জখম হয়। মাথা ফেটে যায়। চিকিৎসকেরা বলেছেন, রেটিনায় আঘাত লেগেছে।’’ সেই রাতে পুলিশের লাঠিতে পিঠে গুরুতর চোট পান মুর্শিদাবাদের শিক্ষক হিরণ দেবনাথ। তাঁর বক্তব্য, পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। তবু তাঁদের আন্দোলন চলবে।
আন্দোলনকারী শিক্ষক চিন্ময় মণ্ডল, মেহবুব মণ্ডলেরা জানালেন, নিজেদের যন্ত্রণা বিকাশ ভবনের কর্মীদের বোঝাতে তাঁদের এক দিন আটকে রাখার কথা ভেবেছিলেন তাঁরা। কিন্তু ওই কর্মীদের খাবার বা ওষুধপত্র ভিতরে নিয়ে যেতে বাধা দেননি। পুলিশ ওই কর্মীদের বাইরে বার করে আনার চেষ্টা
করলে শিক্ষকেরা তাঁদের পথ আটকান। তখন পুলিশ তাঁদের বেধড়ক পেটায়। চিন্ময় বলেন, ‘‘পুলিশের এক কর্তা বলেছেন,
পুলিশ তাদের প্রোটোকল অনুযায়ী কাজ করেছে। প্রোটোকল মানে কি
মেরে শিক্ষকদের হাত-পা ভেঙে দেওয়া? রেটিনা নষ্ট করে দেওয়া? ওই কর্তার প্রশ্ন, বিকাশ ভবনের কর্মীদের কী দোষ যে, তাঁদের
আটকে রাখা হবে? আমাদের প্রশ্ন, আমরাই বা কী দোষ করেছি যে,
দিনের পর দিন রাস্তায় বসে থাকতে হবে?’’ আন্দোলনকারীরাও পুলিশকে পাল্টা মেরেছেন, এমন অভিযোগ সম্পর্কে চিন্ময় বলেন, ‘‘আমাদের বেধড়ক পেটানো হলে আমরা কি কোনও প্রতিরোধই করব না? নিজেদের বাঁচাতে যেটুকু করার করেছি।’’
এ দিকে, ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’-এর সদস্যেরা জানিয়েছিলেন, তাঁদের মঞ্চ অরাজনৈতিক। কিন্তু এ দিন দুপুরে তিন বিজেপি বিধায়ক ওই মঞ্চে এসে বক্তৃতা দেন। সন্ধ্যায় আসেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আন্দোলনকারীরা জানান, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন যে কেউ তাঁদের
পাশে দাঁড়ালে তাঁরা তাঁর কথা শুনবেন। কিন্তু তাঁদের মঞ্চে কোনও রাজনৈতিক স্লোগান বা পতাকা ব্যবহার করা যাবে না।
এ দিন বিকাশ ভবনকে কার্যত দুর্গে পরিণত করা হয়েছিল। কর্মীদের উপস্থিতি ছিল খুব কম। যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরা বিকেল তিনটের মধ্যে বেরিয়ে যান। অনেকেই আগের রাতে ১১টার পরে বাড়ি ফিরেছেন। কয়েক জন অন্তঃসত্ত্বা মহিলাও আটকে পড়েছিলেন।
বিকাশ ভবনের কর্তারা এ দিন জানান, শিক্ষকেরা সেখানে গত দু’দিন ধরে আন্দোলন চালালেও তাঁদের দাবির কথা বিকাশ ভবনে এসে জানাননি। কোনও স্মারকলিপিও দেননি তাঁরা। এ দিন বিকেলে ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা
অধিকার মঞ্চ’-এর তরফে ‘ধিক্কার সভা’ করা হয়। তাতে চাকরিরত বহু শিক্ষকও যোগ দেন। তাঁদের মতে, শুধুমাত্র আন্দোলনকারীদের পিঠেই পুলিশের লাঠি পড়েনি, তা আসলে পড়েছে গোটা শিক্ষক সমাজের পিঠে। তাই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এই আন্দোলন গোটা রাজ্যে
ছড়িয়ে পড়েছে।
পুলিশের অবশ্য পাল্টা দাবি, বৃহস্পতিবার দিনভর চাকরিহারা শিক্ষকদের অনুরোধ করা
হয়েছে, যাতে সরকারি কর্মচারীদের কাজে বাধা বা তাঁদের বেরোনোর পথ আটকানো না হয়। অনেক
অনুনয়-বিনয় করেও কোনও কাজ হয়নি। সরকারি কর্মীদের যখন বার করে আনা হচ্ছিল,
তখনও গেট আটকে চড়াও হন চাকরিহারা শিক্ষকেরা। তাই যেটুকু প্রয়োজন ছিল, পুলিশ সেটুকু পদক্ষেপ করেছে।