নির্মীয়মাণ বহুতলে পোড়া মৃতদেহ উদ্ধারে রহস্য বাগবাজারে
নিজস্ব সংবাদদাতা
মুখ থুবড়ে পড়ার মতো করে উল্টো হয়ে পড়ে রয়েছেন এক ব্যক্তি। ডান হাত ডান দিকে প্রসারিত। বাঁ হাত অনেকটা বেঁকে কোনও মতে মাটি ছুঁয়ে রয়েছে। এক ঝলক দেখলে মনে হয়, সেই হাত যেন ভেঙে বুকের নীচের দিকে ঢুকে রয়েছে। নিম্নাঙ্গের কোনও পোশাক অবশিষ্ট নেই। ঊর্ধ্বাঙ্গের পোশাকের বেশির ভাগটাই পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। পোড়া ক্ষত শরীরের নীচের অংশেও! শনিবার সকালে একটি নির্মীয়মাণ বহুতলের ভিতর থেকে এই অবস্থাতেই অগ্নিদগ্ধ এক ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার করল পুলিশ।
উত্তর কলকাতার নিবেদিতা লেনের এই ঘটনায় শ্যামপুকুর থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে। মৃত্যুর কারণ জানতে দেহের ময়না তদন্ত করানো হচ্ছে। পুলিশের দাবি, তার পরেই স্পষ্ট করে বলা সম্ভব, এটি খুনের ঘটনা, না কি অন্য কিছু। যদিও এই খবর লেখা পর্যন্ত মৃতের নাম-পরিচয় জানতে পারেনি পুলিশ। তবে, যে অবস্থায় মৃতদেহটি পাওয়া গিয়েছে, তাতে রহস্য তৈরি হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত এ দিন সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ। বহুতল নির্মাণের সময়ে চার দিকে যে ছাড় দেওয়া হয়, ওই বহুতলের সেই অংশেই এক ব্যক্তিকে জ্বলতে দেখেন স্থানীয়েরা। তাঁরাই এর পরে শ্যামপুকুর থানায় খবর দেন। ওই বহুতলের উল্টো দিকেই দোকান প্রত্যুষ সেনের। তিনি জানান, যে বহুতলের ঘটনা, সেটির পাশের বাড়ির এক জন ছাদে গিয়ে কোনও ভাবে ব্যাপারটি দেখে তাঁকে জানান। তিনিই এর পরে পুলিশে খবর দেন। নির্মীয়মাণ বহুতলের নিরাপত্তাকর্মীকে ফোন করে ডেকে আনা হয়। প্রত্যুষের দাবি, ‘‘পুলিশ যখন পৌঁছয়, তখনও আগুন জ্বলছিল। এক পুলিশকর্মী আগুন নেভান। কী করে ওই জায়গায় কেউ পৌঁছল, সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না।’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, চারতলা ওই বাড়িটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২২ সালে। বহুতলটির সমস্ত ফ্ল্যাট বিক্রি হয়ে গেলেও এখনও কেউ সেখানে থাকতে শুরু করেননি। প্রতিদিন সকালে এসে বহুতলের লোহার গেট খোলেন সরোজ ভুঁই নামে এক নিরাপত্তাকর্মী। সন্ধ্যায় তিনিই লোহার গেটে তালা লাগিয়ে ফিরে যান। শুক্রবারও তিনি তা-ই করেছিলেন বলে দাবি করেছেন। সরোজ বলেন, ‘‘সামনের দিকে ছোট গাড়ি বারান্দা থাকায় লোহার গেট তৈরি করা হয়েছিল। আশপাশে তো সবই বহুতল। তাই কী ভাবে এখানে কেউ ঢুকতে পারে, বুঝে উঠতে পারছি না।’’ এর পরে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আত্মহত্যা করার জন্য কেউ কি এমন ঘুপচি জায়গায় ঢুকে গায়ে আগুন দেবেন? যে ভাবে মৃতদেহটি পড়ে ছিল, তাতে আত্মহত্যা বলে ধরে নেওয়া শক্ত।’’
স্থানীয়দের দাবি, সকালে ঘটনাটি নজরে আসার আগে পর্যন্ত কেউ কোনও চিৎকার শোনেননি। অথচ, গায়ে গায়ে বাড়ি রয়েছে সেখানে। কেউ কিছু পোড়ার গন্ধও পাননি। ঘটনাস্থল থেকে একটি জ্বালানির কৌটো উদ্ধার হলেও সেটি কী ভাবে সেখানে পৌঁছল, তা স্পষ্ট হয়নি। কী দিয়ে আগুন ধরানো হয়েছিল, তা-ও স্পষ্ট নয়। পুলিশের ডাকে ঘটনাস্থলে পৌঁছনো চিকিৎসক অশোককুমার বসু বললেন, ‘‘আমার অনুমান, মৃতের বয়স পঁয়তাল্লিশের উপরে। পুড়ে মারা গিয়েছেন ওই ব্যক্তি। কিন্তু ময়না তদন্তের পরেই সমস্তটা বোঝা যাবে।’’ দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরীক্ষা করে কলকাতা পুলিশের হোমিসাইড শাখা। গিয়েছিল সায়েন্টিফিক উইং-ও। ময়না তদন্তের রিপোর্টের পাশাপাশি ঘটনাস্থলের ফরেন্সিক পরীক্ষার রিপোর্টের উপরেও নির্ভর করছেন তদন্তকারীরা।