১৭ মে: আমেরিকা, রাশিয়া ও চিনের পরে এ বার ব্রিটেন। ভারত ও পাকিস্তানকে আলোচনার টেবিলে আসার জন্য এ বার আহ্বান জানালেন ব্রিটিশ বিদেশমন্ত্রী। এবং দাবি করলেন, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সংঘর্ষবিরতি যাতে দীর্ঘমেয়াদি হয়, তার জন্য আমেরিকার সঙ্গে এক যোগে চেষ্টা চালাচ্ছে ব্রিটেন। চেষ্টা করা হচ্ছে, দুই পরমাণু শক্তিধর পড়শি দেশ যাতে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটিয়ে নিতে পারে।
ব্রিটিশ বিদেশমন্ত্রীর এই মন্তব্যে আরও অস্তস্তি বাড়ল নয়াদিল্লির। পহেলগামে জঙ্গি হামলার দু’সপ্তাহের মাথায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা ও সীমান্তের ও-পারে জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করতে হামলা চালায় ভারতীয় সেনা। ভারত আগাগোড়া বলে এসেছে, পাকিস্তান জঙ্গিদের মদত দিয়ে এসেছে, সে দেশের জমি ব্যবহার করতে দিয়েছে মাসুদ আজ়হারের মতো জঙ্গিকে ঘাঁটি তৈরি করতে। তাই সাধারণ মানুষের জনবসতি এড়িয়ে শুধু জঙ্গি ঘাঁটি লক্ষ্য করেই হামলা চালিয়েছে ভারতীয় সেনা। কোন জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছে এবং কোন কোন আন্তর্জাতিক তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসবাদী ভারতীয় হামলায় নিহত হয়েছে, তার তালিকাও প্রকাশ করে নয়াদিল্লি।
ভারতের আশা ছিল, পহেলগামে জঙ্গি হানায় ২৬ জন সাধারণ মানুষের মৃত্যু ও তার পরে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর ফলে আন্তর্জাতিক দুনিয়ার সামনে পাকিস্তানের ভাবমূর্তি যারপরনাই ক্ষুণ্ণ হবে। কিন্তু বাস্তবে তা আদপেই হয়নি। উল্টে আমেরিকা-সহ বিভিন্ন দেশ ভারতকে আলোচনায় বসার জন্য পরোক্ষে চাপ দিতে শুরু করে। যে তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন ব্রিটেন।
দু’দিনের সফরে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন ব্রিটিশ বিদেশমন্ত্রী। রাজধানী ইসলামাবাদে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “সংঘর্ষবিরতি দীর্ঘমেয়াদি করতে, দু’দেশের মধ্যে আলোচনা শুরু করতে এবং আস্থাবর্ধক পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে আমেরিকার সঙ্গে একযোগে কাজ করছি আমরা” তাঁর কথায়, “আমরা এমন দু’টি দেশের কথা বলছি যাদের মধ্যে সংঘাতের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, তারা সাম্প্রতিক অতীতে পরস্পরের সঙ্গে প্রায় কোনও কথাই বলেনি। ফলে আমাদের চেষ্টা চালাতে হবে যাতে উত্তেজনা আর না বাড়ে এবং সংঘর্যবিরতি বজায় থাকে।” ভারত যে সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত রেখেছে সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ল্যামির দাবি, “সব পক্ষকে আন্তর্জাতিক চুক্তির সব শর্ত মেনে চলতে আর্জি জানাচ্ছি।”
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম থেকেই দাবি করে আসছেন, ভারত-পাকিস্তানের সংঘর্যবিরতি আমেরিকার মধ্যস্থতাতেই হয়েছে। ভারত বিবৃতি জারি করে ট্রাম্পের এই দাবি নস্যাৎ করে দিলেও নিজের অবস্থান থেকে সরেননি ট্রাম্প। এমনকি এ-ও বলেছেন, “আমি চাইব যে পাকিস্তান ও ভারত একসঙ্গে নৈশভোজে বসুক।” পাকিস্তানের সঙ্গে বৈঠকে বসার জন্য চাপ দিতে শুরু করে পাক-বন্ধু চিনও। তার পরে রুশ বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মারিয়া জ়াখারোভাও ভারত-পাকিস্তান আলোচনার টেবিলে বসলেই সমস্যার সমাধান সম্ভব, এ রকম মন্তব্য করেন।
পাকিস্তান চিরকালই আলোচনার টেবিলে ভারতকে নিয়ে এসে কাশ্মীর প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলতে আগ্রহী। অপারেশন সিঁদুরের পরে সেই প্রসঙ্গ বারবার তুলেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ ও বিদেশমন্ত্রী ইশক দার। ফলে আমেরিকা, চিন, রাশিয়া ও ব্রিটেন যে বারবার দ্বিপাক্ষিক আলোচনার কথা বলছে, তাতে লাভ হচ্ছে তাদেরই। অন্য দিকে, নয়াদিল্লি চিরকালই সন্ত্রাসবাদ থেকে কাশ্মীরের প্রসঙ্গকে আলাদা রাখতে চেয়েছে। ফলে ট্রাম্প বা ল্যামির মন্তব্য তাদের অস্বস্তি বাড়াচ্ছে।
অপারেশন সিঁদুরের পরেও নরেন্দ্র মোদী সরকার এই কূটনৈতিক প্যাঁচে পড়ে যাওয়ায় কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়রাম রমেশের কথায়, ‘‘পাকিস্তান সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে, আর গোটা বিশ্ব ভারতকে কথা বলার জন্য চাপ দিচ্ছে। এটা বিশ্বগুরুরই ব্যর্থতা।”