বোলপুর: দ্বিতীয় দিনও পুলিশের ডাকে হাজিরা দিলেন না বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল (েকষ্ট)। বোলপুর থানার আইসি-কে কুকথা বলা ও গালিগালাজ করার অভিযোগে একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা হয়েছে তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি কেষ্টর বিরুদ্ধে। পুলিশ ডাকলেও শনিবারের মতো রবিবারও অসুস্থতার কথা জানিয়ে হাজিরা দেননি তিনি। দ্বিতীয় বারেও হাজিরা না দেওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, সেই প্রশ্ন উঠেছে।
ইতিমধ্যে কেষ্টর সুরে ওই আইসি-কে সমাজমাধ্যমে ‘হুমকি’ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) সভাপতি বিক্রমজিৎ সাউয়ের বিরুদ্ধে। তা নিয়ে বিতর্ক বাধায় বিক্রমজিৎকে দ্রুত সাসপেন্ড করেছে টিএমসিপি।
অনুব্রত ও বোলপুর থানার আইসি লিটন হালদারের কথোপকথনের একটি ‘অডিয়ো ক্লিপ’ বৃহস্পতিবার ছড়ায় সমাজমাধ্যমে। সেখানেই আইসি-কে গালিগালাজ ও কুকথা বলার অভিযোগ উঠেছিল কেষ্টর বিরুদ্ধে। পরে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে ‘নিঃশর্ত ক্ষমা’ চান কেষ্ট। একই সঙ্গে ‘চক্রান্তে’র অভিযোগও তোলেন। পুলিশও মামলা দায়ের করে তাঁকে শনিবার এসডিপিও-র (বোলপুর) দফতরে হাজিরার নোটিস পাঠায়। সেই দিন না যাওয়ায় তাঁকে দ্বিতীয় নোটিস পাঠিয়ে রবিবার বেলা ১১টায় ফের ওই দফতরে ডাকা হয়।
শনিবার সকালে ‘অসুস্থ’ কেষ্ট পুলিশের ডাকে না গেলেও তাঁকে বিকেলে বোলপুরের দলীয় কার্যালয়ে দেখা গিয়েছিল। এ দিন অবশ্য তাঁর দেখা মেলেনি। তাঁর আইনজীবী বিপদতারণ ভট্টাচার্য, পলাশ দাস ও অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা তথা ‘সারা বাংলা তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতি’র রাজ্য সভাপতি দেবব্রত ওরফে গগন সরকার এসডিপিও-র দফতরে যান। অনুব্রত শারীরিক ভাবে ‘অসুস্থ’ ও তাঁকে পাঁচ দিন চিকিৎসক শয্যাশায়ী থাকতে বলেছেন, এমন মেডিক্যাল রিপোর্ট এ দিন অনুব্রতের আইনজীবী তদন্তকারী অফিসারকে জমা দিয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রে খবর। গগন বলেন, “অনুব্রত অসুস্থ। বাড়িতে শুয়ে আছেন।”
পুলিশ আধিকারিককে হেনস্থার হুমকি ও তাঁর পরিবারকে কুকথা বলার অভিযোগের পরেও শাসক দলের দাপুটে নেতার ক্ষেত্রে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন বাড়ছে। জেলা পুলিশ সুপার আমনদীপ বলেছেন, “উনি যে হেতু অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দিয়েছেন, তাই আমরা এই মুহূর্তে কোনও নোটিস পাঠাচ্ছি না।” পুলিশ সূত্রের দাবি, অনুব্রতকে বিশেষ কোনও সুবিধা দেওয়া নয়, আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে। যে ধারায় মামলা হয়েছে, তাতে ১৫ দিনের মধ্যে নোটিস জারি করার কথা বলা আছে। তা হয়েছে। পরে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ হবে।
কড়া পদক্ষেপ না করা হলে শাসক নেতাদের এই প্রবণতা থামবে না বলে দাবি বিরোধীদের। তাদের অভিযোগ, পুলিশ অনুব্রতকে সময় দিয়েছে বলেই একই সুরে শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাও হুমকি দিচ্ছেন। ওই নেতা বিক্রমজিতের যে ভিডিয়ো ছড়িয়েছে, তাতে তাঁর দাবি, ‘ব্র্যান্ড’ অনুব্রত মণ্ডলকে দমানোর চেষ্টা করেছেন বোলপুরের আইসি। আইসি-কে ব্যক্তি আক্রমণ করে কার্যত হুঁশিয়ারি দেন তিনি। বিতর্ক শুরু হতেই বিক্রমজিৎকে সংগঠন থেকে ছ’বছরের জন্য সাসপেন্ড করার কথা জানান টিএমসিপির রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য। পরে বিক্রমজিতের দাবি, ভিডিয়োটি পুরনো এবং দলের বার্তার পরে সেটি তিনি মুছে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “আমি যদি কাউকে আঘাত দিয়ে থাকি, আমি তাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।” পুলিশ সুপার জানান, আইসি-কে সমাজমাধ্যমে টিএমসিপি নেতার হুমকির ঘটনায় সিউড়ি থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। তদন্ত হচ্ছে।
কেষ্টর বিরুদ্ধে ‘চক্রান্ত’ হয়েছে বলে এ দিন ফের দাবি করেছেন তাঁর কৌঁসুলি বিপদতারণ। এসডিপিও-র দফতর চত্বরে তাঁর দাবি, “অনুব্রত চক্রান্তের শিকার।” তবে কারা চক্রান্ত করেছেন ও কী উদ্দেশ্যে, ভাঙেননি তা। কেষ্ট-ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা গগনের দাবি, ওই হুমকি-অডিয়ো ‘এআই’ (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) দিয়ে তৈরি করা। তা হলে কেষ্ট ক্ষমা চাইলেন কেন? গগনের বক্তব্য, “অনুব্রত দলের এক জন সৈনিক। দল যা নির্দেশ দিয়েছে, উনি তা পালন করেছেন। আগামী দিনেও করবেন।” বিপদতারণ বলেন, “অনুব্রত অসুস্থ। তবে তদন্তে আমরা সব রকম ভাবে সহযোগিতা করব।”
পুলিশ সূত্রের দাবি, অনুব্রত এবং আইসি-র ফোন তদন্তের স্বার্থে বাজেয়াপ্ত করা হতে পারে। জেলা পুলিশের এক শীর্ষকর্তা বলেন, “ফোন দু’টি বাজেয়াপ্ত হলে গলার স্বরের নমুনাও ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানো হবে।” তদন্তের স্বার্থে যা করা দরকার, করা হবে বলে জানান পুলিশ সুপারও।