাচাই করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে, লস্কর-ই-তইবার মতো জঙ্গি সংগঠনগুলির সঙ্গে পাকিস্তানের যোগাযোগ কতটা। আসলে পাকিস্তান ধারাবাহিক ভাবে সন্ত্রাসবাদকে সহায়তা করে আসছে। পাক অধিকৃত কাশ্মীরে তৈরি হওয়া জঙ্গি পরিকাঠামোর সুযোগ নিয়ে ভারতে সন্ত্রাসবাদীদের পাঠানো হয়। নিরাপদ আশ্রয় বা স্বর্গোদ্যান গড়ে দেওয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় অর্থে সাহায্য করা হয়ে থাকে জঙ্গিদের। ভারতের এই উদ্বেগ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরা হয়েছে।’
কূটনৈতিক শিবিরের মতে, এমন নয় যে, এই কথাগুলি ভারত নতুন বলছে। কিন্তু নতুন সময়ে বলছে। পহেলগামে যে ভয়ঙ্কর হামলা চালিয়েছে জঙ্গিরা, তা কাশ্মীরের অতীতের সমস্ত নাশকতাকে ছাপিয়ে গিয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। তার প্রত্যুত্তরে ‘অপারেশন সিঁদুর’ পরবর্তী যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি তৈরি করে পাক সেনা, কাশ্মীরকে আন্তর্জাতিক আলোচনার টেবিলে ফেলতে চাইছে। এখন যুদ্ধবিরতি চলছে ঠিকই, কিন্তু পাকিস্তান সন্ত্রাসকে তাদের ভারত সংক্রান্ত নীতি হিসাবে ব্যবহার করবে না, এমন কোনও নিশ্চয়তাই নেই। বরং যে কোনও সময় ফের উত্তপ্ত হতে পারে সীমান্ত।
এই পরিস্থিতিতে সাউথ ব্লকের পক্ষ থেকে নিয়মিত ভাবে আগামী দিনগুলিতে পাকিস্তানের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে, বিভিন্ন মাধ্যমে আমেরিকা, ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়া এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সামনে তুলে ধরার কাজটি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য-পরিসংখ্যানকে প্রচারে নিয়ে আসাও হবে।
আজ সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, ‘রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞা কমিটির সঙ্গে দৌত্য করে ভারত সফলভাবে লস্কর এবং জেইউডি-র হাফিজ সঈদ, জাকি-উর-রহমান লকভির মতো শীর্ষ
জঙ্গি নেতাদের সন্ত্রাস তালিকাভুক্ত করেছে। এর পরেও ভারতকে নিশানা করা পাকিস্তানের অনেক জঙ্গি
সংগঠন এবং সন্ত্রাসবাদীকেও নিষিদ্ধ তালিকায় আনার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে ভারত। পরিষদের নিষেধাজ্ঞা তালিকায় থাকা ১১ জন জঙ্গি নেতার নাম, তাদের সংগঠন, পদ এবং পাকিস্তানে তাদের ডেরার বিশদ উল্লেখ করা হয়েছে।’
পাকিস্তানের সমান্তরাল সন্ত্রাস-অর্থনীতিরও বিশদ উল্লেখ করেছে ভারত। বলা হচ্ছে, পাকিস্তানে ৮৩টি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন রয়েছে, যাদের মধ্যে এখন সক্রিয় ৪৫টির মতো। তারা শুধু ভারতেই নয়, এশিয়া এবং তার বাইরেও সন্ত্রাসী কাজকর্ম চালায়। ইসলামাবাদের পক্ষ থেকে এদের ভরণপোষণ করা হয়। কাশ্মীর সন্ত্রাস চালিয়ে যাওয়ার ২৫ শতাংশের খরচ আসে সরাসরি পাকিস্তান থেকে। ২০ শতাংশ আসে বাইরের ইসলামি রাষ্ট্রের থেকে। ১৫ শতাংশ আসে মাদক চোরাচালান থেকে। এ ছাড়াও তিনটি অর্থের উৎস রয়েছে, যা সন্ত্রাসবাদকে পোক্ত করতে সহায়তা করছে। বেআইনি অস্ত্র ব্যবসা, জাল নোটের ব্যবসা, ব্যাঙ্ক ডাকাতি এবং লুটপাট।