বিকাশ ভবনের সামনে খোলা আকাশের নীচে বসেছে ক্লাস। নাম দেওয়া হয়েছে, ‘উদয়ন পণ্ডিতের পাঠশালা’। শনিবার এই অভিনব পাঠশালায় ক্লাস করেছে স্কুলপড়ুয়ারা। ক্লাস নিয়েছেন এসএসসি-র তালিকাভুক্ত চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
এ দিন বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ করুণাময়ী থেকে শিক্ষকদের সঙ্গে বিকাশ ভবন পর্যন্ত হেঁটে আসে জনা পঁচিশেক স্কুলপড়ুয়া। সঙ্গে অভিভাবকেরা, যাঁরা প্রায় সকলেই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা। তাঁরাও চাকরিহারা শিক্ষকদের পাশে আছেন। তাঁদেরই এক জন জানালেন, পড়ুয়ারা টিভিতে, খবরের কাগজে শিক্ষকদের নিগ্রহ দেখছে। তারা প্রশ্ন করছে, কেন শিক্ষকদের মারা হচ্ছে? তাই শিক্ষকেরা কী ভাবে ও কেন প্রতিবাদ করছেন, তা দেখাতেই বিকাশ ভবনের সামনে ছেলেমেয়েদের নিয়ে এসেছেন তাঁরা। তাঁরা মনে করেন, প্রতিবাদের ভাষা ছোট থেকেই শেখা উচিত।
চাকরিহারা শিক্ষক মেহবুব মণ্ডল বললেন, “আমরা চাইনি যে, ছোট ছোট পড়ুয়ারা এখানে আসুক। কিন্তু ওরা দেখেছে, যে শিক্ষকের পায়ে হাত দিয়ে ওরা প্রণাম করে, সেই শিক্ষকেরই পা ভেঙে গিয়ে রক্তাক্ত হয়েছে। ওরা নিজেদের ইচ্ছেতেই এসেছে।” পাঠশালায় আসা দুই খুদে পড়ুয়া বলল, “আমরা চাই, শিক্ষকেরা আবার স্কুলে ফিরে আসুন। টিভিতে দেখেছি, স্যরেরা কী ভাবে মার খেয়েছেন। কেন এমন হবে?”
পাঠশালার ক্লাসে গল্পের মাধ্যমে নীতি-শিক্ষা দিলেন দুই শিক্ষক-শিক্ষিকা, ডলি হালদার ও সামসুর শেখ। ‘দশের লাঠি একের বোঝা’ এবং ‘মিথ্যাবাদী রাখাল ও বাঘের গল্প’ বলা হল তাদের। প্রথম গল্পে ডলি একটি লাঠি নিয়ে দেখালেন, খুব সহজেই তা ভেঙে ফেলা গেল। কিন্তু অনেকগুলি লাঠি একত্রিত করলে তা আর ভাঙা যাচ্ছে না। ছোটদের বোঝালেন, ‘‘ভবিষ্যতে কোনও প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হলে তোমাদেরও একসঙ্গে লড়তে হবে। যেমন, বিনা দোষে চাকরি যাওয়ার পরে আমরাও একসঙ্গে লড়ছি। তাই এই লড়াইয়ে আমরাই জিতব। একতাই বল।’’
‘মিথ্যাবাদী রাখাল ও বাঘের গল্প’ শোনানোর পরে সামসুর পড়ুয়াদের বললেন, “কোনও পরিস্থিতিতেই মিথ্যা বলবে না। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেবে না। তা হলে তোমাদেরও ওই রাখাল বালকের মতো অবস্থা হবে। তুমি যদি মুখ্যমন্ত্রী বা শিক্ষামন্ত্রী হও আর মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দাও, তা হলে তোমাকে কী বলা হবে? মিথ্যাবাদী। বড় হয়ে যা-ই হও না কেন, কোনও পরিস্থিতিতেই মিথ্যা বলবে না। অর্ধসত্যও বলবে না। এমন কোনও প্রতিশ্রুতি দেবে না, যেটা পূরণ করতে পারবে না।’’
ক্লাসের শেষে চাকরিহারা শিক্ষকেরা ছোটদের বোঝান, কী ভাবে তাঁদের বার বার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে। তবু তাঁরা একসঙ্গে লড়াই করছেন। মিথ্যা না বলার শপথবাক্য পাঠ
করানো হয় পড়ুয়াদের। নীতিকথার শেষে প্রত্যেক পড়ুয়াকে কলম ও ফুল দেওয়া হয়।
এ দিন চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানান, তাঁদের আন্দোলন এখন চলবে। নিজেদের দাবিদাওয়ায় এখনও অনড় থাকছেন তাঁরা।