রাহুলের নিশানায় সঙ্ঘ
নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি, ২৭ জুন: সংবিধানের প্রস্তাবনায় কি ‘সমাজতান্ত্রিক’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দ দু’টি থাকা উচিত? এ নিয়ে ভাবনাচিন্তা হওয়া উচিত বলে সওয়াল করে আরএসএসের সরকার্যবাহ ওরফে সাধারণ সম্পাদক দত্তাত্রেয় হোসাবলে নতুন করে বিরোধীদের হাতে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে দিলেন। আরএসএসের শীর্ষ নেতার বক্তব্যকে হাতিয়ার করে রাহুল গান্ধী অভিযোগ তুললেন, ‘‘আরএসএসের মুখোশ ফের খুলে গিয়েছে। সংবিধান এদের গলার কাঁটা, কারণ সংবিধান সাম্য, ধর্মনিরপেক্ষতা ও ন্যায়ের কথা বলে। আরএসএস-বিজেপির চাই মনুস্মৃতি, সংবিধান নয়।’’
গত লোকসভা নির্বাচনে ইন্ডিয়া জোটের প্রধান অস্ত্র ছিল, বিজেপি চারশোর বেশি আসনে জিতে সংবিধান বদলে দিতে চায় বলে অভিযোগ। এই প্রচারের ধাক্কাতেই বিজেপির লোকসভা আসনের সংখ্যা তিনশোর ঘর থেকে চারশো পেরনোর বদলে দু’শো চল্লিশে নেমে এসেছিল। বৃহস্পতিবার জরুরি অবস্থার পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে আরএসএসের সাধারণ সম্পাদক যুক্তি দেন, জরুরি অবস্থার সময় সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘সমাজতান্ত্রিক’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’
ঢোকানো হয়েছিল। বি আর অম্বেডকরের তৈরি সংবিধানে তা ছিল না। এই দু’টি শব্দ থাকা উচিত কি না, তা নিয়ে বিতর্ক হওয়া উচিত বলেও তিনি যুক্তি দেন।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, আরএসএসের শীর্ষ নেতার এই বক্তব্য নিয়ে বিজেপি আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও বিবৃতি দিতে রাজি হয়নি। তবে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল বলেছেন, অম্বেডকর-সহ সংবিধানের প্রণেতারা যথেষ্ট বিদ্বান ছিলেন। তাঁরা এই দু’টি শব্দ সংবিধানের প্রস্তাবনায় রাখার প্রয়োজন বোধ করেননি। ইন্দিরা গান্ধীর সরকার জরুরি অবস্থার সময় সংবিধান সংশোধন করে এই দু’টি শব্দ ঢুকিয়েছিল। কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান আবার বলেছেন, ‘‘ধর্মনিরপেক্ষতা আমাদের সংস্কৃতির শিকড় নয়। তাই এ নিয়ে বিতর্ক হওয়া উচিত। জরুরি অবস্থার সময় জুড়ে দেওয়া ধর্মনিরপেক্ষ শব্দ হটানো হোক।’’ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ কিছু দিন আগে এই দু’টি শব্দকে সংবিধানের উপরে ‘বড় ধাক্কা’ বলে সওয়াল করেছিলেন।
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ মনে করিয়ে দিয়েছেন, গত বছর নভেম্বরেই সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার বেঞ্চ এই দুই শব্দ নিয়ে আপত্তি তুলে দায়ের করা এক মামলায় রায় দিয়েছে। সেই রায়ে বলা হয়েছে, এই
দু’টি শব্দ সংবিধানের অখণ্ড অংশ হয়ে গিয়েছে। এই দু’টি শব্দ নিয়ে কেন চার দশক পরে আপত্তি তোলা হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক এম এ বেবীর অভিযোগ, ‘‘আরএসএস সমাজতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শব্দ বাদ দেওয়ার দাবি তুলে দেশের মূল মূল্যবোধের উপরে আঘাত করছে। আরএসএস বরাবরই সংবিধানের থেকে মনুস্মৃতিকে বেশি
গুরুত্ব দিয়েছে।’’