সুদ কমলেও প্রশ্ন খুচরো ঋণ নিয়ে
নিজস্ব প্রতিবেদন
গত জানুয়ারি-মার্চে দেশে খুচরো ঋণ (বাড়ি, গাড়ি, শিক্ষা ইত্যাদি) বৃদ্ধির হার নেমেছে ৫ শতাংশে। যা আগের বছরের একই সময়ের (১২%) অর্ধেকেরও কম। ঋণ শোধ সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণকারী ট্রান্সইউনিয়ন সিবিলের এই পরিসংখ্যান দেখে বিশেষজ্ঞ মহলের বক্তব্য, ওই তিন মাসে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সুদ কমানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। ফেব্রুয়ারিতে তা কমে ২৫ বেসিস পয়েন্ট। সেই অনুযায়ী ঋণে সুদ কমায় ব্যাঙ্কগুলিও। তবু প্রত্যাশিত সাড়া মেলেনি। এ বার প্রশ্ন উঠছে, চার মাসে সুদের মোট ১০০ বেসিস পয়েন্ট কমে যাওয়া সেই গতি বাড়বে তো? না হলে বাড়ি-গাড়ির বাজার ঘুরে দাঁড়াবে কী ভাবে? কী করে বাড়বে আর্থিক কর্মকাণ্ড? একাংশের ব্যাখ্যা, ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতায় সম্ভাব্য ঋণগ্রহীতারা সতর্ক। খরচের বদলে জোর পাচ্ছে অসময়ের সঞ্চয়।
খুচরো ঋণের বাজার চাঙ্গা হওয়া নিয়ে সংশয়ী অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার। তিনি বলেন, ‘‘ধার নেওয়ার প্রধান শর্ত, হাতে অতিরিক্ত টাকা থাকা। সেটারই অভাব। অতিমারির পর থেকে চাকরির বাজারে ভাটা। সাধারণ মানুষের আয় তেমন বাড়েনি। অথচ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য থেকে চিকিৎসা পরিষেবা, সব কিছুর খরচ চড়েছে। ফলে খরচ করার ক্ষমতা কমেছে বেশির ভাগের। এমন পরিস্থিতিতে খুচরো ঋণের জন্য ভিড় হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে সুদের হার কমায় সংস্থাগুলির মুনাফা বাড়বে। তারা কম সুদে কার্যকরী মূলধনের সংস্থান করতে পারবে।’’ বণিকসভা মার্চেন্ট চেম্বারের ব্যাঙ্কিং ও আর্থিক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান স্মরজিৎ মিত্রের দাবি, ‘‘ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় বিশ্ব বাজার অনিশ্চিত। ভারতের গা বাঁচানো কঠিন। রফতানি বাণিজ্য কমছে। যা দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার কমাতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ঋণ নিয়ে অনেকেই আর্থিক বোঝা বাড়াতে নারাজ। বরং ঋণগ্রহীতারা দ্রুত টাকা শোধে জোর দিতে চাইছেন।’’ এপ্রিল-জুনেও ছবিটা বদলাবে না, ধারণা তাঁর।
ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের পূর্বাঞ্চলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অনির্বাণ দত্ত অবশ্য খুচরো ঋণ বৃদ্ধির ভাটার কারণগুলি মেনে নিলেও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী। বলছেন, ‘‘শীর্ষ ব্যাঙ্কের সুদ কমানো, সরকারের বছরে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়কে করমুক্ত করার মতো পদক্ষেপগুলির ফল জুলাই-অগস্ট থেকে মিলতে পারে।’’
সিবিল জানিয়েছে, ঋণের চাহিদা সবচেয়ে বেশি কমেছে ৩৫ বছর অথবা তার কম বয়সিদের মধ্যে। এর মধ্যে নতুন ঋণগ্রহীতার হার কমেছে ৩ শতাংশ বিন্দু। তবে রিপোর্টে জানানো হয়েছে, খুচরো ঋণ বৃদ্ধির হার কমার দায় ব্যাঙ্কগুলিরও। তারা দামি বাড়ি বা গাড়ির জন্য ঋণ দিতে বেশি আগ্রহী। যেগুলিতে বন্ধকি সম্পত্তির মূল্য বেশি। তাই ১ কোটি টাকা এবং তার বেশি দামি ফ্ল্যাটের ঋণ বেড়েছে ৯%। যেখানে সার্বিক ভাবে গৃহঋণ বেড়েছে ৭%। ১.৫ লক্ষ টাকার বেশি দামের দু’চাকা কেনার ঋণ বেড়েছে ৭% হারে। যেখানে এক বছর আগে ওই বৃদ্ধির হার ছিল ১%।
চিন্তার
জানুয়ারি-মার্চে খুচরো ঋণ বৃদ্ধির হার ৫%। আগের বছর ছিল ১২%।
চাহিদা সবচেয়ে বেশি কমেছে ৩৫ বছর এবং তার কম বয়সিদের মধ্যে।
আবাসন (৭%) ক্ষেত্রে ১ কোটি টাকার বেশি দামি ফ্ল্যাটের (৭%) ঋণ বৃদ্ধির হার বেশি।