রাষ্ট্রপুঞ্জের সন্ত্রাস বিরোধী কমিটিতে সেই পাকিস্তান
নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি, ৪ জুন: অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সিঁদুরের তত্ত্ব নিয়ে আবেগের হাওয়া গরম করতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী। অন্য দিকে, দেশাত্মবোধের প্রশ্নে কেন্দ্রের পাশে থাকার পর এখন বিরোধীরা বলতে শুরু করেছেন, ‘বিশ্বগুরুর’ কূটনীতি ব্যর্থ। আমেরিকার নির্দেশে ভারতকে পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাত বিরতি করতে হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। এই আবহাওয়ায় রাষ্ট্রপুঞ্জের সন্ত্রাস বিরোধী কমিটিতে পাকিস্তানের বসা নিয়ে ঘোর অস্বস্তি তৈরি হল সাউথ ব্লকে।
গত ২২ এপ্রিলের পর থেকে বিভিন্ন দেশে দিল্লির দৌত্যের অন্যতম মূল কথাই হল, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের পাচারকারী পাকিস্তান। অথচ রাষ্ট্রপু্ঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের ‘তালিবান নিষেধাজ্ঞা কমিটি’র চেয়ারম্যান করা হচ্ছে সেই দেশকেই। পাশাপাশি পরিষদের ‘সন্ত্রাস বিরোধী কমিটি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবেও কাজ করবে এই রাষ্ট্র।
কূটনৈতিক শিবিরের মতে, বিষয়টি ভারতের কাছে ‘পাহাড় ভেঙে পড়ার’ মতো। রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিবের সঙ্গে পহেলগাম নিয়ে কথা বলাই শুধু নয়, পি-৫ রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে, পাকিস্তান সরকারের মদতপ্রাপ্ত আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদের ভাষ্য তৈরি করতে কসুর করেনি সাউথ ব্লক। চেষ্টা চলেছে তাদের কূটনৈতিক ভাবে একঘরে করে দেওয়ার। এর পরেও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসলামাবাদকে এক বারও ভৎর্সনা করেননি, বরং সাধুবাদ দিয়েই চলেছেন সংঘাত বিরতির জন্য। তবে নিরাপত্তা পরিষদ যে এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানকে বিভিন্ন কমিটির জন্য বেছে নিয়েছে, তা চরম অস্বস্তির বলেই মত নয়াদিল্লির একাংশের। সার্বিক ভাবে ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে, পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবিরোধী কমিটির মধ্যে রেখে এবং তালিবানের শান্তি প্রয়াসের সঙ্গে যুক্ত করে আদতে শাহবাজ শরিফের উপর দায়বদ্ধতার চাপই তৈরি করতে চাওয়া হচ্ছে।
তালিবান নিষিদ্ধকরণ কমিটি (যা ১৯৮৮ কমিটি নামে পরিচিত) কিছু পদক্ষেপের জন্য দায়বদ্ধ। তার মধ্যে রয়েছে তালিবানের সঙ্গে সংযুক্ত ব্যক্তি বা সংগঠনের ভ্রমণ সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা বা না করা, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা বা না করা, অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার মতো বিষয়। এই ক্ষেত্রগুলিতে আফগান মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে সক্রিয় হয় এই কমিটি। রাশিয়া ও গায়না কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে থাকছে।
পাকিস্তান আগামী এক বছরের জন্য (জুলাই ২০২৫-জুন ২০২৬) রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে কাজ করবে। পদাধিকার বলেই নিয়ম অনুযায়ী ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রতিটি রাষ্ট্রকেই কিছু সময়ের জন্য বিভিন্ন কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই নিয়ম অনুযায়ীই পাকিস্তান এসেছে কিন্তু যে সময়ে এসেছে তা ‘ভাগ্যের পরিহাস’ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, ভারত এই মুহূর্তে অস্থায়ী সদস্য পদে নেই ঠিকই কিন্তু ‘পি-৫’ ভুক্ত কিছু রাষ্ট্র ও ডেনমার্কের মতো অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলির উপর প্রভাব খাটানোর জায়গায় রয়েছে। ফলে পাকিস্তানের যে কোনও ভারত বিরোধী পরিকল্পনাকে প্রতিহত করতে পারা সম্ভব এই কমিটির ভিতরেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, ফ্রান্স, রাশিয়া, ডেনমার্ক এবং আলজেরিয়ার মতো রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করে রাষ্ট্রপুঞ্জের ভিতরে ইসলামাবাদের চাল ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টা করবে নয়াদিল্লি। এই বছরের জুলাই থেকে নিরাপত্তা পরিষদে অস্থায়ী সদস্যের দায়িত্ব পাচ্ছে পাকিস্তান এবং প্রথম দিন থেকেই তারা ভারত-বিরোধী ভাষ্য তৈরির কাজ শুরু করবে বলে আশঙ্কা।
এটা ঘটনা যে তালিবান সরকারের সঙ্গে মোদী সরকারের ঘনিষ্ঠতায় কিছুটা সতর্ক পাকিস্তান। তারা চিনের সাহায্যে আফগানিস্তানে নিজেদের হৃত প্রভাব পুনরুদ্ধারে সক্রিয়। ১৯৮৮ কমিটির কাজই হল, তালিবান যাতে আফগানিস্তানের শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত না করতে পারে, সে দিকে নজর রাখা। ফলে এই কমিটি হাতে থাকলে কাবুলের সঙ্গে দর কষাকষিতে কিছুটা সুবিধা হওয়ার কথা পাকিস্তানের।