পুলিশের
অসুস্থ ছিলেন। এক সন্তানসম্ভবা মহিলা অসুস্থ বোধ করছিলেন। আমরা তাঁদের বার করার চেষ্টা করলে বাধা এসেছে। মরিয়া হয়ে এক তরুণী মেজ়েনাইন ফ্লোর থেকে নীচে ঝাঁপ দেন। তাঁর পা ভেঙেছে। আমরা মাইকে বার বার ঘোষণা করলেও তাতে কর্ণপাত করা হয়নি। আটকে থাকা সরকারি কর্মীদের বার করে আনার চেষ্টা করতে গেলে আন্দোলনকারীদের একাংশ পুলিশের উপরে চড়াও হন। যাঁরা বেরোচ্ছিলেন, তাঁদের ধাক্কা দেওয়া হয়।’’ সুপ্রতিম বলেন, ‘‘প্রতিবাদ করার অধিকার যদি আন্দোলনকারীদের থেকে থাকে, সারা দিন কাজ করার পরে নিরাপদে বাড়িতে পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার অধিকারও তাঁদের ছিল। সেই অধিকারটুকু আমরা সুনিশ্চিত করতে গিয়েছিলাম।’’
প্রশ্ন করা হয়, প্রথমেই কেন পুলিশ কড়া হয়নি? দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়ালেও পুলিশকে কার্যত দর্শকের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে। সুপ্রতিম বলেন, ‘‘পুলিশ দর্শকও ছিল না, অসহায়ও ছিল না। পুলিশ সংযত ছিল। ধৈর্য এবং সংযমের চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়েছে পুলিশ।’’ এর পর তিনি জানান, ১০ দিন ধরে চাকরিহারা শিক্ষকেরা বিকাশ ভবনের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান-আন্দোলন করছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার প্রায় দু’-আড়াই হাজার আন্দোলনকারী পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে বিকাশ ভবনের ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। পুলিশ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশকেও মার খেতে হয়। ১৯ জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। বিকাশ ভবনের লোহার গেটও এক সময়ে ভেঙে ফেলা হয়। চাকরিহারাদের আবেগের প্রতি সহানুভূতি এবং সম্মান দেখিয়ে পুলিশ তার পরেও সংযত থেকেছে। সুপ্রতিম বলেন, ‘‘বলপ্রযোগ যদি পুলিশ করতে চাইত, তা হলে সেই সময়েই করা যেত, যখন গেটটা ভাঙা হচ্ছে। তা করা হয়নি। তাঁরা ঢুকেছেন, অবস্থান করেছেন, তার পরেও পুলিশ সাত ঘণ্টা ধরে তাঁদের বুঝিয়েছে।’’
বৃহস্পতিবারের ঘটনায় পুলিশের তরফে একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করা হয়েছে বলে জানানো হয়। সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, সরকারি কর্মীদের কাজে বাধা, তাঁদের আটকে রাখা-সহ একাধিক ধারায় মামলা করা হয়েছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করে পদক্ষেপ করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশের মাঝে হাফ প্যান্ট পরে, চটি পরে বহিরাগতরাও ছিলেন। এ ব্যাপারে অবশ্য শামিম বলেন, ‘‘হাফ প্যান্ট, চটির গল্প নেই। অনেকে হয়তো টি-শার্টে ছিলেন। কিন্তু সেটাও পুলিশেরই। হয়তো কয়েকজন সাদা পোশাকেও ছিলেন। কিন্তু তাই বলে তাঁরা বহিরাগত, এটা বলা যায় না।’’ বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্তের বিরুদ্ধেও বিকাশ ভবন চত্বরে গিয়ে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাঁর দলবল আন্দোলনকারীদের মারধর করেছে বলেও অভিযোগ। হেলমেট হাতে তাঁদের লোক-পেটানোর ভিডিয়ো নানা মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে সুপ্রতিমের ব্যখ্যা, ‘‘যে জনপ্রতিনিধির কথা বলা হচ্ছে, তিনি ওখানকার বাসিন্দা। তিনি বিকাশ ভবনে একটি কাজে যাচ্ছিলেন। তাঁর রাস্তা আটকানো হয়েছে। তাঁকে নিগ্রহ করা হয়েছে। প্রথম বেআইনি কাজ আন্দোলনকারীদের তরফে শুরু হয়েছে।’’ সব্যসাচীর ঘটনার পরে পুলিশের অতিসক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে ভবানীভবনের দাবি, ‘‘জনপ্রতিনিধি যাওয়ার আগেই ওখানে গেট ভাঙা হয়ে গিয়েছে। পুলিশ কড়া পদক্ষেপ করেছে রাত সাড়ে ৮টায়। ঘটনা পরম্পরাই বলে দিচ্ছে, জনপ্রতিনিধির ঘটনার সঙ্গে পুলিশের সক্রিয় হওয়া বা না হওয়ার কোনও ব্যাপার নেই।’’ শামিম শেষে বলেন, ‘‘আমাদের আন্দোলন আটকানোর বা পরিবর্তন করার কোনও পরিকল্পনা নেই। আজকেও আন্দোলন চলছে। আমাদের বক্তব্য, আপনাদের অধিকারের জন্য অন্য কারও অধিকার খর্ব করবেন না।’’