কিডনি পাচার চক্রে জড়িত সন্দেহে ধৃত আইনজীবী
নিজস্ব সংবাদদাতা
কিডনি পাচার চক্রে জড়িত সন্দেহে বৃহস্পতিবার রাতে আলিপুর আদালতের এক আইনজীবীকে গ্রেফতার করল অশোকনগর থানার পুলিশ। ধৃতের নাম প্রদীপকুমার বর। তাঁর বাড়ি বাঁশদ্রোণীতে।
শুক্রবার বারাসত জেলা আদালতে প্রদীপকে তোলা হলে বিচারক
চার দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠান।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কিছু দিন আগে অশোকনগরের বাসিন্দা এক মহিলাকে চাপ দিয়ে কিডনি বিক্রি করানোর অভিযোগ উঠেছিল বিকাশ ঘোষ ওরফে শীতল নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ওই মহিলা শীতলের কাছ থেকে ৬০ হাজার
টাকা ধার নিয়েছিলেন। সুদে-আসলে টাকার পরিমাণ ২ লক্ষ পেরিয়েছিল। ওই টাকা শোধ করতে হবে বলে শীতল চাপ দিচ্ছিল। মহিলা কিছু টাকা মেটাতে পারেন। অভিযোগ, বাকি টাকার জন্য তাঁকে কিডনি বিক্রির প্রলোভন দেখায় শীতল। মহিলাকে ৬ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে বলেও
কথা দেয়।
কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মহিলা কিডনি দেন। পুলিশ জানিয়েছে, মহিলাকে ৬ লক্ষ টাকা দেওয়াও হয়েছিল। পুলিশ ওই ঘটনায় শীতলকে গ্রেফতার করে। তাকে জেরা করে কিডনি পাচার চক্রে জড়িত আরও চার জনকে ধরা হয়। সকলেই এখন জেলে। এই
পাঁচ জনকে জেরা করে পুলিশ আইনজীবী প্রদীপের সন্ধান পায়। পুলিশ নোটিস পাঠিয়ে তাঁকে অশোকনগর থানায় ডাকে।
পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ওই আইনজীবী থানায় আসেন। তাঁকে দীর্ঘ সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু প্রদীপ সে সবের সদুত্তর দিতে পারেননি। এর পরেই রাতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশের দাবি, প্রদীপ সরাসরি কিডনি পাচার চক্রে জড়িত।
চক্রের হয়ে আইনি দিক সামলাতেন তিনি। এর জন্য কমিশন পেতেন। এ ছাড়া, ২০০-৩০০ টাকার হলফনামা করে দিয়ে ৮-১০ হাজার টাকা নিতেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, হলফনামা করার নির্দিষ্ট এলাকা থাকে।
যেমন, হাবড়া-অশোকনগরের বাসিন্দারা আলিপুরে গিয়ে হলফনামা করতে পারেন না। কিন্তু প্রদীপ বেআইনি ভাবে রাজ্যের যে
কোনও প্রান্তের মানুষের হলফনামা আলিপুর থেকেই করে দিতেন
বলে অভিযোগ।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের জেরা করে জানা গিয়েছে, কিডনি
চক্রের সদস্যেরা একটি কিডনির দাম নিত ১৬ লক্ষ টাকা। দাতাকে দেওয়া হত মাত্র ৫-৬ লক্ষ টাকা। এখনও
পর্যন্ত চক্রের সদস্যেরা ৩০টি
কিডনি বিক্রি করেছে বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, পাচার চক্রের বাকি সদস্যদের খোঁজ চলছে। ধৃতদের জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, উত্তর এবং দক্ষিণ ভারতের মানুষের কাছে কোনও ভাবে কলকাতা সম্পর্কে এই বার্তা পৌঁছে গিয়েছিল যে, এখানে সহজেই কিডনি পাওয়া সম্ভব। সেই কারণে কিডনির প্রয়োজন পড়লে মানুষ এখানে ভিড় করতেন।