নিজ্জর তদন্তের শর্তেই কি জি৭-এ মোদীকে ডাক
অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি, ৮ জুন: কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির কাছ থেকে আসন্ন জি-৭ বৈঠকে আমন্ত্রণমূলক ফোন পেয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘আনন্দিত’ ঠিকই। কিন্তু আমন্ত্রণের পরিবর্তে কার্নি কি খলিস্তানপন্থী নেতা হরদীপ সিংহ নিজ্জরের হত্যা মামলার তদন্তে সহায়তা করার আশ্বাস আদায় করে নিলেন মোদীর কাছ থেকে? এই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে কূটনৈতিক মহলে।
ঘটনা হল, কানাডায় অনুষ্ঠিতব্য জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে কেন মোদীকে ডাকা হয়েছে, তার ব্যাখ্যা দিলেও এই আমন্ত্রণের ঠেলা সামলাতে ঘরোয়া রাজনীতিতে জেরবার হয়ে কিছু ‘অন্য কথাও’ বলেছেন কার্নি। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, তাঁর দেওয়া সেই বিবৃতি থেকেই স্পষ্ট, পূর্বসূরি জাস্টিন ট্রুডোর খলিস্তানি নীতি থেকে খুব একটা সরবে না কানাডার নতুন সরকার। কার্নি বলেছেন, খলিস্তানপন্থী নেতা হরদীপ সিংহ নিজ্জরের হত্যাকে ঘিরে অপরাধীদের উপর যে আইনের শাসন বলবৎ করা নিয়ে কথা চলছিল, তা চালু থাকবে। এই নিয়ে তাঁর সঙ্গে নাকি মোদীর কথাও হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, এই শর্তটিকে সঙ্গে নিয়েই কি ১৫ জুন জি-৭-এর আমন্ত্রণ রক্ষা
করতে কানাডাগামী বিমান উঠতে চলেছেন মোদী?
কার্নির আমন্ত্রণের পরই মোদী শুক্রবার সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘‘কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির ফোন পেয়ে আমি আনন্দিত। সাম্প্রতিক নির্বাচনে জয়ের জন্য তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছি এবং জি৭ বৈঠকে আমায় আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছি তাঁকে।’’ মোদী আরও লেখেন, ‘‘এই মাসের শেষে কানানাস্কিসে জি৭ বৈঠকে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে উন্মুখ।’’ কূটনৈতিক সূত্রের মতে, এর পরই খলিস্তানপন্থী রাজনৈতিক সংগঠন এবং নেতাদের পক্ষ থেকে চাপ এবং সমালোচনা বাড়তে থাকে কার্নির উপরে। সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন করেন— যখন রয়াল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ অভিযোগ তুলেছে যে কানাডায় হিংসাত্মক অপরাধমূলক ঘটনায় ভারত সরকারের চরদের ভূমিকা রয়েছে, তখন মোদীকে আমন্ত্রণ জানানো সঠিক বার্তা দেবে কি না। হরদীপ সিংহ নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টিও এই প্রসঙ্গে তোলা হয়।
এর পর দেরি না করে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ এবং আইনের শাসন বলবৎ করা নিয়ে সংলাপ ভারতের সঙ্গে চলতে থাকবে। কার্নি জানিয়েছেন, নিজ্জর মামলার অভিযুক্তদের নিয়ে যে আইনি প্রক্রিয়া চলছে, তাতে নাক গলাবে না তাঁর সরকার। তাঁর কথায়, ‘‘প্রাথমিক ভাবে সম্মত হয়েছি যে, আইনের শাসন প্রয়োগের বিষয়টি নিয়ে সংলাপ যেমন চলছে তেমনই চলবে। তাতে কিছুটা অগ্রগতি হলে কে দায়ী (নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে) তা স্পষ্ট হবে। আমাদের দেশে আইনের শাসন চলে। আমি সেই শাসনের এতটুকু নড়চড় করব না।’’
প্রসঙ্গত, ট্রুডো সরকারের সময়ই অভিযোগ তোলা হয়েছিল, নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে যাঁদের স্বার্থ জড়িত, সেই তালিকায় কানাডায় নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার সঞ্জয়কুমার বর্মা রয়েছেন। এর পরেই সঞ্জয়-সহ কয়েক জন কূটনীতিককে দেশে ফেরত আনা হয়। পাশাপাশি, বিদেশ মন্ত্রক ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে বহিষ্কার করে কানাডার কয়েক জন কূটনীতিককে। সেই সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী সরকারের তরফে অভিযোগ তোলা হয়, কানাডার আসন্ন পার্লামেন্ট নির্বাচনে কট্টরপন্থী খলিস্তানি গোষ্ঠীগুলির সমর্থন পাওয়ার জন্য ট্রুডো সরকার নতুন করে নিজ্জর বিতর্ক সামনে নিয়ে আসছে। এর পর কানাডার তৎকালীন মন্ত্রী ডেভিড মরিসন সে দেশের সংশ্লিষ্ট পার্লামেন্ট কমিটিকে জানিয়েছিলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নির্দেশে কানাডায় খলিস্তানিদের উপর হামলা এবং ভীতি প্রদর্শনের ঘটনা ঘটছে।
সব মিলিয়ে গত কয়েক বছরে কানাডার সঙ্গে সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল ভারতের। জাস্টিন ট্রুডোর বিদায়ের পর নয়াদিল্লি আশা করেছিল, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করা
সম্ভব হবে।