শশীকে নিয়ে ‘সিঁদুরে’ মেঘ দেখছে কংগ্রেস
প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি, ১৭ মে: প্রায় তিন দশক রাষ্ট্রপুঞ্জে কাজ করার পরে দেশে ফিরে শশী তারুর কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন। কংগ্রেস ২০০৯-এ তাঁকে কেরল থেকে লোকসভায় প্রার্থী করেছিল। সে সময় ভায়ালার রবি-সহ কেরলের কংগ্রেসের নেতাদের সিংহভাগ এর বিরুদ্ধে ছিলেন। বিরোধিতা সত্ত্বেও গান্ধী পরিবার শশী তারুরকে তিরুঅনন্তপুরম থেকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
আগামী বছরের গোড়ায় কেরলে বিধানসভা নির্বাচন। বামেদের ক্ষমতাচ্যুত করে কংগ্রেস দশ বছর পরে কেরলে ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন দেখছে। ঠিক সেই সময় কেরলের সাংসদ শশী তারুর কগ্রেসের গলার কাঁটা হয়ে উঠেছেন। কখনও তিনি বাম সরকারের প্রশংসা করছেন। কখনও তিনি ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে মোদী সরকারের প্রশংসা করছেন। এ বার কংগ্রেস না চাইলেও তিনি ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে মোদী সরকার যে বিভিন্ন দেশে সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছে, তার একটি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিতে রাজি হয়ে গিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে যে মোদী সরকার যোগাযোগ করেছিল, তা তিনি দলীয় নেতৃত্বকেই জানাননি। কেরলের কংগ্রেস নেতারা তারুরের বিরুদ্ধে এককাট্টা হয়ে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডকে অভিযোগ জানিয়েছে। তাঁদের মতে, তারুরের জন্য বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্য রাজনীতিতে কংগ্রেসের বাম-বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চোনা পড়ছে। তারুর কংগ্রেসেই থাকছেন। অথচ কংগ্রেসের ‘পার্টি-লাইন’-এর উল্টো অবস্থান নিয়ে চলেছেন। সম্প্রতি তিনি তিরুঅনন্তপুরমে ভিঝিনঝাম বন্দরের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন। বন্দরের উদ্বোধনের পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তারুরের উপস্থিতির দিকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, এতে অনেকের ঘুম ছুটে যাবে।
কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ এর আগে একাধিক বার বলেছেন, তারুর যা বলছেন, তা দলের কথা নয়। সেটা তাঁর ব্যক্তিগত মতামত। আজ জয়রাম বলেছেন, ‘‘কংগ্রেসের মধ্যে থাকা ও কংগ্রেসের হয়ে থাকার মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে।’’ তারুরের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে জয়রাম মন্তব্য করতে চাননি।
কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, ইউপিএ জমানায় গান্ধী পরিবার কেরলের কংগ্রেস নেতাদের আপত্তি সত্ত্বেও তাঁকে তিরুঅনন্তপুরম থেকে প্রার্থী করেছিল। তার পরে তাঁকে বিদেশ প্রতিমন্ত্রী করা হয়। মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরে অনেকের আপত্তি সত্ত্বেও রাহুল গান্ধী তাঁকে বিদেশ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান করেছিলেন। কিন্তু তিনি বিমানের ইকনমি ক্লাসকে ‘ক্যাটল ক্লাস’ বলে গোটা কংগ্রেসকে অস্বস্তিতে ফেলেছিলেন। তিনি মল্লিকার্জুন খড়্গের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচনে লড়েছিলেন। তার পরেও খড়্গে জিতে এসে তারুরকে ওয়ার্কিং কমিটিতে রেখেছিলেন।
কিছু দিন আগে কেরলের কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে, রাহুল গান্ধীর বৈঠকে কংগ্রেস নেতরা তারুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন। তাঁকে দলের অবস্থানের বিরুদ্ধে মুখ না খুলতে বলা হয়েছিল। চলতি সপ্তাহে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সংঘর্ষবিরতির পরে কংগ্রেসের প্রবীণ নেতারা বৈঠকে বসেছিলেন। সে সময়ও খোদ রাহুল গান্ধী শশী তারুরকে সতর্ক করেন। তার পরে তারুর বলেছেন, তিনি তিনি নিজের মতামতই বলছেন। এ বার তিনি কংগ্রেসের অনুমতির পরোয়া না করেই নিজে সরকারি প্রতিনিধি দলে যোগ দিতে রাজি হয়ে গিয়েছেন। অথচ কংগ্রেসের তরফ থেকে সরকারের কাছে তাঁর নামই প্রস্তাব করা হয়নি।
আজ শশী তারুর ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘‘দলের নিজস্ব মতামত জানানোর অধিকার রয়েছে। তবে এটা সরকারের প্রতিনিধি দল। সরকার নিজের মতো ঠিক করেছে, কাদের প্রতিনিধি দলে থাকা উচিত। সরকারের সঙ্গে দলের কী কথা হয়েছে, তা জানি না।’’ তারুরের বক্তব্য, তিনি বিদেশ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান। তাঁর আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেই জন্যই তাঁকে প্রতিনিধি দলে রাখা হচ্ছে বলে সরকার জানিয়েছে। তারুরের ঘনিষ্ঠ মহল প্রশ্ন তুলছে, কেন কংগ্রেস নিজে তারুরের নাম প্রস্তাব করেনি? কংগ্রেসের একটা বড় অংশ মনে করছে, শশী বিজেপিতে যেতে পারেন। কেরলের বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাজীব চন্দ্রশেখর নিজে তারুরের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। তারুর গত লোকসভা নির্বাচনে চন্দ্রশেখরকেই হারিয়েছিলেন। তারুর এত দিন বিজেপিতে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করলেও আজ তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চান না।