তেহরান ও ওয়াশিংটন ডিসি, ২৪ জুন: ডোনাল্ড ট্রাম্পের সংঘর্ষবিরতি প্রস্তাব ইরান এবং ইজ়রায়েল খাতায়কলমে মেনে নিলেও বাস্তবে কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রথম দিনেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে, ইরানের পরমাণু শক্তির ভবিষ্যৎ নিয়েও। কারণ ইরানের পরমাণু চর্চার প্রধান পদাধিকারী মঙ্গলবারই ঘোষণা করে দিয়েছেন, তাঁরা দ্রুত পুনর্গঠনের পথে হাঁটবেন। অথচ ট্রাম্প নিজে দাবি করছেন, ইরানের তিনটি পরমাণুকেন্দ্রে আমেরিকা আঘাত হানার পরে ইরান আর পরমাণু শক্তি নিয়ে এগোতে পারবে না।
ইরান দ্রুত পরমাণু বোমা বানাতে চলেছে বলে দাবি করেই আক্রমণ শুরু করেছিল ইজ়রায়েল। তার পর যোগ দেয় আমেরিকা। সুতরাং এই সংঘর্ষের মূল সূত্রটাই দাঁড়িয়ে আছে পরমাণু প্রশ্নের উপরে। ইজ়রায়েল শুরু থেকেই ইরানের পরমাণুকেন্দ্রে আঘাত করেছে। তারা ১৪ জন ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে। আমেরিকা আঘাত করেছে তিনটি পরমাণুকেন্দ্র— ফোরদো, নাতানজ় এবং ইস্পাহানে। সেখানে ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখার চেষ্টা চালাচ্ছে আইএইএ। সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত উপগ্রহচিত্রের ভিত্তিতে ইস্পাহানের তিনটি পরমাণু চুল্লি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি মনে হচ্ছে। আমেরিকা ওই তিনটি পরমাণু চুল্লি এড়িয়ে গিয়েছে বলেই ইঙ্গিত।
ইউরেনিয়ামের সঞ্চয়ও ইরান অনেকটাই বাঁচাতে পেরেছে বলে মনে করা হচ্ছে। আইএইএ-র প্রধান রাফায়েল গ্রোসি সোমবারই জানান যে, ৪০০ কিলোগ্রাম ইউরেনিয়ামের খোঁজ নেই। আমেরিকার হামলার আগেই ইরান তা নিরাপদ স্থানে সরিয়ে ফেলেছে। আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্সের মতে, ওই পরিমাণ ইউরেনিয়াম দিয়ে ১০টি পরমাণু বোমা বানানো সম্ভব। তবে বর্তমানে আইএসআইএস (ইনস্টিটিউট ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি)-এর শীর্ষ পদাধিকারী, রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রাক্তন কর্তা ডেভিড অলব্রাইটের মতে, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজে ব্যবহৃত ইরানের সেন্ট্রিফিউজ ব্যবস্থাগুলি অনেকটাই ‘ধ্বংস’ হয়ে গিয়েছে। যা রয়ে গিয়েছে, তাতে ইরানের ইউরেনিয়াম সঞ্চয়ের ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম হয়ে থাকতে পারে। ৯০ শতাংশ থাকলে বোমা বানানো সম্ভব। অলব্রাইটের মতে, ইরান দু’এক বছরের আগে বোমা বানানোর জায়গায় পৌঁছতে পারবে না। সবই আমেরিকার
আক্রমণের ফল।
এমতাবস্থায় ইরানের পরমাণু চর্চার শীর্ষ কর্তা মহম্মদ এসলামি মঙ্গলবার বলেন, পরমাণু ক্ষেত্রে হামলা হবে ধরে নিয়েই তাঁরা প্রস্তুত ছিলেন। ক্ষয়ক্ষতি সামলে ওঠার রূপরেখা তৈরি। ইরানের শীর্ষ নেতৃত্বের সূত্রেও দাবি করা হয়েছে যে, ‘খেলা শেষ হয়নি’। শান্তিপূর্ণ পরমাণু শক্তি সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে ইরানের পূর্ণ অধিকার আছে বলে নিরস্ত্রীকরণ সংক্রান্ত রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি বৈঠকে আজ ফের জানিয়েছে ইরান। অন্য দিকে, ভারতে ইজ়রায়েলের রাষ্ট্রদূত রিউভেন আজ়ারের দাবি, ইরানকে কেন্দ্র করে এই মুহূর্তে যে পরমাণু-ভীতি তৈরি হয়েছিল, সেটা থামানো গিয়েছে। তবে ‘সব কাজ শেষ হয়নি।’ অর্থাৎ কেউই বলছেন না যে, ইরানের পরমাণু শক্তি একেবারে নিঃশেষ। সেই দাবিটা করছেন ট্রাম্প একাই।
ট্রাম্পের কাছে এই দাবিটা রাজনৈতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ইরানের পরমাণু ক্ষেত্রকে পাখির চোখ করে আক্রমণ চালিয়েছেন তিনি। ইরানও প্রতীকী জবাব দিয়েছে কাতার এবং ইরাকে আমেরিকান সেনাঘাঁটিতে হামলা করে। সোমবার রাতের এই ঘটনার পরেই সংঘর্ষবিরতি ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। কোন ‘বিজয়’ তিনি হাসিল করলেন, তার প্রমাণ দাখিল করা এখন তাঁর অগ্রাধিকার। বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এর আগে ইরানে পালাবদল ঘটানোর কথা বলছিলেন, প্রয়োজনে আয়াতোল্লা খামেনেইকে হত্যা করার কথাও বলছিলেন। পরে ট্রাম্পের মুখেও ইরানে ক্ষমতা বদলের কথা শোনা যায়। সেটা ঘটেনি। অতএব বাকি থাকছে ইরানের পরমাণু শক্তি ধ্বংস করার দাবি। ট্রাম্পের দাবি, ইরানের তিনটি পরমাণু কেন্দ্র ‘ধ্বস্ত’। অথচ ইরান বলছে যে, দ্রুত পুনর্গঠনের রাস্তায় এগোবে তারা। নেটো সম্মেলনে যাওয়ার আগে ট্রাম্পকে তাই দাবি করতেই হয়েছে যে, ইরান কখনওই তা পারবে না।
সংবাদ সংস্থা