নয়াদিল্লি, ১৭ মে: পহেলগামের সন্ত্রাসবাদী হামলার জবাবে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পরে ভারতের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর নীতি বোঝাতে মোদী সরকার রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলি-সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রে সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু সেই প্রতিনিধি দলে কারা থাকবেন, তা নিয়ে মোদী সরকারের সঙ্গে বিরোধীদের সংঘাত বেধে গেল। কংগ্রেস নেতৃত্ব মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তাঁদের না জানিয়ে শশী তারুরকে একটি প্রতিনিধি দলের নেতা করে দেওয়ায় অভিযোগ তুলে বলল, সরকার অসততা করছে। যখন সন্ত্রাসের প্রশ্নে বিরোধীরা সরকারের পাশে থাকার বার্তা দিচ্ছে, তখন মোদী সরকার কংগ্রেসের মধ্যে ফাটল ঘরাতে ব্যস্ত।
মোদী সরকার শনিবার সকালে ঘোষণা করেছে, সাতটি সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাবে। এই সাতটি দলের নেতৃত্বে থাকবেন কংগ্রেসের শশী তারুর, এনসিপি (শরদ পওয়ার)-এর সুপ্রিয়া সুলে, বিজেপির রবিশঙ্কর প্রসাদ, বৈজয়ন্ত পণ্ডা, জেডিইউ-র সঞ্জয় কুমার ঝা, ডিএমকে-র কানিমোঝি, শিবসেনা (শিন্দে)-র শ্রীকান্ত শিন্দে।
সরকারের এই ঘোষণার পরে কংগ্রেস অভিযোগ তুলেছে, সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু শুক্রবার সকাল দশটায় মল্লিকার্জুন খড়্গে, রাহুল গান্ধীকে ফোন করে বলেছিলেন, কংগ্রেস কাদের পাঠাতে চায়। দলের মধ্যে আলোচনার পরে রাহুল গান্ধী তাঁকে চিঠি লিখে চার জনের নাম পাঠান। সেখানে আনন্দ শর্মা, গৌরব গগৈ, সৈয়দ নাসির হুসেন ও অমরেন্দ্র রাজা ব্রারের নাম ছিল। কিন্তু মোদী সরকার তার পরে শশী তারুরের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে একটি প্রতিনিধি দলের নেতা করে দিয়েছেন। এ ছাড়া প্রতিনিধি দলেও সরকার ওই চারটি নামের মধ্যে থেকে শুধু আনন্দ শর্মাকে রেখেছে। বাকি তিনজনকে নেওয়া হয়নি। অথচ কংগ্রেস নাম প্রস্তাব না করলেও মণীশ তিওয়ারি, সলমন খুরশিদ, অমর সিংহকে রাখা হয়েছে। কংগ্রেসকে অস্বস্তি ফেলে তারুর বলেছেন, তাঁকে সরকার এই দায়িত্ব দেওয়ায় তিনি গর্বিত। কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ অভিযোগ তুলেছেন, ‘‘মোদী সরকার এখানে নারদ মুনির ভূমিকা পালন করতে ব্যস্ত।’’
তৃণমূল সূত্রেও মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সস্তার রাজনীতি করার অভিযোগ তোলা হয়েছে। তৃণমূলের বক্তব্য, মোদী সরকারের তরফে লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। সুদীপ শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়ে বলেছেন, তিনি যেতে পারবেন না। সরকারের উচিত ছিল, দলের প্রধান হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা। সরকারের এই অবস্থান দেখে তৃণমূল প্রথমে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, কাউকে প্রতিনিধি দলে পাঠাবে না। তবে তারা শেষ বেলায় সিদ্ধান্ত বদল করেছে। জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে নিজে এবং দলকে দূরে রাখতে চাইছেন না তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি প্রতিনিধি দলে তৃণমূল সাংসদ ইউসুফ পঠানের নাম রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাতচার্য একটি প্রতিনিধি দলে থাকছেন। সমাজবাদী পার্টি কাউকে পাঠাবে কি না, তা-ও স্পষ্ট নয়। যদিও সমাজবাদী পার্টির সাংসদের নাম সরকারের তালিকায় রয়েছে। তৃণমূলের অভিযোগ, সরকার আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়ালের সঙ্গে যোগাযোগ না করে সে ক্ষেত্রেও দুই ‘বিজেপির প্রতি নরম’ সাংসদকে বেছে নিয়েছে। তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টির মতো বড় দলগুলিকে বাদ দিয়ে কেন সুপ্রিয়া সুলে, শ্রীকান্ত শিন্দের মতো ছোট সংসদীয় দলের সাংসদরা প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল শিবির।
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের অভিযোগ, আসলে মোদী সরকার এখন কূটনৈতিক ভাবে প্রবল অস্বস্তির মধ্যে পড়েছে। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ সংঘর্ষবিরতি ঘোষণা করে দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার পরে তিনি বলেছেন, তিনি বাণিজ্যের টোপ দিয়ে ভারত-পাকিস্তানকে সংঘর্ষবিরতিতে রাজি করিয়েছেন। এখন ট্রাম্প ভারত-পাকিস্তানকে আলোচনায় বসাতে চান। পাকিস্তানের সন্ত্রাসের থেকে নজর ঘুরে গেছে ভারত-পাকিস্তান আলোচনায়। মোদী সরকার এখন সে দিক থেকে নজর ঘোরাতে বিরোধীদের সঙ্গে রাজনীতি করতে নেমেছে। বিদেশে প্রতিনিধি দল পাঠানোটাও ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’-এর চেষ্টা।
মোদী সরকারের সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রকের যুক্তি, ভারত যে ঐক্যবদ্ধ ভাবে সন্ত্রাসের মোকাবিলা করতে চায়, তা তুলে ধরবে এই সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের কঠোর বার্তা তুলে ধরবে। প্রত্যেক প্রতিনিধি দলে একজন করে কূটনীতিক থাকছেন।
কংগ্রেসের প্রশ্ন, রাহুল গান্ধী যাঁদের নাম পাঠালেন, তাঁদের সঙ্গে মোদী সরকার অন্যদেরও যদি প্রতিনিধি দলে রাখতে চায়, তা হলে তা জানানো হল না কেন? যদিও তিওয়ারি, খুরশিদরা প্রতিনিধি দলে যোগ দিলে কংগ্রেস তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে না বলে দলীয় সূত্রের খবর।