তরুণ এবং দুই লঞ্চকর্মীর তৎপরতায় বাঁচলেন দম্পতি
নিজস্ব সংবাদদাতা
কিছু দিন আগে একমাত্র মেয়ে কিডনির অসুখে মারা গিয়েছে। ১২ বছরের মেয়ের শোকে চরম হতাশায় ভুগছিলেন বাবা-মা। শনিবার সকালে তাই আত্মহননের সিদ্ধান্ত নিয়ে কলকাতাগামী লঞ্চ থেকে
মাঝগঙ্গায় ঝাঁপ দিয়েছিলেন সেই দম্পতি। তা দেখতে পেয়ে নিজেদের আর স্থির রাখতে পারেননি ওই লঞ্চেরই দুই কর্মী এবং ১৮ বছরের এক তরুণ যাত্রী। জীবন বাজি রেখে তিন জনই ওই দম্পতিকে বাঁচাতে মাঝগঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে জীবিত অবস্থায় তাঁদের উদ্ধার করেন।
শনিবার সকালে এমনই মানবিক ঘটনার সাক্ষী থাকলেন হাওড়ার সালকিয়ার বাঁধাঘাট এলাকার বাসিন্দারা। পুলিশ ও
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ বাঁধাঘাট থেকে একটি লঞ্চ আহিরীটোলা লঞ্চঘাট যাওয়ার জন্য ছাড়ে। ওই লঞ্চে থাকা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, লঞ্চ যখন প্রায় গঙ্গার
মাঝামাঝি, তখন আচমকা ওই দম্পতি লঞ্চের গেট খুলে একসঙ্গে ঝাঁপ দেন। গঙ্গায় ওই সময়ে ভাটা চলায় তাঁরা সেই টানে উল্টো দিকে ভেসে যেতে থাকেন। এই দৃশ্য দেখে অন্য যাত্রীরা লঞ্চ থামানোর জন্য চিৎকার শুরু করেন।
কিন্তু লঞ্চ থামার আগেই প্রথমে একটি বয়া নদীতে ছুড়ে ফেলে গঙ্গায় ঝাঁপ দেন কৃষ্ণ পাল নামে ১৮ বছরের এক তরুণ। তাঁকে ঝাঁপাতে দেখে লঞ্চের দুই কর্মী, অর্ঘ্য ঘোষ ও রামকুমার মাইতিও ঝাঁপিয়ে পড়েন নদীতে। তিন জন মিলে দম্পতিকে টানতে টানতে পাড়ে
এনে তোলেন। বাঁধাঘাটের অন্য কর্মীরা পুলিশে খবর দিলে মালিপাঁচঘরা থানা থেকে পুলিশ এসে দম্পতিকে
প্রথমে টিএল জয়সওয়াল
হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। পরে লিলুয়ার ভট্টগড়ের
বাসিন্দা ওই দম্পতির পরিবারের লোকজনকে ডেকে তাঁদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
ওই দম্পতির উদ্ধারকারীদের এক জন, বাঁধাঘাটের বাসিন্দা কৃষ্ণ নামে ওই তরুণ জানান, তিনি লঞ্চের কর্মী নন। কিন্তু ওই
লঞ্চঘাটেই থাকেন। রাতে লঞ্চেই ঘুমোন। ছোটবেলা থেকেই গঙ্গার বুকে বেড়ে ওঠা। তাই ভয়ডর নেই বললেই চলে। ঘটনার সময়ে এ দিনও লঞ্চের ছাদে ঘুমোচ্ছিলেন।
চিৎকারে জেগে উঠে ঘটনাটি দেখেই বয়া ছুড়ে দিয়ে নিজেও ঝাঁপিয়ে পড়েন।
ওই তরুণ বলেন, ‘‘কাউকে গঙ্গায় ভেসে যেতে দেখলে আমি আর থাকতে পারি না। ঝাঁপিয়ে পড়ি। এর আগেও বহু মানুষকে এ ভাবে বাঁচিয়েছি। এ দিন ওই
দম্পতিকে ভেসে যেতে দেখে তাই আর থাকতে পারিনি। ঝাঁপিয়ে পড়ি। তার পরে লঞ্চের কর্মীরা ঝাঁপিয়েছেন।’’ এই ঘটনার পরে হাওড়া সিটি
পুলিশের এক পদস্থ কর্তা জানান, যে তিন জন ওই দম্পতিকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জীবিত উদ্ধার
করেছেন, তাঁদের পুলিশের তরফে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।