বিধানসভা-আসন বেছে প্রস্তুতিতে আলিমুদ্দিনও
সন্দীপন চক্রবর্তী
বাংলায় কংগ্রেসের পথেই হাঁটতে চলেছে সিপিএম। জেলাভিত্তিক আসন ঝাড়াই-বাছাই করে আগামী বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিতে নামতে চলেছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।
রাজ্যে দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলার পর্যবেক্ষক গুলাম আহমেদ মীর আগেই পরামর্শ দিয়ে গিয়েছিলেন, গত লোকসভা ও তার আগের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল এবং সাংগঠনিক পরিস্থিতির নিরিখে শ’খানেক আসন বেছে নিয়ে ২০২৬ সালের জন্য প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। নিজেদের ঘর আগে গুছিয়ে তার পরে অন্য কোনও দলের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়ে ভাবা যেতে পারে বলে মত ছিল তাঁর। এ বার সিপিএমও রাজ্যে তাদের সম্ভাবনা বিচার করে মোটামুটি তিন ভাগে বিধানসভা আসন ভেঙে নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করতে চলেছে।
আলিমুদ্দিন সূত্রের খবর, আসনের এই তালিকা তৈরির জন্য জেলা কমিটিগুলির কাছে তথ্য ও মত চাওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় কী ভাবে প্রচারে গতি আনা যায়, তা আগে ঠিক করা হবে। তার পরে হবে সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাই। জুন মাসের গোড়ায় দিল্লিতে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক রয়েছে। জুনের শেষ দিকে রয়েছে রাজ্য কমিটির দু’দিনের বৈঠক। ভোট-প্রস্তুতির প্রশ্নে সেখানে আরও আলোচনা হবে বলে দলীয় সূত্রে ইঙ্গিত।
ডানকুনিতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনে প্রথম বার আলাদা অধিবেশন হয়েছিল ভোট সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণের জন্য। তারই পরবর্তী ধাপ হিসেবে এ বার আসন বাছাই শুরু হচ্ছে। সিপিএম সূত্রের খবর, রাজ্য জুড়ে ৫৫-৬০টি আসন বেছে নেওয়া হতে পারে বেশি নজর দেওয়ার জন্য। এই তালিকায় মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, হুগলি, দুই ২৪ পরগনা, বীরভূম, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমানের মতো জেলা থেকে আসন থাকতে পারে। পরবর্তী স্তরে আরও অন্তত দু’রকম আসনের তালিকা হবে। সামগ্রিক বিষয় ছাড়াও কোথায় কোন প্রশ্নে প্রচারে জোর দিতে হবে, সেই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট জেলা নেতৃত্বের কাছ থেকে রিপোর্ট নেওয়া হবে। তার পরে মুখ বেছে রাখার প্রক্রিয়া।
মেরুকরণের আবহে পরপর দু’বার লোকসভা এবং গত ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় শূন্য হয়েছে সিপিএম। গত বছরের (২০২৪) লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে দেখলে বামেদের জন্য আশাপ্রদ ছবি নেই। লোকসভার নিরিখে শুধু মুর্শিদাবাদের রানিনগর বিধানসভা আসনে সিপিএম এগিয়ে। কংগ্রেস এগিয়ে আছে মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলার ১১টি আসনে। তখন অবশ্য বাম ও কংগ্রেসের সমঝোতা ছিল। ফলে এই সব আসনেই দু’পক্ষের ভোট মিশে আছে। কিছু বিধানসভা কেন্দ্রে তারা দ্বিতীয় স্থানেও আছে। সিপিএমের অন্দরমহলের মতে, বাম ও কংগ্রেস সমঝোতা করে লড়লে উত্তর দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও নদিয়া— এই অঞ্চল থেকে বিধানসভায় কিছু আসন বার করা যেতে পারে।
বিজেপি অবশ্য বামেদের দিকে থাকা হিন্দু ভোটের অংশ ভাঙিয়ে আনতে মরিয়া। সেই বিপদ আঁচ করেই সিপিএম ইদানীং বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়েছে।
এ বারের বিধানসভা ভোটেও কি বাম ও কংগ্রেস সমঝোতা হবে? সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক এম এ বেবি বুঝিয়ে দিয়েছেন, জাতীয় স্তরে অবশ্যই বিজেপিকে ঠেকানো প্রথম লক্ষ্য। কেরলে কংগ্রেস-বাম মুখোমুখি লড়াই হলেও অন্য রাজ্যে সমঝোতা হতেই পারে।