নয়া বিধিতে অখুশি নতুন পরীক্ষার্থীরাও
আর্যভট্ট খান
এসএসসি পরীক্ষায় যাঁরা প্রথম বসতে চলেছেন, সেই সব পরীক্ষার্থীরাও এ বার এসএসসির নতুন বিধি নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘পরীক্ষার নতুন বিধিতে তো আমাদের শুরু থেকেই পিছিয়ে রাখা হয়েছে। ২০১৬র যোগ্য চাকরিহারাদের তুলনায় অভিজ্ঞতায় পিছিয়ে থাকা দশাতেই অসম যুদ্ধে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।’’
নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশে যে বর্ধিত শূন্য পদের ভিত্তিতে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে, তা-ও বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে ওই পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ। তাঁদের বক্তব্য, ১০ বছর বাদে ফের পরীক্ষা হচ্ছে। অনেক শিক্ষক অবসর নিয়েছেন। এর থেকে আরও অনেক বেশি শূন্য পদ থাকার কথা। নতুন পরীক্ষার্থীদের একাংশ এ-ও জানাচ্ছেন, এসএসসির বিধি পরিবর্তনের দাবিতে মামলা করার বিষয়ে তাঁরা আইনজীবীদের পরামর্শ নিচ্ছেন। ২০১৬ সালের এসএসসি প্যানেলে বেনিয়মের অভিযোগে সবার আগে সরব সে-বারের বঞ্চিত চাকরিহারারাও নতুন বিধির নানা গলদে প্রশ্ন তুলে ইতিমধ্যে মামলা করেছেন।
এসএসসির নবম থেকে দ্বাদশের নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির দাবিতে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল নিউ এসএসসি এসএলএসটি গ্রুপ সি ডি একতা মঞ্চ’ মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির পাদদেশে এক বছরের উপরে ধর্না চালিয়েছে। ওই সংগঠনের আহ্বায়ক সৌরভ মুদলী বলেন, ‘‘পরীক্ষা শুরুর আগেই আমাদের ১০ নম্বরে পিছিয়ে শুরু করতে হচ্ছে। শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার জন্য ২০১৬ সালের যোগ্য চাকরিহারা এবং চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকদের কেন আলাদা করে ১০ নম্বর দেওয়া হচ্ছে?’’
কিন্তু এসএসসির যুক্তি, অভিজ্ঞ শিক্ষকদের নম্বর আলাদা ধার্য করা হলেও এ বার নবম থেকে দ্বাদশের শূন্য পদের সংখ্যাও ২০১৬-র তুলনায় বাড়ানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত ২৭ মে নবান্ন থেকে ঘোষণা করেছিলেন, নবম-দশমের জন্য ১১,৫১৭টি শূন্য পদ এবং একাদশ-দ্বাদশের জন্য ৬৭১২টি শূন্য পদ অতিরিক্ত দেওয়া হয়েছে। তাই নতুনদের যথেষ্ট সুযোগ থাকছে। নতুন পরীক্ষার্থীদের মতে কিন্তু, প্রায় দশ বছর বাদের এসএসসি পরীক্ষায়, স্বচ্ছ হিসেবে, আরও বেশি শূন্য পদ থাকার কথা।
কেন এ কথা বলছেন তাঁরা? নতুন এক পরীক্ষার্থীর জানান, ২০২২ সালে ২১ জুলাইয়ের সভামঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, বহু শিক্ষক পদ শূন্য আছে। কিন্তু আদালতে মামলার জটিলতায় তিনি সেই শূন্য পদে নিয়োগ করতে পারছেন না। হাই কোর্ট তখনকার শিক্ষাসচিব মনীশ জৈনের কাছে শূন্য পদের হিসাব জানতে চায়। তখন আদালতে শিক্ষাসচিবের হলফনামায় নবম-দশমের ১৩,৮৪২টি শূন্য পদ এবং একাদশ-দ্বাদশে ৫৫২৭টি শূন্য পদের কথা বলা হয়। প্রধান শিক্ষকদের শূন্য পদও ছিল ২৩২৫টি। এক চাকরিপ্রার্থীর প্রশ্ন, ‘‘২০২৫ সালে দেখা গেল, নবম দশমের জন্য অতিরিক্ত শূন্য পদ ঘোষণা করা হয়েছে ১১,৫১৭টি। একাদশ, দ্বাদশে অতিরিক্ত শূন্য পদ ঘোষণা করা হয়েছে ৬৯১২টি। ২০২২ থেকে ২০২৫, তিন বছরে কোন জাদুতে নবম-দশমের ঘোষিত শূন্য পদ কমেই গেল?’’ একাদশ-দ্বাদশের শূন্য পদ সামান্য বাড়লেও তা তিন বছরের জন্য পর্যাপ্ত বলে মনে করছেন না পরীক্ষার্থীরা।
ইন্টারভিউ এবং ক্লাসে পড়ানোর উপস্থাপনায় নতুন পরীক্ষা-বিধিতে ২০ নম্বর করে দেওয়া হয়েছে। নতুন পরীক্ষার্থীদের দাবি, মৌখিক ক্ষেত্রে নম্বর বেশি থাকলে দুর্নীতির সম্ভাবনা তৈরি হয়। শঙ্কর সামন্ত নামে এক পরীক্ষার্থীও ২০১৬ সালের চাকরিহারা শিক্ষকদের সঙ্গে একযোগে তাঁদের পরীক্ষায় বসানোয় আপত্তি করেছেন। যদিও শিক্ষা দফতরের এক কর্তার দাবি, ‘‘লিখিত পরীক্ষায় নম্বর বেড়েছে। নতুনরা তো পড়াশোনার মধ্যে আছেন। লিখিত পরীক্ষা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতায় তাঁদের ভাল নম্বর পাওয়ার সুযোগ আছে।’’