সম্প্রতি সিবিএসই বোর্ড একটি নির্দেশিকা জারি করেছে যেখানে বলা হয়েছে, বোর্ডের অধীন প্রতিটি স্কুলে সুগার বোর্ড রাখতে হবে। কী এই সুগার বোর্ড? এটি এমন একটি চার্ট, যেখানে বাজারজাত পানীয়গুলির মধ্যে কতটা পরিমাণে চিনি রয়েছে সেই মাপ দেওয়া থাকবে। প্রতিটি পানীয়ের তলায় লেখা থাকবে চিনির পরিমাণ। ছোটদের মধ্যে জনপ্রিয় এমন নরম পানীয়ের কথাই মূলত এখানে বলা হয়েছে। স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যে ওবেসিটি, টাইপ টু ডায়াবিটিস ক্রমবর্ধমান। আর এই রোগের নেপথ্যে অতিরিক্ত চিনি রয়েছে, যা জাঙ্ক ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবারে প্রচুর পরিমাণে থাকে। স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির কারণেই সুগার বোর্ডের পরামর্শ সিবিএসই-র।
এই সুগার বোর্ড শুরু করেছিলেন রেবন্ত হিমতসিংকা, যিনি ফুড ফার্মার নামে বেশি পরিচিত। বাজারজাত নরম পানীয় কতটা ক্ষতিকারক, বিজ্ঞাপনে প্রচারিত দাবি কতটা ভুয়ো এবং পানীয়তে থাকা চিনির পরিমাণ তিনি বিশদে তুলে ধরেছিলেন। তিনি এনসিপিসিআর এবং সিবিএসই-র কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সুগার বোর্ডের উপযোগিতা বোঝান।
পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে ছোটদের মধ্যে জনপ্রিয় পানীয়ে ৮-১০ চামচ চিনি থাকে। জাঙ্ক ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার নিয়ে স্কুলে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগের প্রশংসা করলেন ডায়াটিশিয়ান সুবর্ণা রায়চৌধুরী। তবে তাঁর মতে, এই সচেতনতা বাড়ির বড়দের বেশি দরকার। “বড়রা ঠিক করে দেন ছোটরা কী খাবে। তাই প্যাকেটজাত খাবার, নরম পানীয় কেন খাওয়া উচিত নয়, সেটা বাবা-মাকে জানতে হবে।” অতিরিক্ত চিনি মেটাবলিক ডিজ়অর্ডার তৈরি করে যা ওবেসিটি, ডায়াবিটিস ডেকে আনে। দাঁত নষ্ট হয়ে যায়। ‘‘এখন ছোটদের মধ্যে টাইপ টু ডায়াবিটিস, হার্টের সমস্যা ক্রমশ বাড়ছে। তার অন্যতম কারণ অতিরিক্ত চিনি ও জাঙ্ক ফুড,” বললেন সুবর্ণা।
বাচ্চা টিফিনে কী নিয়ে যাবে, অনেক স্কুল সেই সংক্রান্ত নির্দেশিকা তৈরি করে দেয়। সেখানে বাড়িতে তৈরি খাবারেই উৎসাহ দেওয়া হয়। পুষ্টিবিদদের মতে, বাড়ন্ত বাচ্চার খাদ্যতালিকায় যেন সব রকমের উপাদান থাকে। “বাচ্চার বৃদ্ধির জন্য প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, ফ্যাট সবটাই চাই। ব্রেন ডেভেলপমেন্টের জন্য ভিটামিন বি, ডি, ই দরকার। এগুলো কোন কোন খাবারে আছে, সেটা জেনে তা রাখতে হবে খাদ্যতালিকায়। একঘেয়ে খাবারে অনীহা থাকে ছোটদের, তাই বাড়ির তৈরি খাবারে একটু অভিনবত্ব আনতে হবে,” বললেন পুষ্টিবিদ সুবর্ণা। বাড়ির সব রান্নাতেই চিনি কমানো জরুরি। কেনা জুসের বদলে ডাবের জল, বাড়িতে তৈরি ফলের রস দিন। দুধের সঙ্গে ফল, ড্রাই ফ্রুটস দিয়ে স্মুদি বানিয়ে দেওয়া যায়।
একটা বাচ্চা রোজ কত চামচ চিনি খেতে পারে? “এটা নির্ভর করে বাচ্চার শারীরিক গঠনের উপরে। সারা দিনে দু’চামচ চিনি যথেষ্ট,’’ বললেন সুবর্ণা রায়চৌধুরী। অনেকে চিনির বিকল্প হিসেবে গুড়, মধুর কথা বলেন। গুড়, মধুতে বাড়তি কিছু উপাদান থাকে বটে, কিন্তু শর্করার নিরিখে সবই সমান।
সুগার বোর্ড ছোটদের মধ্যে যে সচেতনতা বাড়াবে, সেটা বাড়িতেও দরকার। ক্যান্টিনে প্যাকেটজাত পণ্য রাখা থেকে স্কুলকেও বিরত থাকতে হবে। না হলে আসল উদ্দেশ্যই মাটি।
দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ