টেক্সাস বললে চোখে ভেসে ওঠে জনবিরল ধু ধু রুক্ষ প্রান্তর, তেজি ঘোড়ার পাল, বেপরোয়া কাউবয়দের ছবি। অপরাধ ও রহস্যসাহিত্যের জগতে টেক্সাসের কন্যা প্যাট্রিসিয়া হাইস্মিথের আবির্ভাব হয়েছিল শক্তিশালী, বেপরোয়া এক ঘোড়সওয়ারের মতোই। গোয়েন্দাকাহিনির বাইরে অপরাধ-সাহিত্যের যে বিস্তৃত জগৎ আছে, ঘরানা অনুযায়ী যা মূলত থ্রিলারের পর্যায়ে পড়ে। সেখানে অপরাধ কে, কেন, কী ভাবে ঘটাল এবং তার পরে কী ঘটল তার বিবরণটাই মুখ্য। যে বিরল ক্ষমতার লেখকদের হাতে থ্রিলারও সার্থক সাহিত্য হয়ে ওঠে, প্যাট্রিসিয়া হাইস্মিথ ছিলেন সেই গোত্রের লেখিকা। তাঁর লেখা ২২টি উপন্যাসের মধ্যে দুটো বাদে সবগুলোই থ্রিলার। বহু ছোটগল্প লিখেছেন। সেখানেও বেশির ভাগ গল্পই অপরাধকেন্দ্রিক।
অপরাধ-সাহিত্যের সর্বকালের উজ্জ্বলতম তারকাদের অন্যতমা প্যাট্রিসিয়া হাইস্মিথের শুরুটা হয়েছিল সাধারণ ভাবে। স্কুলে টিচার অ্যাসাইনমেন্ট করতে দিতেন, লেখালিখিতে হাত পাকানো শুরু হয় তখন থেকেই। ১৫ বছর বয়সে একটা বড় কবিতা লেখেন, যদিও তা ছাপা হয়নি। কলেজে পড়ার সময় ম্যাগাজ়িনে টুকটাক লিখতেন। কলেজ পাশ করার পর কিছু দিন কমিকসের জন্য গল্প লিখতেন প্যাট্রিসিয়া, তার ফাঁকে ফাঁকেই লিখতেন ছোটগল্প। ‘হার্পার’স বাজ়ার’ পত্রিকায় বেরোয় প্রথম ছোটগল্প ‘দ্য হিরোইন’, যা ১৯৪৬ সালে ও’হেনরি পুরস্কার পায়। তখন তাঁর বয়স ২৫ বছর। কয়েক বছর পরে নিউ ইয়র্ক শহরে লেখা শুরু করেন তাঁর প্রথম সম্পূর্ণ ও প্রকাশিত উপন্যাস ‘স্ট্রেঞ্জার্স অন আ ট্রেন’। বইটা বেরোল ১৯৫০ সালে। হু হু করে বিক্রি হল সেই বই। পরের বছর বেরোল সেই বই নিয়ে হিচককের সিনেমা। সুপারহিট হল সেটাও।
এর দু’বছর পরে বেরোল ক্লেয়ার মর্গ্যান ছদ্মনামে লেখা ‘প্রাইস অব সল্ট’, যা প্যাট্রিসিয়া হাইস্মিথের অন্যতম সেরা সাহিত্যকীর্তি। ‘দ্য ব্লান্ডারার’ এবং তার দু’বছর পরে ১৯৫৫ সালে অতি বিখ্যাত ‘দ্য ট্যালেন্টেড মিস্টার রিপ্লে’। অন্য আর কিছু যদি না-ও লিখতেন তিনি, তা হলেও শুধু এই বইয়ের জন্যই অমর হয়ে থাকতেন প্যাট্রিসিয়া হাইস্মিথ। এর পর আসে আর এক বিখ্যাত উপন্যাস ‘ডিপ ওয়াটার’। এখন যাকে বলে ‘ডোমেস্টিক থ্রিলার’, তার সার্থক সূচনা হয়েছিল ‘ডিপ ওয়াটার’-এ। রিপ্লেকে নিয়ে পরের বই ‘রিপ্লে আন্ডারগ্রাউন্ড’ বেরোল ১৫ বছর পর ১৯৭০-এ। ১৯৭৪ আর ১৯৮০-তে বেরোল ‘রিপ্লে’স গেম’ আর ‘দ্য বয় হু ফলোড রিপ্লে’। তার ১১ বছর পরে বেরোল রিপ্লে সিরিজ়ের শেষ বই ‘রিপ্লে আন্ডার ওয়াটার’। তবে প্রথম বই ‘দ্য ট্যালেন্টেড মিস্টার রিপ্লে’ ছিল অতুলনীয়।
সাহিত্যের জগতে প্যাট্রিসিয়া হাইস্মিথ ছিলেন ব্যতিক্রমী। তাঁর বেশির ভাগ বই বেস্টসেলার হয়েছে, তবু কখনও ধরাবাঁধা ফর্মুলা অনুসরণ করেননি তাঁর লেখায়। তাঁর সব লেখাই স্পর্শ করেছে মানুষের মনের গভীর, শীতল অন্ধকারকে। প্লটের নতুনত্ব, ছকভাঙা ব্যতিক্রমী সব চরিত্র এবং তাদের জটিল মানসিকতার নিপুণ উদ্ঘাটন প্যাট্রিসিয়াকে অপরাধ-সাহিত্যিকদের জগতে বিশিষ্টতা দিয়েছিল। তাঁর লেখার ভক্ত ছিলেন জুলিয়ান সাইমন্সের মতো অপরাধ-সাহিত্যের বিদগ্ধ বিশেষজ্ঞ, গ্রেহাম গ্রিন আর গোরে ভিডালের মতো অগ্রগণ্য লেখক।
বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে তাঁর লেখা ছোটগল্পগুলো। ছোটগল্পের বেশ কিছু সঙ্কলনের মধ্যে একদম অন্য রকম ‘দ্য অ্যানিমাল লাভার্স বুক অব বিস্টলি মার্ডার্স’। এই বইয়ের বেশির ভাগ গল্প এক-একটা পশুর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখা, যেখানে তারা বিভিন্ন ভাবে মানুষের উপর প্রতিশোধ নেয়। এই সঙ্কলনেই আছে বিখ্যাত গল্প ‘কোরাস গার্ল’স অ্যাবসোলিউটলি ফাইনাল পারফর্ম্যান্স’, যেখানে খেলা দেখানো এক বুড়ো হাতি আর সহ্য করতে না পেরে তার অত্যাচারী মাহুতকে খুন করে। প্যাট্রিসিয়া হাইস্মিথকে অনেকেই মানববিদ্বেষী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ‘দ্য অ্যানিমাল লাভার্স বুক অব বিস্টলি মার্ডার্স’-এর গল্পগুলো সেই তকমাকেই আরও পাকা করে, যা হয়তো পুরোপুরি ভুলও নয়। তিনি ইহুদি-বিদ্বেষী এবং জাতিবিদ্বেষী ছিলেন। আবার ভুললে চলবে না, তিনি মানবাধিকার সংস্থা ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’-এরও সদস্যা ছিলেন।
প্যাট্রিসিয়া হাইস্মিথের যে দুটো উপন্যাস ঠিক থ্রিলার নয়, তার একটা হল ‘আ প্রাইস অব সল্ট’, প্যাট্রিসিয়ার দ্বিতীয় বই। ত্রিশ-পেরোনো এক বিবাহিতা যুবতী আর এক সদ্য কৈশোর-উত্তীর্ণা তরুণীর ভালবাসার গল্প। নারীর সমপ্রেমের গল্প তখন অনেক লেখা হলেও সেগুলো খুব সাধারণ মানের হত। প্যাট্রিসিয়ার লেখা ছিল অনেক উঁচু স্তরের এবং এই গল্পের পরিণতি বিয়োগান্তক ছিল না, যা সেই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে বিরল ব্যতিক্রম। অন্যটা ‘এডিথ’স ডায়েরি’। স্বামীবিচ্ছিন্না এডিথের জীবনের কোনও স্বপ্নই পূর্ণ হয়নি। একমাত্র ছেলে মানুষ হয়নি। তার নানা বদগুণ এবং সে নেশাসক্ত। মাঝবয়সি এডিথ আশ্রয় খুঁজে নেয় ডায়েরি লেখার মধ্যে, যেখানে সে সম্পূর্ণ কাল্পনিক এক পছন্দসই জগৎ গড়ে তোলে, যে জগতে তার ছেলে ভদ্র এবং জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত। এই ডায়েরি লিখতে লিখতে ক্রমশ বাস্তবের সঙ্গে যোগ হারিয়ে ফেলে এডিথ। এই গল্পের পরিণতি অবশ্য দুঃখের।অনেক সমালোচকের মতে ‘এডিথ’স ডায়েরি’ প্যাট্রিসিয়া হাইস্মিথের সেরা সাহিত্যকীর্তি। প্যাট্রিসিয়া হাইস্মিথ নিজেও সারা জীবন ডায়েরি লিখেছেন। সে সব ডায়েরি আবিষ্কার হয়েছিল তাঁর মৃত্যুর বেশ কিছু বছর পরে, চাদর-তোয়ালে রাখার কাবার্ডের মধ্যে থেকে। ৫৬ টা ডায়েরিতে প্রায় ৮০০০ পাতা জুড়ে হাইস্মিথ লিখে গেছেন তাঁর ভাবনাচিন্তা, পছন্দ-অপছন্দ, প্রেম-ভালবাসার কথা। তার মধ্যে ১৯৪১ থেকে ১৯৫০ পর্যন্ত সময়ে লেখা ডায়েরি কিছুটা সম্পাদনা করে বছরখানেক আগে প্রকাশিত হয়েছে ‘প্যাট্রিসিয়া হাইস্মিথ: হার ডায়েরিজ় অ্যান্ড নোটবুকস: দ্য নিউ ইয়র্ক ইয়ারস’ নামে। বাকি বিপুল পরিমাণ ডায়েরি প্রায় পুরোটাই অপ্রকাশিত।
প্রধানত অপরাধ-সাহিত্যের কারবারি হলেও প্যাট্রিসিয়া নিজেকে সাসপেন্স-কাহিনির লেখিকা মনে করতেন। ধারালো, ঈষৎ নিস্পৃহ গদ্যে লেখা তাঁর উপন্যাসে ঘটনার ঘনঘটা বা রুদ্ধশ্বাস গতি বা ধুন্ধুমার অ্যাকশন অনুপস্থিত। তাঁর বেশির ভাগ লেখায় উৎকণ্ঠার উপস্থিতি ছাইচাপা আগুনের আঁচের মতো মৃদু ও বিরতিহীন। গ্রাহাম গ্রিন তাঁকে বলেছিলেন ‘কুইন অব অ্যাপ্রিহেনশন’ আর মার্ক বিলিংহাম তাঁকে বলেছেন ‘কুইন অব সাসপেন্স’।
লেখালিখির জন্য যে সব সম্মান ও স্বীকৃতি পেয়েছিলেন তিনি, তার মধ্যে দু’টি সম্মান বিরল। এক, ‘দ্য ট্যালেন্টেড মিস্টার রিপ্লে’-র জন্য ‘এডগার স্ক্রোল’ বা ‘স্পেশাল এডগার’ এবং ব্রিটেনের ‘ডিটেকশন ক্লাব’-এর সদস্যপদ। মিস্ট্রি রাইটার্স অব আমেরিকা প্রতি বছর অপরাধ-সাহিত্যের সেরা লেখাকে ‘এডগার’ পুরস্কার দেয়। এই ধারার সাহিত্যের অন্যতম সেরা সম্মান এই পুরস্কার। প্যাট্রিসিয়ার প্রথম বই ‘স্ট্রেঞ্জার্স অন আ ট্রেন’ এবং ছোটগল্প ‘দ্য টেরাপিন’-ও মনোনীত হয়েছিল এডগারের জন্য।
১৯৩০ সালে ব্রিটেনে রহস্যকাহিনির রথী-মহারথীরা মিলে তৈরি করেছিলেন ‘ডিটেকশন ক্লাব’। অগ্রণী ভূমিকা ছিল আগাথা ক্রিস্টি, ডরোথি এল সেয়ার্স, ব্যারোনেস ডি অর্কজি এবং আরও কয়েক জনের। প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হলেন জি কে চেস্টারটন। এই ক্লাবে সাধারাণত অ-ব্রিটিশ কাউকে সদস্য নির্বাচিত করা হত না। কিন্তু ব্যতিক্রম হিসেবে দু’জন আমেরিকান সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তাঁদের লেখার গুণ ও প্রভাবের জন্য। প্রথমে জন ডিক্সন কার এবং তাঁর পরে প্যাট্রিসিয়া হাইস্মিথ। ডিটেকশন ক্লাব আজও আছে। এবং আজও সেই ক্লাবের আমেরিকান সদস্য বলতে ওই দুজনই। রেমন্ড চ্যান্ডলার, ডেশিয়েল হ্যামেট বা এড ম্যাকবেইনের মতো অপরাধ-সাহিত্যের আমেরিকান দিকপালরাও এই সম্মান পাননি।
তবে সবার সেরা স্বীকৃতি এসেছিল তাঁর মৃত্যুর ১৩ বছর পরে, ২০০৮ সালে। সেই বছর ‘দ্য টাইমস’ প্রকাশ করল সর্বকালের সর্বসেরা ৫০ জন ক্রাইম-লিখিয়ের একটি তালিকা। সেখানে এক নম্বর নামটাই প্যাট্রিসিয়া হাইস্মিথের। তালিকায় দ্বিতীয় নাম জর্জ সিমেনোন। আগাথা ক্রিস্টির নাম তিন নম্বরে, সাতে আর্থার কোনান ডয়েল; আর শেষ নাম সারা পেরেটস্কি। এই ধরনের তালিকা সাধারণত বিতর্কের জন্ম দেয়। কিন্তু এক নম্বরে প্যাট্রিসিয়া হাইস্মিথের নাম নিয়ে কোনও বিতর্ক কখনও হয়নি।
প্যাট্রিসিয়া হাইস্মিথের লেখা এতটাই ছকভাঙা হত যে অনেক সময়ে প্রকাশক তা বাতিল করে দিতেন। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রত্যাখ্যান এসেছিল ‘দ্য টু ফেসেস অব জানুয়ারি’-র ক্ষেত্রে। প্রথম পাণ্ডুলিপি নাকচ করে দেন প্যাট্রিসিয়া হাইস্মিথের আমেরিকান প্রকাশক। তাঁর নির্দেশমতো পরিবর্তন, পরিমার্জন করে আবার লেখা জমা দিলেন, আবারও বাতিল। এর কিছু দিন পরে ইংল্যান্ডে গিয়ে তাঁর ব্রিটিশ প্রকাশককে জানালেন নতুন বই নিয়ে সমস্যার কথা। সেই প্রকাশক দেখতে চাইলেন বইটা। পছন্দও হল। বেরোল ‘দ্য টু ফেসেস অব জানুয়ারি’। এবং বছরের সেরা বিদেশি ক্রাইম-উপন্যাস হিসেবে পেল ব্রিটেনের ক্রাইম রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া ‘সিলভার ড্যাগার’। অপরাধসাহিত্যের দুনিয়ায় এই ড্যাগার পুরস্কার এডগার পুরস্কারের সমতুল্য।
‘স্ট্রেঞ্জার্স অন আ ট্রেন’ ছাড়াও প্যাট্রিসিয়া হাইস্মিথের অনেক বই নিয়ে সিনেমা হয়েছে। অতি বিখ্যাত ‘দ্য ট্যালেন্টেড মিস্টার রিপ্লে’ নিয়ে প্রথম সিনেমা হয়েছিল ফ্রান্সে ১৯৬০ সালে, যার ইংরেজি ভার্সনের নাম ছিল ‘পার্পল নুন’। ফরাসি তারকা অ্যালাঁ দেলঁ ছিলেন রিপ্লের ভূমিকায়। বইটা বেরোনোর চার দশক পরে হলিউডে তৈরি হল সিনেমা, এ বার রিপ্লের ভূমিকায় নামলেন ম্যাট ডেমন। ‘দিস সুইট সিকনেস’ নিয়েও জার্মানি ও ফ্রান্সে সিনেমা হয়েছিল। ওই গল্প নিয়ে ‘অ্যালফ্রেড হিচকক আওয়ার’-এর একটা পর্ব তৈরি হয়েছিল ‘অ্যানাবেল’ নামে। ২০১৫ সালে হলিউডে ‘আ প্রাইস অব সল্ট’ সিনেমা হয়েছিল ‘ক্যারল’ নামে। সেই সিনেমা এত বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় হয়েছিল যে বইটা এখন ছাপা হয় ‘ক্যারল’ নামে।
লেখিকা হিসেবে নাম, যশ, অর্থ সব পেলেও, প্যাট্রিসিয়ার ব্যক্তিগত জীবন ছিল অশান্তিপূর্ণ এবং নিঃসঙ্গ। বিড়ম্বনার শুরু তাঁর জন্মের আগে থেকে। জন্মের কয়েক সপ্তাহ আগে বিবাহবিচ্ছেদ হয় তাঁর বাবা জে বার্নার্ড প্লাংম্যান এবং মা মেরি কোটসের। ক্ষোভে, হতাশায় মেরি চেষ্টা করেছিলেন তারপিন তেল খেয়ে গর্ভের সন্তানকে নষ্ট করে দিতে, সফল হননি। ১৯২১ সালের ১৯ জানুয়ারি জন্ম হয় প্যাট্রিসিয়া হাইস্মিথের। টেক্সাসের ফোর্টওয়ার্থে কাটে শৈশব। মেরি ছিলেন কমার্শিয়াল আর্টিস্ট, কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। প্যাট্রিসিয়ার দিদিমাই তাঁকে শৈশবে মানুষ করেছিলেন। তাঁর তিন বছর বয়সে মেরি বিয়ে করলেন স্টিফেন হাইস্মিথকে। ছ’বছর বয়সে বাবা-মায়ের সঙ্গে টেক্সাস থেকে নিউ ইয়র্ক চলে আসেন। পদবি গ্রহণ করলেও সৎবাবার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভাল ছিল না, বরং পরে জন্মদাতা বাবার সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। নিজের বই ‘এ ডগ’স র্যানসম’ উৎসর্গ করেছিলেন তাঁকে। লিখেছিলেন, ‘ফর মাই ফাদার জে বার্নার্ড প্লাংম্যান, উইথ অ্যাফেকশন’। মাকে ভালবাসতেন, আবার অপছন্দও করতেন। প্যাট্রিসিয়া ‘দিস সুইট সিকনেস’ উৎসর্গ করেছিলেন তাঁর মাকে। উৎসর্গপত্রে শুধু লেখা ছিল, ‘টু মাই মাদার’।
ব্যক্তিগত জীবনে পশুপ্রেমী ছিলেন প্যাট্রিসিয়া। বেশ কিছু পোষ্য ছিল তাঁর। এর মধ্যে কুকুর বেড়ালের মতো সাধারণ পোষ্য যেমন ছিল, তেমনই ছিল শামুকের মতো বিরল প্রাণীও। শ’তিনেক শামুক পুষেছিলেন তিনি। শোনা যায়, এক বার এক বৃহদাকার হাতব্যাগের ভিতরে লেটুস পাতার উপর বসিয়ে দেড়শো শামুক নিয়ে তিনি এক পার্টিতে গিয়েছিলেন। আবার, পোষা বেড়াল স্পাইডারকে উৎসর্গ করেছিলেন ‘দ্য গ্লাস সেল’ উপন্যাস।
জীবনে বহু সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন তিনি। তাঁর ভালবাসার মানুষদের মধ্যে নারী আর পুরুষ দুই-ই ছিল, ছিলেন এক জন সমকামী পুরুষও। তবে কোনও সম্পর্কই দেড়-দু’বছরের বেশি টানেননি। তীব্র মানসিক টানাপড়েন এবং নানা স্ববিরোধিতা তাঁকে কখনও থিতু হতে দেয়নি। ১৯৯৫ সালে ৭৪ বছর বয়সে অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া আর ফুসফুসের ক্যানসারের যৌথ আক্রমণে সুইটজ়ারল্যান্ডের লোকার্নোতে তাঁর মৃত্যুর ৩০ বছর পরে আজও যখন ওটিটি সিরিজ় তৈরি হয় তাঁর লেখা নিয়ে, তা হইচই ফেলে দেয়। আজও অপরাধ-সাহিত্যের তুখোড় অ্যান্টি-হিরোদের নিয়ে যখন আলোচনা হয়, টমাস রিপ্লের জুড়ি পাওয়া যায় না। তাঁর লেখার তুলনা হয় দস্তয়েভস্কির সঙ্গে, আবার তাঁর লেখা প্রভাবিত করে গিলিয়ান ফ্লিনের মতো এ কালের ক্রাইম-লেখকদের। এখানেই প্যাট্রিসিয়া হাইস্মিথ এগিয়ে যান বেশির ভাগ ক্রাইম সাহিত্যিককে ছাড়িয়ে।