বেলাগাম আক্রমণ
সোমা মুখোপাধ্যায়ের ‘আজ তবে কোন উত্তেজনা?’ (২১-৫) শীর্ষক প্রবন্ধটি বর্তমানের সমাজমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সাধারণ মানুষদেরও সামাজিক অবস্থান নষ্ট করে দেওয়ার জন্য এক শ্রেণির মানুষের নিয়ন্ত্রণহীন মতামতের কথা। বিশিষ্ট শিল্পী বা ব্যক্তিদের জীবন সম্পর্কিত মুখরোচক ঘটনার প্যাকেজ তৈরি করে বাজারে ছাড়লেই হল। আমরা এই জিনিস দেখে অভ্যস্ত ও ক্লান্ত। এমন অমূলক বা ভুয়ো খবর ছড়ালে কেউ তার প্রতিকারে উদ্যোগী হয় না। সাজিয়ে গুছিয়ে জলজ্যান্ত মানুষের মৃত্যুর খবর বাজারে ছড়িয়ে দিচ্ছে। কারণটা ওই, সকলের মতামত দেওয়ার স্বাধীনতা বা অধিকার আছে।
কিন্তু যখন কাউকে নিয়ে এ ধরনের ভিত্তিহীন বা অমূলক খবর ছড়ানো হয়, তখন সেই মানুষটির সামাজিক বা পারিবারিক অবস্থান চূড়ান্ত হেনস্থার মধ্যে পড়ে। তার দায় কার উপর বর্তায়? প্রবন্ধকারের কথার সূত্রে বলা যায়, হয়তো সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীদের মধ্যে বেশ কিছু মানুষ তাদের শিষ্টাচার, বিচারবুদ্ধি জলাঞ্জলি দিয়ে নিজেদের আলোয় তুলে আনতে অপরদের উপর বেলাগাম আক্রমণের নেশায় মাতে। অবশ্যই সে আলোর আভাসে তারাও উদ্ভাসিত হয়, যদি সেখানে চেতনা ও রুচিবোধের জাগরণ ঘটিয়ে কোনও সৃষ্টিশীলতার ছোঁয়া থাকে।
সমাজমাধ্যমে মানুষ ইচ্ছামতো লিখতে বা মতামত প্রকাশ করতে পারেন। কিন্তু সামাজিক বা পারিবারিক অবস্থানের কথা মাথায় রেখে সে বক্তব্যে শিষ্টাচার, রুচিশীলতা বজায় রাখা প্রয়োজন, কারণ সেখানে অসংখ্য মানুষ তা দেখছেন, শুনছেন। সে নিয়ন্ত্রণ যদি না থাকে, তবে এই ট্রোলিং-এর পাশাপাশি ডিপফেক-এর মতো টেকনোলজির অবস্থানে আগামী দিনে কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা— তার গোলকধাঁধায় মানুষের জীবন যে জেরবার হতে চলেছে, তা বোধ হয় বলার অপেক্ষা রাখে না।
স্বরাজ সাহা
কলকাতা-১৫০