ধৃত ৩
গায়ে একাধিক নখের আঁচড় রয়েছে। কয়েকটি আঘাতের চিহ্নও মিলেছে। নির্যাতিতার বয়ান এবং তাঁর শরীরের বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন অনুযায়ী, গণধর্ষণের ইঙ্গিত দিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। সরকারি আইনজীবী সৌরীন ঘোষালও বলেন, ‘‘নির্যাতিতার অভিযোগের ভিত্তিতে মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হয়েছিল। তাঁর অভিযোগের বয়ানের সঙ্গে মেডিক্যাল পরীক্ষার রিপোর্ট মিলে গিয়েছে। প্রাথমিকভাবে নির্যাতিতা গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে আরও গভীরে তদন্তের প্রয়োজনে অভিযুক্তদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করার প্রয়োজন। কোন পরিস্থিতিতে নির্যাতিতা গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন তা জানার চেষ্টা করা হবে।’’
আজ, শনিবার নির্যাতিতার ফরেন্সিক পরীক্ষা করানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এ দিন নির্যাতিতাকে আলিপুর আদালতে নিয়ে আসা হয়েছিল। অভিযুক্তদের আদালতে পেশ করার আগে তদন্তকারী অফিসার বিচারকের ঘরের পিছনের আর একটি ঘরে নির্যাতিতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে বারে বারে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন তিনি। অভিযুক্তদের আদালতে পেশ করার আগেও নির্যাতিতার বয়ান নথিবদ্ধ করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। পরবর্তী পরিস্থিতিতে পুলিশের তরফে আদালতে নির্যাতিতা ও অভিযুক্তদের ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের আবেদন করা হবে বলে সূত্রের খবর।
জানা গিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে কসবা থানায় গিয়ে নির্যাতিতা তরুণীর (যিনি টিএমসিপি-র সদস্য) বাবা গণধর্ষণের এই অভিযোগ দায়ের করেন। তাতে লেখা হয়, বুধবার দুপুর ১২টা ০৫ মিনিট নাগাদ কলেজে যান ওই তরুণী। তিনি একতলার ইউনিয়ন রুমে ছিলেন। বিকেল ৪টে নাগাদ বাড়ি যাওয়ার জন্য বেরোতে গেলে অভিযুক্ত মনোজিৎ তাঁকে ফের ইউনিয়ন রুমে ডেকে নেয়। সেখানে কথাবার্তা চলার মধ্যেই প্রমিত তাঁকে বাইরে ডেকে মনোজিৎ ও তাঁর ইউনিটের প্রতি নির্যাতিতার আনুগত্য আছে কি না, জানতে চায়। তরুণী ‘হ্যাঁ’ বললে মনোজিৎ তাঁকে ইউনিয়ন ঘরের বাইরে ডেকে জানায়, সে তাঁর প্রেমে পড়েছে এবং তাঁকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু নির্যাতিতা নিজের অন্য সম্পর্কের কথা জানিয়ে এ ব্যাপারে এগোতে চান না বলে জানান।
অভিযোগ, সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিট নাগাদ তরুণী বেরিয়ে যেতে চাইলে তাঁকে মনোজিৎ আরও কিছুক্ষণ বসে যেতে বলে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ কলেজ ইউনিয়নের বর্তমান জেনারেল সেক্রেটারি বেরিয়ে গেলে জাইব এবং প্রমিতকে বাইরে থেকে ইউনিয়ন রুমের দরজা বন্ধ করে দিতে বলে মনোজিৎ। নির্যাতিতা তরুণীকে জোর করে ইউনিয়ন রুমের শৌচাগারের কাছে নিয়ে গিয়ে যৌন হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ। কোনও ভাবে ছাড়িয়ে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন তরুণী। এই সময়ে তাঁর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। অভিযুক্তের পায়ে ধরে, তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য বললেও তা শোনা হয়নি বলে অভিযোগ। এর পর জাইব একটি ইনহেলার কিনে এনে দেয় তাঁকে। তরুণী বেরিয়ে যেতে গেলে মনোজিতের নির্দেশে জাইব ও প্রমিত কলেজের মূল ফটক বন্ধ করে দেয় ও জোর করে তরুণীকে নিরাপত্তারক্ষীর ঘরে তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ। এর পর ঘরে ঢুকে আসে তিন জনই। সেখানে বাঁচার চেষ্টা করা তরুণীকে মারধর করে তাঁকে মনোজিৎ ধর্ষণ করে বলে তরুণীর অভিযোগ।
পুলিশের দাবি, অভিযোগ পাওয়ার পরেই ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে গিয়ে নির্যাতিতা তরুণীর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানো হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ কসবা এলাকা থেকেই পুলিশ গ্রেফতার করে মনোজিৎ এবং জাইবকে। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ হাওড়ার চ্যাটার্জিহাটের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় প্রমিতকে। তিন জনেরই মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। হেফাজতে নেওয়া হয়েছে তরুণীর ফোনও। যদিও এই ঘটনায় একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। কলেজের সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও তরুণী সেখানে রয়ে গেলেন কী করে? এমন ঘটনা যখন ঘটল, নিরাপত্তারক্ষী তখন কোথায় গেলেন? কলেজ কর্তৃপক্ষও কি কিছুই টের পাননি? তাঁদের তরফেই বা কেন অভিযোগ জানানো হল না?
এ দিন কলেজের সামনে হাজির সেখানকার উপাধ্যক্ষ নয়না চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মনোজিৎ পরিচালন সমিতির নির্দেশে অস্থায়ী কর্মীর কাজ করছেন। পরিচালন সমিতির সভাপতি অশোক দেবকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম, তিনি সোমবার বৈঠক করবেন বলেছেন।’’ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘‘যা ঘটেছে তা ভয়ঙ্কর। ডিরেক্টর অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন (ডিপিআই) অবিলম্বে কলেজের উপাধ্যক্ষকে পরিচালন সমিতির বৈঠক ডেকে গাফিলতি খতিয়ে দেখে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে বলেছেন। পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছে। সুবিচার আনতে সব কিছু করা হবে।’’
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য শান্তা দত্ত দে বলেন, ‘‘আমাকেও হেনস্থা করেছিল
প্রাক্তনী বহিরাগতরা। মৌরসিপাট্টা বন্ধ করতে সব ইউনিয়ন রুমে তালা লাগিয়েছি। কর্তৃপক্ষ কড়া না হলে এমনই ঘটবে।’’