খুঁটিনাটি
ডিটেকটিভের পর্যবেক্ষণ শক্তি কেমন হবে, সেই পাঠের মাস্টারমশাই যে ফেলুদার কাছে শার্লক হোমস (ছবি) বই আর কেউ নন, তা তো বলাই আছে সত্যজিতের ফেলু-কাহিনিতে। আর্থার কোনান ডয়েলের মানসপুত্র ঠিক কেমন ও কতটা ছায়া ফেলেছেন বাংলা গোয়েন্দাগল্পে, এমনকি খতিয়ে দেখলে বাঙালির আর এক অতি প্রিয় বিদেশি চরিত্র টিনটিনও, সত্যজিতের ভুবন খুঁটিয়ে দেখলে আবিষ্কার করা যাবে অমূল্য রত্নসূত্র। কিংবা তাঁর গল্পের পরিচিত, অনামা বা বিস্মৃতপ্রায় ড্রাইভার-চরিত্ররা— গল্পে বা ছবিতে কমবেশি ভূমিকা আছে যাঁদের, তাঁরা কি উঠে এসেছিলেন বাস্তব জীবন থেকে? ফেলু-আখ্যান বই হয়ে ওঠার যাত্রায় নতুন করে আঁকা ছবিতে কেমন করে ফেলুদার চেহারা হয়ে ওঠে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়-সদৃশ, মন্দার বোস বা নায়ক-এর অরিন্দম কোন ‘ড্রিঙ্ক’ খায়, খুঁটিনাটি দেখেছেন প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, সত্যজিৎ-এর টুকিটাকি বইয়ে। ভাষা পাবলিশার্সের ‘বিসর্গ চটজলদি সিরিজ়’ (বইয়ে ছাপা হয়েছে ‘বিস্বর্গ’)-এর ছোট্ট পকেটবই।
এই দ্রোহকালে
যে কোনও দেশ ও ভাষার সাহিত্যের ইতিহাস দেখলেই পাওয়া যাবে, রাজনৈতিক উপন্যাস সেখানে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। বাংলা সাহিত্যেও তার ব্যত্যয় হয়নি। তবু এ প্রশ্ন অমূলক নয়, পশ্চিমে যে ভাবে রাজনৈতিক উপন্যাসের চর্চা হয়ে থাকে, ভারতে বা বাংলায় তার অনুশীলন ও আবেদন কি তেমনই? উত্তরের এষণায় ছাপাখানার গলি পত্রিকা আয়োজন করেছে দ্বিতীয় ‘নাসের হোসেন স্মারক বক্তৃতা’, ১৩ জুন বেঙ্গল থিয়োসফিক্যাল সোসাইটি-তে সন্ধ্যা ৬টায়। ‘বাংলার রাজনৈতিক উপন্যাস বনাম দ্রোহকালের আখ্যান’ নিয়ে বলবেন সাধন চট্টোপাধ্যায়। পত্রিকার নতুন সংখ্যার মোড়ক উন্মোচনও হবে, গুণিজন-উপস্থিতিতে।
জাদুবাস্তব
উপনিবেশবাদ যেখানেই গেছে, স্থানীয় ভাষা-সংস্কৃতিতে জোর খাটানোর চেষ্টা করেছে। মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকায় স্প্যানিশের দখলদারি, স্থানীয় আবহমান ভাষা-সংস্কৃতিতে আঘাত তার প্রমাণ। কালক্রমে সংঘাত পেরিয়ে সংমিশ্রণও ঘটে স্পেনীয় ও স্থানীয় সংস্কৃতির, লাতিন আমেরিকা নামে পরিচিত বিস্তৃত ভূখণ্ডে জেগে ওঠে অনন্য এক সংস্কৃতি। জাদুবাস্তবতার হাত ধরে সাহিত্যে আসে বিপ্লব, রূপকের ছলে সেখানে স্বৈরতন্ত্র-বিরোধিতা। হোর্হে লুই বোর্হেস, গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের মতো লেখকদের চুম্বকে লাতিন আমেরিকার সাহিত্যে জাদুবাস্তব নিয়ে আলোচনার উদ্যোগ করেছে ‘অনুষা’, অশ্বিনী দত্ত রোডে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাসভবনে, ৮ জুন বিকেল ৫টায়। বলবেন তরুণ কুমার ঘটক, মালবিকা ভট্টাচার্য ও শুক্তি রায়।
উত্তরে বইমেলা
ধুলোহীন মেলা প্রাঙ্গণ। বৃষ্টির শব্দ। বইয়ের গন্ধ। ঝোলাভর্তি বই। অন্য রকম পরিবেশে বইপ্রেমী মানুষের ভিড় বাড়ে। প্রথম ‘উত্তর কলকাতা বইমেলা’ হবে বর্ষায়, শ্যামবাজার এ ভি স্কুলে। আয়োজনে দেবপ্রিয় ঘোষ মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন, সহযোগিতায় কলকাতা ক্রিয়েটিভ পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বিদ্যালয়ের প্রাক্তনীরা। থাকছে প্রায় কুড়িটি প্রকাশনা; স্কুল-কলেজের পড়ুয়ারা পরিচয়পত্র দেখালেই পাবে বিশেষ উপহার— বই। মেলা ১০ থেকে ১৫ জুন, দুপুর ৩টে-রাত ৯টা, শনি-রবি দুপুর ১টা থেকে। উদ্বোধন করবেন পবিত্র সরকার, শোনা যাবে সেতার বাদন, রবীন্দ্রনাথের গান। ‘কলকাতা কথকতা’র প্রদর্শনী, সাহিত্যসভা, বক্তৃতা, কবি সম্মেলন, স্বরচিত গল্পপাঠ, কী নেই!
সাধন-পথ
“আমি চাই, চৈতন্যলীলা-কে মানুষ মনে রাখুক বিনোদিনীর জন্য।” তাই নাটক হাউসফুল, কাগজে প্রশংসা সত্ত্বেও গিরিশ ঘোষের নির্দেশে দিনের পর দিন এ নাটকের মহড়া দিতে হয় বিনোদিনীকে। তার প্রস্তুতিপর্বে নাট্যাচার্য জানান শ্রীরামকৃষ্ণের সাধনার কথা: দাস্য, সখ্য, বাৎসল্য, মধুর ভাবে। রাধাভাবে সাধনায় অন্তরে-বাইরে তিনি যেন নারী; রাসমণির দুর্গোৎসবে ভাবে বিহ্বল হয়ে প্রতিমাকে আরতি, নৃত্যগীত নিবেদন তারই অভিজ্ঞান। এই দৃষ্টান্ত বদলে দেয় বিনোদিনীকেও, অভিনয়ের সাধনায় মঞ্চে বদলে যায় তাঁর সর্বসত্তা। সেই অভিনয় দেখতে আসেন স্বয়ং শ্রীরামকৃষ্ণ, মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করেন ‘চৈতন্য হোক’ বলে। রাকেশ ঘোষের রচনায়, শান্তনু দাসের নির্দেশনায় ‘কল্যাণী কলামণ্ডলম’-এর নতুন নাটক রাধারামকৃষ্ণ, ৯ জুন সন্ধে সাড়ে ৬টায়, অ্যাকাডেমি মঞ্চে।
শহরের ইতিকথা
এশিয়াটিক সোসাইটি তো ছিলই, সাধারণ্যে ইতিহাস সচেতনতা বাড়াতে জন্ম হয় ‘ক্যালকাটা হিস্টোরিক্যাল সোসাইটি’র। ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন, সংরক্ষণ-উদ্যোগের পাশাপাশি এখান থেকে বেরোত পত্রিকা বেঙ্গল পাস্ট অ্যান্ড প্রেজ়েন্ট (ছবিতে ওল্ড কোর্ট হাউস কর্নার, পত্রিকা থেকে), ঔপনিবেশিক প্রাক্-ঔপনিবেশিক বহু স্মৃতি তার পাতায়। স্মৃতি সংরক্ষণের চেষ্টার সঙ্গে স্মৃতি ধ্বংসের অভিজ্ঞতাও হয়েছে কলকাতার। ক্যালকাটা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট-এর কর্মকাণ্ডে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ তৈরি-সহ উন্নয়নের জেরে বহু বাড়ি মুছে যায় শহর থেকে। গত ৩১ মে বাংলা আকাদেমি সভাঘরে কৌস্তুভমণি সেনগুপ্ত বললেন বিশ শতকের কলকাতার এই দুই ধারা নিয়ে। মহানির্বাণ কলকাতা রিসার্চ গ্রুপ-এর ‘সিটি লাইটস’ বক্তৃতামালার শেষ আয়োজন ছিল এটি; আটটি বক্তৃতায় শহরের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাস। শেষে শহরের রূপ-রস-গন্ধ মেশা অতীত চেনার মূলসূত্রটি ধরিয়ে দিলেন অধ্যাপক রণবীর সমাদ্দার।
আনন্দ-আবহে
১৯০৯ সালের ২৩ মে, বাগবাজারে ‘মায়ের বাড়ি’তে পা রাখেন সারদা দেবী। শ্রীরামকৃষ্ণের অবর্তমানে নবপ্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের দিক-নির্দেশনার ভার নিয়েছিলেন আগেই, কলকাতায় এই বাড়িতে তাঁর অবস্থান ঘিরে ভাবান্দোলন পায় অভূতপূর্ব উদ্দীপনা। এই দিন তথা তিথিটির গুরুত্ব তাই অন্য রকম। গত ৩০ মে হয়ে গেল সেই ‘শুভ পদার্পণ উৎসব’ উদ্যাপন। উদ্বোধন পত্রিকা আনন্দ-আবহে করেছিল একগুচ্ছ উদ্যোগ। নতুন বইয়ের প্রকাশ ছাড়াও তাদের ‘আঁকিবুকি’ স্টলে দেখা গেল লিনোকাট-উডকাটে দিব্যত্রয়ীর প্রতিকৃতি, শ্রীরামকৃষ্ণ-আরাত্রিক স্তব থেকে উদ্ধৃত শব্দ নিয়ে ব্যাজ, সারদা দেবীর উপদেশ-ঋদ্ধ ম্যাগনেটিক বুকমার্ক, কাপড়ে বাঁধাই নোটবুক ‘মা’, চিত্রিত পোস্টকার্ড (ছবি) ইত্যাদি।
শতবর্ষের পাঠ
মাত্র দু’জন ছাত্রী দুর্গারাণী ও দেবরাণী; এক জন শিক্ষক, বিভূতিবাবু। ১৯২৫ সালের প্রথম দিনটিতে এঁদের নিয়েই শুরু হয় শুঁড়া কন্যা বিদ্যালয়। উৎসাহ দিয়েছিলেন প্রফুল্লচন্দ্র রায়, স্কুলের প্রথম সভাপতিও তিনি। স্কুলের নাম দেন রাজশেখর বসু— নারীশিক্ষার প্রসারের লক্ষ্যটি তো বটেই, শুঁড়ি গোষ্ঠী অধ্যুষিত স্থানীয় পরিবারগুলির মেয়েদের শিক্ষাসচেতন করার উদ্দেশ্যও নিহিত সেই নামে। স্কুল শুরু হয় ৩৩ নং কে জি বোস সরণিতে সুবার্বন রিডিং ক্লাবের দোতলায়, অনেক পরে ১৯৫৭-তে নিজস্ব স্কুলবাড়ি নির্মাণ। গোড়ায় ছাত্রী পেতে সাধ্যসাধনা করতে হত, শ্রমে উদ্যমে প্রধান শিক্ষিকার ভার সামলেছেন চপলা চট্টোপাধ্যায়, সরলা মিত্র, সাবিত্রী রায়ের মতো নিবেদিতপ্রাণারা। নারকেলডাঙ্গা বেলেঘাটা অঞ্চলের স্কুলটি একশো বছর পূর্ণ করল, উদ্যাপন চলবে বছরব্যাপী।