দাঁত তোলার আগে
কোন কোন রোগ থাকলে দাঁত তোলার আগে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি, জেনে নিন
দাঁতে বারবার সংক্রমণ বা ক্ষয়ে অনেক সময়েই দাঁত তুলতে হয়। কিন্তু দাঁত তোলার আগেও কিছু সতর্কতা দরকার। অনেক সময়ে রোগী ধন্দে থাকেন দাঁত তুলবেন না রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্ট করাবেন? সেই বিষয়ে ঠিক সিদ্ধান্ত নিতেও নিজের শরীর ও দাঁতকে চেনা দরকার।
দাঁত তোলার আগে
দন্ত চিকিৎসক পারমিতা গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, “দাঁত তোলাটা একটা সার্জিক্যাল প্রক্রিয়া। কখনও একবারে দাঁত বেরিয়ে আসে, কখনও হাড় কেটে দাঁত বার করতে হয়। তাই কিছু কিছু রোগের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা দরকার। যেমন হার্টের রোগীদের ক্ষেত্রে দু’টি দিক দেখা দরকার। রোগী ব্লাড থিনার জাতীয় ওষুধ খান কি না বা তাঁর পেসমেকার বা অন্য কোনও ডিভাইস শরীরে বসানো আছে কি না। সে ক্ষেত্রে আগে থেকে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।” এ ছাড়াও কিছু কিছু রোগের কথা উল্লেখ করলেন ডা. গঙ্গোপাধ্যায়। যেমন ক্যানসারের রোগী হলে, কেমোথেরাপি বা রেডিয়োথেরাপি নিতে হলে, রেনাল ট্রান্সপ্লান্টের রোগী হলে, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবিটিস থাকলে, আগে স্ট্রোক হলে বা অটোইমিউন ডিজ়িজ় থাকলেও সাবধান হতে হবে।
“বিশেষ করে অটোইমিউন ডিজ়িজ় থাকলে তাঁদের ইমিউনোসাপ্রেস্যান্ট জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি থাকে। দাঁত তোলার পরে সেই জায়গার ক্ষত সারতেও সময়ে লাগে। তাই এই ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে দাঁত তোলার আগে কী ওষুধ খাবেন বা কী ভাবে চলবেন, সে সব বিষয়ে আমরা বেশি সতর্ক থাকি,” বললেন ডা. গঙ্গোপাধ্যায়।
দাঁত কখন তুলবেন?
দাঁতে ক্যাভিটি থাকলে, অতিরিক্ত সংক্রমণ হলে বা সংক্রমণ বারবার ফিরে এলে চিকিৎসকেরা দাঁত তোলার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। তবে অনেক সময়ে চিকিৎসার মাধ্যমে দাঁতের আয়ু আরও কিছু বছর বাড়ানো যায়। ডা. গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, “আমরা চেষ্টা করি আসল দাঁতটা রাখতে। সৌন্দর্যের জন্য ও দাঁতের কার্যকারিতা বজায় রাখার জন্য রোগীর নিজের দাঁতটা ভাল রাখার চেষ্টা করি। সে ক্ষেত্রে রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্ট করা হয়। কিন্তু রুট ক্যানাল সব সমস্যা মিটিয়ে দেবে এই নিশ্চয়তা থাকে না। দাঁতে যদি বড় গর্ত থাকে যেটা ঠিক করা যাবে না, বা একই দাঁতের গোড়ায় ইনফেকশন যদি বারবার ফিরে আসে, সে ক্ষেত্রে দাঁত তুলে ফেলাই শ্রেয়। রুট ক্যানাল করার পরেও অনেক সময়ে ইনফেকশন ফিরে
আসতে পারে। তখন দাঁত তুলে দেওয়া হয়।”
দাঁত তোলার পরে
- সাধারণত দাঁত তোলার পরে এক সপ্তাহ সাবধানে থাকতে হয়। মুখের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে হবে।
- দাঁত তোলার পরের চব্বিশ ঘণ্টা নরম খাবার খেতে হবে। গরম খাবার খাওয়া যাবে না। গরম খাবার খেলে অনেক
সময়ে রক্তপাত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তার
চেয়ে খাবার ঘরের তাপমাত্রায় এনে খান। - ক’টা দিন ভারী ব্যায়াম করা থেকেও বিরত থাকতে বলা হয়।
- তবে দাঁত তোলার দু’দিন পরেও কিন্ত ব্যথা হতে পারে। “কারণ দাঁত তোলার পরে রক্ত জমাট বেঁধে টিসু তৈরি হলে সেই জায়গাটা ঠিক হতে শুরু করে। কোনও কারণে সেই ক্লট যদি জায়গা থেকে সরে যায়, তখন বোন বেয়ারে একটা ব্যথা হয়। সেটাকে ড্রাই সকেট বলা হয়। তখন আবার চিকিৎসকের কাছে গিয়ে সেই জায়গাটা পরিষ্কার করে একটা প্যাক দেওয়া হয়। তখন ওই ব্যথাটা চলে যায়,” বললেন ডা. গঙ্গোপাধ্যায়।
- অনেক সময়ে দাঁত তোলার পরে মাসল স্প্যাজ়ম হয়। তখন মুখ বেশি নাড়ানো যায় না। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা ঠিক হয়ে যায়।
- দাঁত তোলার পরে সেই জায়গায় নকল দাঁত বসিয়ে নেওয়া যায়। তবে মাড়ির অবস্থার উপরে নির্ভর করবে সেই দাঁত কতটা ভাল বসবে।
- রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্ট করালে বা দাঁত ভেঙে গেলে উপরে ক্যাপ পরিয়ে দেওয়া হয়। দাঁতের যত্ন ঠিকমতো না নিলে সেই ক্যাপও ভেঙে বেরিয়ে আসতে পারে। তাই দাঁতের যে কোনও চিকিৎসায় তার পরে নিয়মিত যত্ন নেওয়া খুব জরুরি।
দাঁত তোলার আগে বা পরে সাবধানতা তো জরুরি বটেই। তবে অল্প ব্যথা, শিরশিরানি হলেই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। দরকার মতো চিকিৎসা ও যত্ন নিতে হবে। অনেক ক্ষেত্রেই দাঁতের ব্যথা বা ইনফেকশন ফেলে রাখলে দাঁতের গোড়া নষ্ট হয়ে যায়। তখন সেই দাঁত আর রাখা যায় না। বরং দাঁত ভাল রাখতে বছরে দুটো চেকআপ করাতে হবে। তার সঙ্গে নিয়মিত মুখের স্বাস্থ্য বজায় রাখাও জরুরি। অল্প কিছু খাবার খেলে, এমনকি চা-কফি খেলেও সঙ্গে সঙ্গে মুখ কুলকুচি করে ধুয়ে নিন। মনে রাখবেন, দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বোঝাই ভাল। তাই গোড়া থেকে দাঁতের যত্ন নিলে পরে সমস্যায় পড়তে হবে না।
নবনীতা দত্ত
মডেল: তৃণা বৈদ্য; মেকআপ: অভিজিৎ কয়াল; ছবি: অমিত দাস