জলের চাপ নেই, নির্ভরতা ভূগর্ভস্থ জলে! নথিতে স্বীকার পুরসভার
দেবাশিস ঘড়াই
পানীয় জলের মূল লাইনে জলের চাপ নেই। তাই জোগানের জন্য ভরসা নলকূপ আর ভূগর্ভস্থ জল। শহরের বুকে কলকাতা পুরসভার এমনই অবস্থা ৫৯ ও ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডে। সরকারি নথিতে সে কথা স্বীকারও করেছে তারা। পুরনো, সরু ও বাঁকা পাইপলাইনের কারণে জলের চাপ এতটাই কমে গিয়েছে যে, মানুষ বাধ্য হচ্ছেন ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার করতে। এই পরিস্থিতি বদলাতে পুরসভা নতুন পাইপলাইন বসানোর চার কোটি টাকার প্রকল্প আনছে।
পুর নথি বলছে, পার্ক সার্কাস বুস্টার পাম্পিং স্টেশন থেকে সরবরাহ করা পরিস্রুত জল যখন চার নম্বর রেল সেতু পার হয়ে ৫৯ ও ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডে পৌঁছয়, তখন সেখানে জলের চাপ থাকে না বললেই চলে। কারণ, সেতুর নীচ দিয়ে যাওয়া পুরনো পাইপে প্রবাহের ঘর্ষণ এবং বাঁকের জন্য তৈরি হয় ‘হেড লস’। জলের চাপ কমে গেলে অনেক জায়গায় জল পৌঁছয়ই না। যার ফল, বাসিন্দাদের বড় অংশ বাধ্য হন নলকূপ বা ভূগর্ভস্থ জলের উপরে নির্ভর করতে। আর এই নির্ভরতাই নতুন সঙ্কটের ইঙ্গিত। কারণ, শহরের অনেক অংশেই ভূগর্ভস্থ জল দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।
পুরসভার উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা ও রেল কর্তৃপক্ষ যৌথ ভাবে সম্প্রতি ওই এলাকা পরিদর্শন করেন। এর পরেই সিদ্ধান্ত হয়—দু’টি ধাপে ৬০০ মিলিমিটার ব্যাসের পাইপলাইন বসানো হবে। প্রথম ধাপে দরগা রোড থেকে তিলজলা রোড পর্যন্ত নতুন পাইপ বসবে। দ্বিতীয় ধাপে রেললাইনের নীচ দিয়ে এইচডিডি প্রযুক্তিতে পাইপ পাতা হবে। এতে ট্রেন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটবে না।
দু’টি ধাপ মিলিয়ে খরচ হবে প্রায় ৪ কোটি ৫ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে প্রথম ধাপের খরচ ৮৭ লক্ষ ৮২ হাজার ৭৮৭ টাকা এবং দ্বিতীয় ধাপের ৩ কোটি ১৭ লক্ষ ৭৬ হাজার ৩২ টাকা। অর্থ বরাদ্দ হবে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের অনুদান থেকে। দু’টি কাজের জন্য আলাদা করে ই-টেন্ডার ডাকা হবে।
পুরসভা জানিয়েছে, নতুন পাইপ বসে গেলে ৫৯ ও ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা নিরবচ্ছিন্ন পরিশোধিত জল পাবেন। ভূগর্ভস্থ জলের উপরে নির্ভরতা কমবে তাঁদের। একই সঙ্গে অন্য ওয়ার্ডগুলিতেও এই মডেল প্রয়োগ করা যেতে পারে, যেখানে জলের চাপ প্রায় নেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জলের চাপ কমে যাওয়ার ফলে শহর জুড়ে ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহারে হু হু করে বাড়ছে নিষ্কাশনের মাত্রা। ফলে, এই প্রকল্পের সাফল্যের উপরে অনেক কিছু নির্ভর করছে।
জলের চাপ প্রায় না থাকার কথা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে পুর নথিতে।