মাওবাদী দমন করে খোঁজ খনিজ-পথে উন্নয়নের
প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি, ২৩ মে: মাওবাদীদের শিকড় উপড়ে ফেলে ছত্তীসগঢ়ের মাটির তলায় থাকা খনিজ তুলে মোদী সরকার আদিবাসীদের মধ্যে উন্নয়নের সুফল পৌঁছে দিতে চাইছে। যাতে ভবিষ্যতে মাওবাদীরা নতুন করে ছত্তীসগঢ়ের অবুঝমাঢ়ে প্রভাব ছড়াতে না পারে।
সিপিআই-মাওবাদী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বাসবরাজু নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে মারা যাওয়ার পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মনে করছে, মাওবাদীদের কোমর ভেঙে দেওয়া গিয়েছে। এ বার দুর্ভেদ্য অবুঝমাঢ়ের জঙ্গলে নিরাপত্তা বাহিনীর ঢুকতে বিশেষ সমস্যা হবে না। বস্তার, দন্তেওয়াড়ার আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্য পুলিশের বিশেষ বাহিনী ঢুকে পড়লেই সেখানে উন্নয়নের কাজকর্ম শুরু করে দিতে চাইছে কেন্দ্র এবং রাজ্যের বিজেপি সরকার।
কেন্দ্রীয় সরকারের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, ‘‘ছত্তীসগঢ়ের মাটির তলায় লৌহ আকরিক থেকে লিথিয়াম, বিরল খনিজ বা রেয়ার আর্থ এলিমেন্ট রয়েছে। যা উত্তোলন শুরু হলে ছত্তীসগঢ়ের ছবিই বদলে যাবে। এত দিন মাওবাদীদের আতঙ্কে খননের কাজ শুরু করা যাচ্ছিল না।’’
কী ভাবে সেই কাজ শুরু হবে? ওই আমলার বক্তব্য, ছত্তীসগঢ়ের মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায় খননের কাজের জন্য কেন্দ্রীয় খনি মন্ত্রক উৎসাহ ভাতা ২৫ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থাৎ যে সব সংস্থা ওই এলাকায় খননের কাজ করবে, তাদের সমীক্ষা, উত্তোলন, যন্ত্রপাতি বসানোর জন্য ১০০ টাকা খরচ হলে কেন্দ্র সেখানে ১২৫ টাকা উৎসাহ ভাতা দেবে। ‘ন্যাশনাল মিনারেল এক্সপ্লোরেশন ট্রাস্ট’-এর মাধ্যমে এই অর্থ বিলি করা হবে।
খনি মন্ত্রকের বক্তব্য, ইতিমধ্যেই ছত্তীসগঢ়ে কোরবা জেলায় লিথিয়াম খনির লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। কলকাতারই একটি সংস্থা নিলামে অংশ নিয়ে লিথিয়াম খনির লাইসেন্স পেয়েছে। ইলেকট্রিক ভেহিকল বা ইভি-র ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে লিথিয়ামের প্রয়োজনীয়তাও বাড়ছে। সম্প্রতি ছত্তীসগঢ়ের বাইলাডিলা ও হাহালাড্ডিতে চারটি আকরিক লোহার খনির লাইসেন্স নিলাম করা হয়েছে। দু’টি খনি পেয়েছে আর্সেলর মিত্তল নিপ্পন স্টিল সংস্থা। একটি খনি পেয়েছে রুংতা সন্স সংস্থা।
বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, গত মাসেই ছত্তীসগঢ়ের বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণুদেও সাই বস্তার ডিভিশনের সদর দফতর জগদলপুরে গিয়ে বৈঠক করে এসেছেন। বিরোধী থেকে নাগরিক সমাজের একাংশ প্রচারের চেষ্টা করছে, শিল্পপতিদের হাতে খনির লাইসেন্স তুলে দিতেই মাওবাদীদের শেষ করে আদিবাসীদের উচ্ছেদের পরিকল্পনা চলছে। কিন্তু খননের কাজ শুরু হলে যাতে তার সুফল হলে স্থানীয় আদিবাসীদের কাছে পৌঁছয়, তার জন্য বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, পর্যটনে জোর দেওয়া হবে। জৈব চাষ, মৎস্যচাষের মতো ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের প্রকল্পে ইতিমধ্যেই ৯০ হাজার আদিবাসী তরুণকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, গত পাঁচ বছরে গোটা দেশে মাওবাদী হিংসা ২৫% কমেছে। তবে ছত্তীসগঢ় এখনও মাওবাদী হিংসার শীর্ষে। গোটা দেশের ৭০ শতাংশ ঘটনাই ছত্তীসগঢ়ে হচ্ছে। তার কারণ হল, গত তিন-চার বছরে মাওবাদীদের শিকড় উপরে ফেলতে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান শুরু হয়েছে। তাই মাওবাদীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বেড়েছে। মাওবাদীদের সদর দফতর অবুঝমাঢ় ঘিরে ফেলা হচ্ছে বুঝে তারাও মরিয়া হয়ে হিংসা ছড়াতে চাইছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আর বেশি দিন এই হিংসা চলবে না। শেষের শুরু হয়ে গিয়েছে। এ বার পুরো দমে উন্নয়নের কাজ শুরু হবে।’’