‘জেলেও বাবা হয় লকভি’, পাকিস্তানকে কটাক্ষ ওয়েইসির
নিজস্ব প্রতিবেদন
১ জুন: মুসলিম রাষ্ট্র আলজ়িরিয়াতেও সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিদের মদতদাতা হিসেবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের মুখ হয়ে সরব হলেন এমআইএম সাংসদ আসাদুদ্দিন ওয়েইসি। পাকিস্তান সরকার কী ভাবে জঙ্গিদের নিরাপত্তা দেয়, কী ভাবে নিজেদের মাটি থেকে সন্ত্রাসবাদকে ভারতের বিরুদ্ধে কাজে লাগায়, তার বিবরণ তুলে ধরতে গিয়ে ওয়েইসি জানান, আন্তর্জাতিক মহলের চাপের মুখে পাকিস্তান কয়েক জন জঙ্গিকে জেলে ভরলেও তা নেহাতই লোকদেখানো। বস্তুত পাক সরকারের নিরাপত্তা বেষ্টনীতে নিরাপদে এবং বহাল তবিয়তেই রয়েছে জঙ্গিরা।
পহেলগাম হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তানকে কোণঠাসা করতে সব রকম ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে ভারত। ‘অপারেশন সিঁদুরে’র পরে সেই চাপ আরও বাড়াতে নানা দেশে প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে দিল্লি। সে রকমই একটি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন ওয়েইসি। কেন্দ্র নরেন্দ্র মোদী সরকারের তীব্র বিরোধী হলেও আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থানের মুখ হয়ে উঠেছেন তিনি। ভারতের প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে আলজ়িরিয়ায় সফরে গিয়ে প্রবাসী ভারতীয়দের উদ্দেশে বক্তব্য পেশ করার সময় পাকিস্তানের জঙ্গি-ঘনিষ্ঠতা বোঝাতে জঙ্গিনেতা জাকিউর রহমান লকভির উদাহরণ টেনে আনেন ওয়েইসি। আমেরিকা, ভারত-সহ নানা দেশের চাপের মুখে লকভিকে পাক সরকার গ্রেফতার করে জেলে ভরলেও সে যে সন্তানের বাবা হয়েছে, সেই তথ্য তুলে ধরে ওয়েইসি কটাক্ষের সুরে জানান, এ থেকেই বোঝা যায়, পাকিস্তানের জেলে জঙ্গিরা কত কঠোর অনুশাসনের মধ্যে রয়েছে!
ওয়েইসি বলেন, ‘‘২৬/১১-র জঙ্গি হামলার অন্যতম চক্রী জ়াকিউর রহমান লকভি নামে একজন পাকিস্তানি জঙ্গি রয়েছে। পৃথিবীতে এমন কোনও দেশ নেই, যারা একজন জঙ্গিকে জেল থেকে বের হওয়ার সুযোগ দেবে। অথচ লকভি পাকিস্তানের জেলে বন্দি অবস্থায় বাবা হচ্ছে! বাইরে তার স্ত্রী সন্তান প্রসব করছেন! এ থেকেই বোঝা যায়, সন্ত্রাসবাদ নিয়ে পাকিস্তানের মানসিকতা আসলে কী।”
ভারত বহু বছর ধরেই বলে আসছে পাকিস্তান জঙ্গিদের আঁতুরঘর। বিশ্বের নানা দেশে জঙ্গি হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের সরাসরি যোগের প্রমাণও মিলেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে নানা বিধিনিষেধের পাশাপাশি বেশ কয়েক বার দেশটিকে ফাইনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ)-এ ধূসর তালিকায় ফেলা হয়েছে। এই ধূসর তালিকায় ফেলা হলে কোনও দেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক নানা অর্থসাহায্য পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। সম্প্রতি পাকিস্তান সেই ধূসর তালিকার বাইরে আসার বিষয়টি তুলে ধরে ওয়েইসি দাবি করেন, ফের পাকিস্তানকে এফএটিএফের ধূসর তালিকাভুক্ত করা দরকার। তাঁর মতে,
পাকিস্তানকে ফের ধূসর তালিকাভুক্ত করলে শুধু যে জঙ্গিদের অর্থসাহায্যের পথ বন্ধ হবে তাই নয়, এই সব জঙ্গিদের বিচারও দ্রুত হবে। এই প্রসঙ্গে পাকিস্তানি জঙ্গি সাজ়িদ মিরের প্রসঙ্গ টানেন ওয়েইসি। এফএটিএফ-এর ধূসর তালিকা থেকে নাম সরাতে মরিয়া পাকিস্তান সরকার সাজ়িদ মিরকে ‘মৃত’ বলে ঘোষণা করেচিল। পরে জানা যায়, পাকিস্তানের মাটিতেই বহাল তবিয়তে বেঁচে রয়েছে এই
পাক জঙ্গি।
সন্ত্রাসের পাকিস্তানের মদতের অসংখ্য উদাহরণ থাকলেও তা নিয়ে বিশ্বের একাধিক দেশের গা-ছাড়া মনোভাবের তীব্র সমালোচনা করে ওয়েইসি বলেন, “সন্ত্রাসবাদের
সমস্যা শুধু দক্ষিণ এশিয়ার সমস্যা নয়। আমরা বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি। আপনারা কি চান এই হত্যালীলা
দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ুক? সারা বিশ্বে শান্তির স্বার্থেই সন্ত্রাসবাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক পাকিস্তানকে নিয়ন্ত্রণ করা হোক। সে কারণেই তাদের ফের এফএটিএফ-এর ধূসর তালিকায় ফিরিয়ে
আনা দরকার।’’
এর মধ্যেই সিন্ধু জলচুক্তি বাতিল নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তান ফের তোপ দাগায় পাল্টা জবাব দিয়েছে নয়াদিল্লি। তাজ়িকিস্তানে রাষ্ট্রপুঞ্জের এক অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে ভারত জানিয়েছে, পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জঙ্গিরাই ক্রমাগত ভারতে হামলা চালিয়ে সিন্ধু জলচুক্তির একাধিক শর্ত ভঙ্গ করেছে। এই অবস্থায় ভারতের কঠোর পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ নিছকই অর্থহীন।