গাজ়া পুনর্গঠনে বৈঠক, হামলা বাড়াচ্ছে ইজ়রায়েল
বাগদাদ, ১৭ মে: ইরাকের রাজধানী বাগদাদে শনিবার আরব দেশের নেতারা একটি বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে ইজ়রায়েল ও হামাসের মধ্যে সংঘর্ষবিরতি চালু করা যায় কিনা, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হল। পাশাপাশি, যুদ্ধ থামলে গাজ়া ভূখণ্ড পুনর্গঠনে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিলেন নেতারা।
এ বছর মার্চে কায়রোতে আরব দুনিয়ার নেতারা গাজ়ার পুর্নগঠন নিয়ে একটি জরুরি বৈঠক করেছিলেন। তাতে প্রায় ২০ লক্ষ বাসিন্দাকে স্থানান্তরিত না করে, কী ভাবে শহরটাকে ফের বাঁচিয়ে তোলা যায় সেই বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। আজ বাগদাদের সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ অল থানি, মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফতে এল-সিসি, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেড্রো স্যাঞ্চেজ়, রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস প্রমুখ। ওই মঞ্চে গুতেরেস ইজ়রায়েলি পণবন্দিদের মুক্তি দিয়ে গাজ়ায় ত্রাণ ঢোকার রাস্তা খুলে দেওয়ার আর্জি জানান। পাশাপাশি, প্যালেস্টাইনিদের জোর করে ভূমিচ্যূত করার বিরোধিতা করেন তিনি। গাজ়ায় ইজ়রায়েলি আক্রমণের নিন্দা করে ইরাকি প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ শিয়া অল-সুদানি বলেন, ‘‘যুদ্ধের ইতিহাসে এত নির্মম আর নৃশংস গণহত্যা নজিরবিহীন।’’ তিনি বলেন, গাজ়ার পুর্ননির্মাণের জন্য আরব দেশগুলি একটি তহবিল তৈরি করছে। তাতে গাজ়া ও লেবাননের জন্য ২ কোটি ডলার করে অর্থসাহায্য করবে ইরাক। মিশরের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, কাতার ও আমেরিকার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে গাজ়ায় সংঘর্ষবিরতি শুরু করার চেষ্টা চলছে। তাঁর কথায়, সেই চেষ্টার ফলেই হামাস এডান অ্যালেকজ়ান্ডার নামে এক ইজ়রায়েলি-আমেরিকান পণবন্দিকে সম্প্রতি মুক্তি দিয়েছে। যুদ্ধ থামলে গাজ়া পুনর্গঠনের কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি। এই পরিস্থিতিতে হামাস ও তার শরিক জঙ্গিদলগুলিকে গাজ়ার নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করার বার্তা দিয়েছেন প্যালেস্টাইনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। ২০০৭ সালে পশ্চিমি দেশগুলির সমর্থনপ্রাপ্ত আব্বাসের সরকারের হাত থেকে গাজ়ার নিয়ন্ত্রণ নেয় হামাস। এত দিন দু’তরফের সমঝোতার সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এমতাবস্থায় ফের ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করছেন আব্বাস।
পশ্চিম এশিয়ায় আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক সফরের পরেই আজকের এই বৈঠক ছিল। অনেকেই মনে করেছিলেন, ট্রাম্পের সফরে হামাস-ইজয়রায়েল সংঘর্ষবিরতি নিয়ে ইতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হবে। বাস্তবে তেমন কিছুই হয়নি। বরং গাজ়ায় শান্তি ফেরানো নিয়ে বাগদাদে যখন বৈঠক চলছে, তখন নতুন শক্তিতে হামলা চালাতে শুরু করল ইজ়রায়েল। ইজ়রায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী এক্স হ্যান্ডলে জানিয়েছে, বাকি পণবন্দিদের মুক্ত করতে এবং হামাসের পরাজয় নিশ্চিত করতে তারা এ বার মরণকামড় দেবে। সীমান্তে হাজার হাজার ইজ়রায়েলি সেনা এ বার গাজ়ায় ঢোকার অপেক্ষা করছে। লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা অভিযান চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে বাহিনী।
হামাসের তরফে জানানো হয়েছে, গত রাতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫৮ জন। গত দু’মাস ধরে গাজ়ায় ত্রাণ ঢোকা বন্ধ রেখেছে ইজ়রায়েল। ফলে বাসিন্দাদের অবস্থা, বিশেষ করে শিশুদের অবস্থা খুবই সঙ্কটজনক। মধ্য ও উত্তর গাজ়া থেকে সমস্ত বাসিন্দাদের দক্ষিণে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাহিনী। কিন্তু কোথায় যাবে মানুষ? গাজ়ার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে কর্মরত ব্রিটিশ চিকিৎসক ভিক্টোরিয়া রোজ় এক সাক্ষাৎকারে সেখানের মানুষের দুর্দশার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘শিশুরা খুব দুর্বল। শরীরে অনাহারের চিহ্ন স্পষ্ট। অনেক শিশুকে দেখেছি, যাদের দাঁত পড়ে গিয়েছে।’’ রাষ্ট্রপুঞ্জের এক সাম্প্রতিক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, গাজ়ায় দুর্ভিক্ষ আসন্ন।
তবে ইজ়রায়েলি সরকার সমস্ত দাবি উড়িয়ে দিয়েছে। বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সরকারের মতে, গাজ়ায় কোনও খাদ্যসঙ্কট নেই। সংবাদ সংস্থা