১ জুন: রূপকথার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল? নাকি একবিংশ শতাব্দীতে ফরাসি বিপ্লব? ইন্টার মিলানকে ৫-০ চূর্ণ করে প্রথমবার ইউরোপের শাসক প্যারিস সঁ জরমঁ।
মিউনিখের আলিয়াঞ্জ এরিনায় নতুন ইতিহাস লিখল পিএসজি। আর কাহিনিকারের নাম লুইস এনরিকে। কার্যত একপেশে ফাইনালের সাক্ষী থাকলেন দর্শকরা। ১৯৯২-’৯৩ মরসুমে শেষ বার ফ্রান্সের ক্লাব মার্সেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছিল। ঘটনাচক্রে তাঁরাও হারিয়েছিল ইটালির ক্লাব এসি মিলানকেই। সেই ম্যাচও হয়েছিল মিউনিখে। ৩২ বছর পরে মিউনিখেই শুরু থেকে ইন্টার মিলানকে ধরাশায়ী করে দিল পিএসজি। ৫-০ গোলে জয় পেল ফ্রান্সের ক্লাব। যা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালের ইতিহাসে সব চেয়ে বড় ব্যবধানে জয়।
লিয়োনেল মেসি, নেমার দা সিলভা স্যান্টোস জুনিয়র, কিলিয়ান এমবাপে, অ্যাঙ্খেল দি মারিয়ার মতো মহাতারকাদের এনেও ইউরোপ সেরা হওয়ার স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে গিয়েছিল ১৪ বছর আগে পিএসজি কিনে নেওয়া কাতারের ধনকুবের নাসের আল খেলাইফির। ২০১৯-’২০ মরসুমে ফাইনালে উঠলেও বায়ার্ন মিউনিখের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় পিএসজির। বারবার ফ্রান্সের সেরা ক্লাবের তকমা পেলেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে না পারলে সাধারণত সেরা দলের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয় না। এনরিকে দায়িত্বে আসেন ২০২৩ সালের জুলাইয়ে। প্রথম থেকেই তিনি চেয়েছিলেন এক সুতোয় দলকে বাঁধতে। মেসি, নেমার, এমবাপে, দি মারিয়ারা চলে গেলেও তাই হতাশ হয়ে পড়েননি। তারকা সংস্কৃতি ছেঁটে ফেলে জোর দেন দলগত সংহতিতে। শনিবার রাতে এনরিকের সিদ্ধান্তকেই সিলমোহর দিলেন উসমান দেম্বেলে, আশরফ হাকিমিরা।
পিএসজির ইতিহাস গড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বার্তা পাঠান দুই প্রাক্তন ফুটবলার- এমবাপে ও নেমার। পুরনো ক্লাবকে অভিনন্দন জানিয়ে ফরাসি তারকা ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে লিখেছেন, ‘‘অবশেষে বড়দিন এল। এই সাফল্য পুরো দলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রতিফলন। অভিনন্দন পিএসজি।’’ নেমার ইনস্টাগ্রামে পাঁচটি হাত তালির ইমোজি দিয়ে লিখেছেন, ‘‘অভিনন্দন পিএসজি।’’
ফাইনালের প্রথম মিনিট থেকেই পিএসজির প্রেসিং ফুটবল শুরু হয়। কারণ এনরিকে প্রথম থেকেই জানতেন যে ইন্টার রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলবে। বল পায়ে না থাকার সময়েও বারবার প্রতিপক্ষকে তাড়া করে গেলেন পিএসজির ফুটবলাররা। ১২ মিনিটের মাথায় ফল এল। দিজ়িয়ে দুয়ের বাড়ানো বল প্রায় ফাঁকায় দাঁড়িয়ে গোলে ঠেলেন আশরফ হাকিমি। আট মিনিট পরেই প্রতিআক্রমণে উঠে দেম্বেলে বল দিলেন বক্সের অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা দুয়েকে। ২-০ করতে ভুল করেননি ১৯ বছরের ফুটবলার। প্রথমার্ধে বিপক্ষের গোল লক্ষ্য করে কোনও শটই নিতে পারেননি লাউতারো মার্তিনেসরা।
দ্বিতীয়ার্ধেও সমর্থকদের হতাশই করল ইন্টার। পিএসজি-র আক্রমণের ঝড় সামলাতে ৫৪ মিনিটে বাধ্য হয়েই ডিফেন্ডার দিমার্কোকে তুলে নিয়েছিলেন ইন্টারের ম্যানেজার সিমিওনে ইনজ়াঘি। যদিও কোনও লাভ হয়নি। ৬৩ মিনিটে ফের গোল করে পিএসজিকে ৩-০ এগিয়ে দেন দুয়ে। সেই সঙ্গে স্পর্শ করেন প্রয়াত কিংবদন্তি ইউসেবিয়োর নজিরও। ১৯৬২ সালের পরে এত কম বয়সে কোনও ফুটবলার চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে জোড়া গোল করতে পারেননি। ৭৩ মিনিটে ৪-০ করেন খিভিচা কাভারাৎস্কেলিয়া। ৮৬ মিনিটে ৫-০ করেন সেনি মায়ুলু।
জয়ের পরে হাকিমি বলেন, “আমরা নতুন ইতিহাস গড়েছি। ক্লাবের ইতিহাসে নিজেদের নাম স্বর্ণাক্ষরে খোদাই করেছি। শুধু ইতিহাস নয়, আমরা নতুন পরিবারও তৈরি করেছি।” ১৯ বছরের দুয়ে বলেন, “খুশি প্রকাশ করার কোনও ভাষা নেই। এখনও আমার ঘোর কাটছে না। শুধু একটা কথাই বলতে পারি, অবিশ্বাস্য।”
সোমবারই দেম্বলে সহ লুকাস হার্নান্দেস, ওয়ারেন এমেরি, বার্কোলা, দুয়ে-রা যোগ দেবেন জাতীয় দলে। কারণ বৃহস্পতিবার নেশনস লিগের সেমিফাইনালে স্পেনের বিরুদ্ধে খেলবে ফ্রান্স। তিনি মজা করে বলেন, “সবেমাত্র উৎসব শুরু হয়েছে। সোমবার হয়তো ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশঁ আমাদের অন্য অবস্থায় দেখবে।” যোগ করেন, “আমরা গোটা দেশকে গর্বিত করেছি। একতরফা জেতা আপনার ভাললাগা আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়।”