মধুমেহর ভয়েই হোক বা স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বেছে নেওয়ার তাগিদে— খাদ্যতালিকা থেকে চিনি বাদ দিচ্ছেন অনেকেই। বিকল্প হিসেবে রান্নাঘরে জায়গা করে নিচ্ছে গুড়, মধু। আর রূপচর্চায়? সেখানে কিন্তু চিনি তার দাপট বজায় রেখেছে। রূপচর্চায় জরুরি গুড়, মধুও। প্রাকৃতিক উপাদানে ত্বকের ট্যান তুলতে কিংবা তা আরও উজ্জ্বল করে তুলতে এগুলির জুড়ি মেলা ভার। কেমন হতে পারে এর ব্যবহার?
জেল্লা বাড়ায় চিনি
চামড়ার মৃত কোষ পরিষ্কার করতে, বলিরেখা কমাতে চিনি ব্যবহার করা যায়। রূপবিশেষজ্ঞ মৌসুমী মিত্র জানাচ্ছেন, এক সময়ে ওয়্যাক্সিং করার জন্য চিনি গলিয়ে তা ব্যবহার করা হত। সেটাকে বলা হত, ‘সুগারিং’। এক্সফোলিয়েশনের জন্য চিনি খুবই উপকারী। ত্বকের কালচে দাগ-ছোপ কমাতে সাহায্য করে, ত্বক আরও টানটান করে তুলতেও। তাই কনুই, হাঁটুতে কালচে দাগ-ছোপ থাকলে লেবুর রসের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে সেখানে মালিশ করার পরামর্শ
দিচ্ছেন মৌসুমী।
ঘরেই চিনি দিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে নেওয়া যায়। এর জন্য একটি পাত্রে দু’চামচ করে চিনি, কফি, মধু মেশাতে হবে। মধু ত্বকে সহ্য না হলে অলিভ অয়েলও ব্যবহার করা যায়। মিশ্রণটি ত্বকে ভাল করে মালিশ করে ১৫ মিনিট মতো রেখে দিতে হবে। এর পর তা ধুয়ে নিয়ে ময়শ্চারাইজ়ার লাগিয়ে নিতে হবে। এই পদ্ধতি
ত্বকে রক্ত চলাচল বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে ত্বক আরও উজ্জ্বল দেখায়। কিছু ক্ষেত্রে ত্বকে স্ট্রেচ মার্কস দেখা দেয়, বিশেষত হঠাৎ করে ওজন বাড়লে, কমলে কিংবা সন্তান প্রসবের পরে। এই সময়ে চিনি দিয়ে ঘরোয়া পদ্ধতিতে তৈরি কিছু মিশ্রণ মালিশ করলে সেই দাগও হালকা হয়ে আসে। চিনির সঙ্গে এসেনশিয়াল অয়েল, ভিটামিন ই অয়েল
মেশানো যায়।
গ্লাইকলিকে ভরপুর গুড়
পুষ্টিবিদদের মতে, চিনির তুলনায় গুড় বেশি স্বাস্থ্যকর। আবার ত্বকের জেল্লা বাড়াতেও গুড় ভীষণ উপকারী। প্রচুর পরিমাণে গ্লাইকলিক অ্যাসিড থাকে গুড়ে। তাই রূপচর্চায় এই উপাদান নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকের টানটান ভাব বাড়ানো যায়। ত্বকের ময়লা একেবারে পরিষ্কার করা যায়। এ ছাড়াও, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি-তে ভরপুর গুড়।
মৌসুমী জানাচ্ছেন, ত্বকে গুড় সরাসরি লাগাতে নেই। প্যাক বানাতে দু’চামচ করে গুড়, মধু এবং টক দই একটি পাত্রে মিশিয়ে নিতে হবে। মুখে লাগিয়ে রাখতে হবে অন্তত ১৫ মিনিট। পরে হালকা গরম জলে তা ধুয়ে নিতে হবে। এই প্যাক ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে। স্ক্রাবিংয়ের জন্য গুড়, লেবুর রস ও বেসন সমপরিমাণে একটি পাত্রে মিশিয়ে নিতে হবে। প্যাকটি ত্বকে মালিশ করে ১৫ মিনিট মতো লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের বলিরেখা, দাগ মিলিয়ে দিতে সাহায্য করে।
আর্দ্রতা ধরে রাখে মধু
মধুকে বলা হয় ‘ন্যাচারাল হিউমেকট্যান্ট’। অর্থাৎ, রূপচর্চায় মধু ব্যবহার করলে তা ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। ত্বক টানটান রাখবে। মধুতে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি, অ্যান্টিব্যাক্টিরিয়াল উপাদানও রয়েছে। তাই ত্বকে যদি কোনও ধরনের জ্বালা-অস্বস্তি অনুভূত হয়, তা কমাতে সাহায্য করে মধু। এ ছাড়াও, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের কাজ করে মধু। নিয়মিত ব্যবহারের ফলে ত্বকে র্যাশ কমে আসে। কমে ব্রণর দাগও।
সাধারণত, যে কোনও প্যাকেই মধু ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সঙ্গে কেমন ধরনের উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে, তা খেয়াল রাখা জরুরি, মত মৌসুমীর। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য যেমন মধুর সঙ্গে গুড় এবং মুলতানি মাটি মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। সাধারণ ত্বকের ক্ষেত্রে মধু ও গুড়ের সঙ্গে আটা কিংবা ওটমিল ব্যবহার করা যায়। আবার কলা ও মধু মিশিয়ে প্যাক বানালেও ত্বকের জন্য তা ভীষণ উপকারী হয়। ট্যান তুলতে আবার মধুর সঙ্গে টক দই ব্যবহার করা যায় প্যাকে।
মনে রাখা জরুরি
- যে কোনও প্যাক লাগানোর আগে বুঝতে হবে কোন ধরনের ত্বকে কোন উপাদান ব্যবহার করা যায়। নয়তো ত্বকে অস্বস্তি তৈরি হবে।
- মধু, চিনি বা গুড়, যে কোনও উপাদান দিয়ে তৈরি প্যাকেই দুধ ব্যবহার করা যায়। দুধ ত্বক এক্সফোলিয়েট করতে সাহায্য করে। ফলে ত্বক সতেজ ও পরিষ্কার থাকে।
- ফল বা দই প্যাকে ব্যবহার করলে সেই প্যাক পরে আবার ব্যবহারের উদ্দেশে ফ্রিজে তুলে রাখা উচিত নয়।
- চিনি দিয়ে স্ক্রাব করার সময়ে বেশি জোরে তা মালিশ না করার পরামর্শ দিচ্ছেন মৌসুমী। রোজ এক্সফোলিয়েশনেরও প্রয়োজন নেই।
মধু, চিনি, গুড়ের মতো উপাদান দিয়ে রূপচর্চার পরে, ময়শ্চারাইজ়ার বা বাইরে বেরোলে সানস্ক্রিন লাগাতে ভুলবেন না।
ঐশী চট্টোপাধ্যায়
মডেল: অনন্যা দাস;
ছবি: জয়দীপ মণ্ডল