বিরোধী কর্মসূচি নিয়েছিল। আসলে বাহ্যত এটা কোটা বিরোধী আন্দোলনের কথা বলা হলেও পরবর্তী সময়ে দেখা গেল এটা সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন। গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন রিপোর্ট ছিল, কিন্তু এটি শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা সরকারের পতনে গিয়ে শেষ হবে, তা আমাদের অনেকেরই ভাবনার বাইরে ছিল। দলগত ভাবেও আমরা বুঝতে পারিনি।’’ তিনি দাবি করেছেন, কোটা-বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে ছিল জঙ্গিরা। তাঁর কথায়, ‘‘গত জুলাই-অগস্টে বাংলাদেশে যে জঙ্গিবাদী উত্থান হয়েছিল, তাতে আবেগপ্রবণ ছাত্র সমাজের একটা অংশ যোগ দিয়েছিল। পাকিস্তানের জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-এ তইবার শাখা সংগঠন এই অভ্যুত্থানে জড়িত ছিল বলে এখন আমরা খবর পাচ্ছি।’’ ওই আন্দোলনে নিহতেরা পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছেন কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের।
এখনও ওই আন্দোলনকে দেশের সামগ্রিক জনরোষ বলে মানতে নারাজ ওবায়দুল। তাঁর দাবি, ওই সময় ‘হুজুগে পরিস্থিতি’র সৃষ্টি হয়েছিল। এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ‘সমাজবিরোধী অপশক্তি, লুটেরা শ্রেণি’ যুক্ত হয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘‘এতে বেশির ভাগ অংশগ্রহণ ছিল বাংলাদেশ-বিরোধী, স্বাধীনতা-বিরোধী, উগ্র সাম্প্রদায়িক অপশক্তির। এরা বহু দিন ধরে তলে তলে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সরকারের পতন ঘটানোর জন্য। তারা ছিল ৭১-এর পরাজিত শক্তি। ৭১-এর প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল।’’ জুলাই-অগস্টের আন্দোলন দমনে হাসিনা সরকারের পুলিশ বহু ক্ষেত্রেই বলপ্রয়োগ করেছিল। তাতে বহু মানুষ হতাহত হয়েছিলেন। ওই ঘটনাগুলির জন্য কি শেখ হাসিনার দল ক্ষমা চাইবে, এমন চর্চা বাংলাদেশে হয়েছে। এই প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘যদি কোনও ভুল করে থাকি, তা হলে জনগণের কাছে ভুল স্বীকার করা হবে। এর কোনও বিকল্প নেই। কিন্তু প্রয়োজন হলে সেটা তখনই করব, যখন আমরা দেশের মাটিতে থাকব। যা বলা প্রয়োজন, তা দেশের মাটিতেই দাঁড়িয়ে বলব।”
বাংলাদেশে পালাবদলের পরে আওয়ামী লীগের প্রথম সারির বহু নেতা-সাংসদ দেশত্যাগ করেছেন। নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা রাষ্ট্রীয় রোষের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ। বহু কর্মী-সমর্থক এখন কারারুদ্ধ। অনেকেই বলছেন, তৃণমূলস্তরের কর্মীদের বাঘের মুখে ছেড়ে পালিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। এই অভিযোগ মানতে নারাজ দলের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘‘আমরা সবাই দেশ ছাড়িনি। অধিকাংশ নেতাই দেশে রয়েছেন। বহু নেতা কারাগারে। যাঁরা আত্মগোপন করে দেশে রয়েছেন, তাঁরাই সংগঠনকে ধরে রেখেছেন। আওয়ামী লীগ মনস্ক বিশিষ্টজন-সহ কেউ কথা বলতে পারছেন না। সকলের কণ্ঠরোধ করে রাখা হয়েছে। কর্মীরাই এখন নেতা হয়ে গিয়েছেন।’’ তবে তিনি মেনে নিয়েছেন, কারাগারে থাকা কর্মীদের পাশে দলগত ভাবে দাঁড়ানো বর্তমান পরিস্থিতিতে খুবই কঠিন কাজ। কারণ, তাঁর দাবি, আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা প্রতি দিন আদালতে যেতে পারছেন না। তাঁদের হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘এক দিনে ৮৭ জন আইনজীবীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই চূড়ান্ত প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা যতটা পারছি সাহায্য করছি। কিছু কর্মীকে আইনি সহায়তা দিয়ে জেল থেকে মুক্ত করা গিয়েছে।’’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ইউনূস প্রায়শই বলে থাকেন বাংলাদেশে এখন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি। ওবায়দুল কাদেরের মতে, বাংলাদেশ জুড়ে এখন চূড়ান্ত অরাজকতা। তার জন্য সম্পূর্ণ দায়ী ওই প্রধান উপদেষ্টা। তাঁকে ‘ক্ষমতালোভী’ আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগের এই শীর্ষ নেতা বলেছেন, ‘‘এই উগ্রবাদী উত্থানের মূল নেতা মুহাম্মদ ইউনূস।’’ ইউনূসের বিরুদ্ধে অনৃত ভাষণের অভিযোগ তুলে ওবায়দুল বলেছেন, ‘‘তিনি আন্দোলন নিয়ে দু’বার দু’রকম কথা বলছেন— আমেরিকায় গিয়ে তিনি এটাকে ‘মেটিকুলাসলি অর্গানাইজ়ড’ আন্দোলন বলেছেন। একজন ছাত্রকে ‘মাস্টারমাইন্ড’ বলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। ইউনূসই আবার কিছু দিন পরে ঢাকায় বলেছেন, এই আন্দোলন আচমকা হয়েছে, এর সঙ্গে তাঁর কোনও যোগ ছিল না এবং ছাত্ররা তাঁকে দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করেছিল বলেই তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন।’’
ইউনূস-সহ বাংলাদেশের অনেক রাজনৈতিক দলই শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সরব। হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকার সময়েও বার বার এই অভিযোগ উঠেছে। ওবায়দুল অবশ্য তা পুরোপুরি মেনে নেননি। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের সময় দুর্নীতি হয়নি এ কথা বলব না। কিন্তু আমাদের আমলে দুর্নীতি করলে সাজা হত। আমাদের সময় দুর্নীতি দমন কমিশন স্বাধীন ভাবে কাজ করেছে। আমাদের দলের কয়েক জন মন্ত্রী-সাংসদের বিরুদ্ধেও ওই কমিশন তদন্ত করেছে, তাঁদের সাজাও হয়েছে।’’ বরং অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের প্রধানকে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত' বলে অভিযোগ করে তিনি বলেছেন, ‘‘গ্রামীণ ব্যাঙ্কের দিকে তাকান। ক্ষুদ্র ঋণের নামে কত মানুষ ঘরছাড়া, কত মানুষ জেলে গিয়েছেন, কত মানুষ আত্মহত্যা করেছেন। এই ধরনের মানুষ দেশের নেতৃত্ব দেবেন?" ইউনূসকে ‘মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী’ বলতেও ছাড়েননি আওয়ামী লীগের এই নেতা। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘গত ৫ অগস্টের আগে কোনও শহিদ মিনারে যাননি, কখনও জাতীয় স্মৃতি সৌধে, বুদ্ধিজীবী সৌধে যাননি। তা থেকেই বোঝা যায় লোকটা কতটা মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী।’’
বিরোধীরা বার বার প্রশ্ন তুলেছে আওয়ামী লীগের আমলে গুম ঘর এবং নির্বাচনের নামে প্রহসন নিয়ে। গুম নিয়ে ইউনূসের প্রশাসন তদন্ত কমিশনও করেছে। এ নিয়ে সরাসরি কোনও উত্তর দেননি ওবায়দুল কাদের। উল্টে ফের বলেছেন, ‘‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের ছবি টাকা থেকে বাদ দিয়েছেন। তা হলেই বুঝে দেখুন ইউনূস কতটা প্রতিহিংসাপরায়ণ।’’