বহুতলে আগুন, পর্যাপ্ত অগ্নি-নির্বাপণ বন্দোবস্তে রক্ষা
নিজস্ব সংবাদদাতা
বড়বাজারে অগ্নিকাণ্ডে ১৪ জনের মৃত্যুর ঘটনার ভয়াবহ স্মৃতির রেশ কাটতে না কাটতেই ফের শহরে আগুন-আতঙ্ক। শনিবার দুপুরে আগুন লাগল মিন্টো পার্কের একটি বহুতলে। অন্তত একশোটি অফিস রয়েছে সেখানে। প্রতিদিন কাজে আসেন অন্তত চার থেকে পাঁচ হাজার জন। পাশেই পেট্রল পাম্প, নামী বেসরকারি স্কুল, হাসপাতাল। কোনও মতে নামিয়ে আনা হয় বহুতলে উপস্থিত সকলকে। দমকলের আটটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কেউ হতাহত না হলেও কী থেকে আগুন লেগেছে, রাত পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র থেকে এই আগুন লেগে থাকতে পারে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন দুপুর ৩টে নাগাদ ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায় এ জে সি বসু রোডের মিন্টো পার্কের ওই বহুতল থেকে। দশতলা ভবনের ছ’তলা থেকে বেরোতে থাকা কালো ধোঁয়া মুহূর্তে বড়সড় আগুনের আকার নেয়। বাইরের দিকে থাকা তিনটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রে আগুন ধরে যায়। সেগুলির অংশ এবং গ্রিল ভেঙে গলে নীচের দিকে পড়তে শুরু করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন কড়েয়া থানা এবং আশপাশের বিভিন্ন থানার পুলিশকর্মীরা। এ জে সি বসু রোডের একাংশে যান নিয়ন্ত্রণ করা হয়। খবর যায় দমকলে। প্রথমে দু’টি ইঞ্জিন পাঠানো হলেও পরে দমকলের ইঞ্জিনের সংখ্যা বাড়ানো হয়।
এর মধ্যেই শুরু হয় বহুতল ফাঁকা করার কাজ। প্রথমে আগুনের নাগাল পাচ্ছিলেন না দমকলকর্মীরা। এ জে সি বসু রোড থেকে জল ছোড়া শুরু হয়। এর পরে কয়েকটি দমকলের ইঞ্জিন পাশের এ জে সি বসু উড়ালপুলের উপরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে আগুনে জল দেওয়া শুরু হয়। বহুতলের ছ’তলার ওই জায়গার উচ্চতা উড়ালপুলের কাছাকাছি। প্রায় ঘণ্টা দেড়েকের চেষ্টায় এর পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখা যায়, বহুতলের ভিতরের দিকের অংশে কর্মীদের ভিড়। তাঁরা জানান, সব অফিস এ দিনের মতো ছুটি ঘোষণা করে দিয়েছে। সকলকেই নিরাপদে নামিয়ে আনা গিয়েছে।
বহুতলের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিরঞ্জিত সরকার বলেন, ‘‘মোট ১৮০টি নথিভুক্ত অফিস রয়েছে এই বহুতলে। একশোটিতে এখন কাজ চলে। ছ’তলার ৫১৫ নম্বর ফ্ল্যাটে আগুন লেগেছিল। সেখানে একটি সংস্থার অফিস রয়েছে। ঘটনার সময়ে সেখানে দু’জন কর্মী ছিলেন। তাঁরাই ধোঁয়া দেখে নীচে নেমে এসে আমাদের ফোন করেন। আমরা সকলে মিলে এর পরে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছি। তার পরে দমকল এসেছে।’’ চিরঞ্জিত জানান, সময় মতোই কাজ করেছে স্প্রিঙ্কলার, বেজেছে ফায়ার অ্যালার্ম। বাবাজি বিসওয়াল নামে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা আর এক কর্মী বলেন, ‘‘ছাদে এক লক্ষ লিটার এবং একতলায় ৩৬ হাজার লিটার জলের ব্যবস্থা রয়েছে। সেখান থেকে প্রতি তলে জল নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। সেই জল দিয়েই আমরা আগুন অনেকটা আটকে রাখতে পেরেছিলাম।’’
এ দিন আগুন লাগার পরে দরজা ভেঙে ঘটনাস্থলে ঢুকে জল দিতে দেখা গিয়েছে তাপস নন্দী নামে আর এক কর্মীকে। তিনি জানান, অন্তত ১১টি অগ্নি-নির্বাপণ সিলিন্ডার ব্যবহার করা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘বিপদের সময়ে ব্যবহার করা যাবে ভেবে
যা কিছু লাগানো হয়েছিল, সমস্তটাই কাজে লেগেছে। ভাল ব্যবস্থা থাকলে যে বিপদ এড়ানো যায়, সেটা প্রমাণ হল।’’