৮ জুন: উপগ্রহ চিত্রে দেখা যাচ্ছে বায়ুসেনা ঘাঁটিতে দাঁড়ানো একটি যুদ্ধবিমানকে। তার পিছনে শানবাঁধানো জমিতে কালো পোড়া মতো দাগ। অন্য একটি উপগ্রহ চিত্রে ট্রাকের সারির পাশে কালো হয়ে যাওয়া
খানিকটা জমি।
ছবিগুলো ছড়াচ্ছে পাকিস্তান। প্রথম ছবিটি দেখিয়ে পাক সেনা দাবি করছে, ‘অপারেশন সিঁদুর’ চলাকালীন পঞ্জাবের আদমপুরে ভারতীয় বায়ুসেনার ঘাঁটিতে দাঁড়ানো একটি সুখোই ৩০এমকেআই যুদ্ধবিমানকে নিশানা করে হামলা চালিয়েছিল তারা। সাম্প্রতিক পাক হামলা রুখতে ভারতের রক্ষাকবচ হয়ে দাঁড়িয়েছিল এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। দ্বিতীয় ছবিটির কালো জমি দেখিয়ে পাক সেনা দাবি করছে, গুজরাতের ভুজ বায়ুসেনা ঘাঁটিতে ভারতের একটি এস-৪০০-কে তারা ধ্বংস করেছে।
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, দু’টি দাবিই ভুয়ো। উপগ্রহ চিত্রগুলিও পুরনো। এমনকি একটি চিনা সংস্থার ছবিও তারা ব্যবহার করেছে বলে জানা যাচ্ছে।
আদমপুরে সুখোই যুদ্ধবিমান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ছবি বলে পাকিস্তান যে উপগ্রহ ছিত্রটি ছড়াচ্ছে, সেটি বিশ্লেষণ করেছেন ড্যামিয়েন সাইমন নামে এক বিশেষজ্ঞ। তিনি এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘ওই উপগ্রহ চিত্রটি সংঘর্ষের আগেকার, ২০২৫ সালের মার্চ মাসের। তাতে দেখা যাচ্ছে, ওখানে আসলে একটি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানের রক্ষণাবেক্ষণ চলছিল। বিমানের পিছনের মাটিতে যে কালো দাগ দেখা যাচ্ছে, তা বিমানের ইঞ্জিন চালিয়ে পরীক্ষা করার সময়ে হয়ে থাকে। ওই ঝুলকালির দাগ রুটিন ব্যাপার, যুদ্ধজনিত কোনও ক্ষতির চিহ্ন নয়।’ ছবিতে দাগ দিয়ে দেখানো হয়েছে, ইঞ্জিন পরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট ‘টেস্ট স্ট্যান্ড’-এর পিছনেও একই রকম কালো দাগ রয়েছে মাটিতে। সবচেয়ে বড় কথা, বিমানের লেজের অংশ সম্পূর্ণ অক্ষত। ককপিটও ঢাকা
রয়েছে, রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলার সময়ে যা দস্তুর।
ভুজ বায়ুসেনা ঘাঁটিতে এস-৪০০ ধ্বংসের দাবি করে যে কালো হয়ে যাওয়া জমির ছবি পাকিস্তান ছড়াচ্ছে, সেটিও এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে তোলা বলে ড্যামিয়েন জানিয়েছেন। এক্সে পোস্ট করা ছবিতে তিনি দেখিয়েছেন, ওই নির্দিষ্ট জায়গাটির পাশে সারি দিয়ে সেনাবাহিনীর অনেকগুলি ট্রাক দাঁড়িয়ে। কিন্তু কেন? ড্যামিয়েন লিখছেন, ‘এটা ভুজের সামরিক ঘাঁটির গাড়ি মেরামতির জায়গার ছবি। ওই দাগ সম্ভবত মাটিতে পড়া তেলের।’ বিশেষজ্ঞদের দাবি, আদমপুরেও একটি এস-৪০০ ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি করে পাকিস্তান উপগ্রহ চিত্রে কালো দাগ বসিয়েছে, যাতে সেগুলিকে গহ্বরের মতো দেখায়। কিন্তু এখনকার উপগ্রহে চিত্রে আদমপুরে তেমন কোনও গহ্বরের চিহ্নই নেই। ড্যামিয়েন জানাচ্ছেন, আদমপুরে হামলার ‘প্রমাণ’ হিসেবে চিনের একটি উপগ্রহ সংস্থা থেকে পাওয়া পুরনো ছবিও ব্যবহার করেছে পাক সেনার জনসংযোগ বিভাগ। সেই ছবিতে ধরা পড়া মাটির পুরনো দাগকেই সাম্প্রতিক হামলার চিহ্ন বলে বোঝানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেছে তারা।
‘অপারেশন সিঁদুর’-এ পাকিস্তান ও পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গি ঘাঁটিতে ভারত হামলা চালানোর পরেই ভারতের সামরিক পরিকাঠামোকে নিশানা করতে শুরু করে পাকিস্তান। তখনই ভারত পাল্টা হামলা চালায় পাকিস্তানের সামরিক পরিকাঠামোয়। কিন্তু ভারতের আকাশে পাকিস্তানের প্রতিটি হামলাই রুখে দেওয়া গিয়েছে বলে সেনা জানিয়েছিল। বরং ভারতের দেওয়া উপগ্রহ চিত্রে দেখা গিয়েছে, পাকিস্তানের একাধিক বায়ুসেনা ঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত। জাকোবাবাদ এবং ভোলারির মতো বায়ুসেনা ঘাঁটি ত্রিপল দিয়ে ঢেকে চলছে মেরামতি।
পাকিস্তানও কখনও জম্মু, কখনও শ্রীনগর বিমানবন্দরে হামলার দাবি করে চলেছে উপগ্রহ চিত্র দেখিয়ে। সে সবই ভুয়ো বলে রায় দিয়েছেন বিশেষজ্ঞেরা। যেমন গুজরাতের নালিয়া বায়ুসেনা ঘাঁটিতে মেঘের ছায়াকে তারা রানওয়ের ক্ষত বলে চালানোর চেষ্টা করে ধরা পড়ে গিয়েছে। সেই তালিকায় সাম্প্রতিক সংযোজন আদমপুর ও ভুজ।